অপেক্ষা: ডাক্তার নেই। রোগীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে। নিজস্ব চিত্র
নানা পরিকাঠামো রয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে আশ্বাসও বহু বার শুনিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা। কিন্তু সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই চিকিৎসক না থাকার মাসুল গুণতে হয়েছে সাপে কাটা এক শিশুকে। এই ঘটনার পরে বাসিন্দাদের একাংশের ফের অভিযোগ, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রায়শই দেখা মেলে না চিকিৎসকের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল। গুসকরা শহর তো বটেই, বর্ধমান-সিউড়ি জাতীয় সড়কের (২বি) উপরে থাকা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির উপরে নির্ভর করেন মঙ্গলকোট, ভাতার, আউশগ্রামের প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষ।
অথচ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ন্যূনতম পরিষেবাও মেলে না বলে অভিযোগ। একাধিক বাসিন্দা জানান, রোগীদের নিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। স্বাস্থ্য দফতরের যদিও দাবি, ১০ বিঘা জমির উপরে তৈরি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিকাঠামোর ‘অভাব’ নেই। রয়েছে ১০টি শয্যাও। সেখানে রোগীও ভর্তি হন। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাত-বিরেতে রোগী ভর্তি নেওয়া হয় না এখানে। এমনকী প্রসূতিদেরও বর্ধমানে পাঠানো হয়। অনেক সময় ‘যন্ত্র-যন্ত্রী’র অভাবে পরিষেবাও মেলে না।
অথচ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে বহু বছর ধরে কখনও স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, কখনও বা গ্রামীণ হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হবে বলে প্রশাসনের নানা মহল থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। যদিও গুসকরা নাগরিক কমিটির সম্পাদক তপন মাজির ক্ষোভ, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির পরিকাঠামো সাতের দশকের। রোগীর চাপ বাড়লেও এর পরিকাঠামো বাড়েনি।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক স্বাস্থকেন্দ্রে দু’জন চিকিৎসক থাকার কথা। এখানে দশটি শয্যা থাকায় ও রোগীর চাপ থাকায় অতিরিক্ত এক জন চিকিৎসককে পাঠানো হয়েছে। নার্সদের কথায়, “সপ্তাহভর তিন জনেই পালা করে চিকিৎসা করেন। ফলে, কোনও দিনই দু’জন চিকিৎসক এক সঙ্গে থাকেন না। রাতে চিকিৎসক না থাকলে গোলমাল বাধে।” স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ জানান, প্রয়োজনের তুলনায় নার্সও কম রয়েছেন। এমনকী পাঁচ জনের বেশি প্রসূতি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এলে তাঁদের লেবার রুমের মেঝেতে অপেক্ষা করতে হয়।
শিশুমৃত্যুর ঘটনার পরে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, গত দু’দিন এক জন চিকিৎসকও ছিলেন না স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তাঁদের ক্ষোভ, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে একশো শয্যার গ্রামীণ হাসপাতালে রূপান্তরিত করার প্রস্তাব বিশ বাঁও জলে। এখন আবার স্টেট জেনারেল হাসপাতালের গল্প শোনানো হচ্ছে। ডাক্তার থাকলে শিশুটাকে বেঘোরে মরতে হত না।”
পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়ের অবশ্য দাবি, “চিকিৎসক-বিহীন রাখা যাবে না, এই দাবিতে চিঠি দিয়েছি। কী ভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে উন্নীত করা যায়, সে বিষয়েও চিন্তাভাবনা করা দরকার।’’ সমস্যার কথা মেনে নিয়ে আউশগ্রাম ১-র বিএমওএইচ ধীমান মণ্ডল বলেন, “পরিস্থিতির সামাল দিতে আমরাও চেষ্টা করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy