Advertisement
E-Paper

বেতন বকেয়া, মেলে না জল-বিদ্যুৎ

বেতন বাকি প্রায় ১৫ মাসের। কবে তা মিলবে, কোনও নিশ্চয়তা নেই। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেব্‌লস কারখানার শ্রমিক-কর্মীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৬ ০২:১৪
কিছু আবাসনের এমনই হাল। ছবি: শৈলেন সরকার।

কিছু আবাসনের এমনই হাল। ছবি: শৈলেন সরকার।

বেতন বাকি প্রায় ১৫ মাসের। কবে তা মিলবে, কোনও নিশ্চয়তা নেই। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেব্‌লস কারখানার শ্রমিক-কর্মীরা। যদিও বকেয়া বেতন মেটানোর আর্জি জানিয়ে ভারী শিল্প মন্ত্রকের কাছে আবেদন করেছেন বলে জানান আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর আশা, দ্রুত সমস্যা মিটবে।

না আঁচালে আর বিশ্বাস করছেন না সংস্থার শ্রমিক-কর্মীরা। কারণ, এই কয়েক মাস তাঁরা একাধিক বার কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু প্রতি বারই নিরাশ হতে হয়েছে। কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও জবাব মেলেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমদেরও কিছু জানা নেই।’’ শ্রমিক-কর্মীদের অভিযোগ, শুধু বেতন বাকি নয়। কারখানার আবাসন এলাকায় দিনের পর দিন বিদ্যুৎ থাকছে না। পানীয় জল সরবরাহ হচ্ছে না। জঞ্জাল সাফাই হয় না। ভেঙে পড়েছে নিকাশি ব্যবস্থা।

সম্প্রতি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এক সময়ের ঝাঁ-চকচকে শহর এখন কার্যত খণ্ডহর। পুরনো দিনের কথা মনে করে বাসিন্দারা এখন শুধু হাপিত্যেশ করেন। এক কর্মী মানিকচন্দ্র দাসের কথায়, ‘‘রাতের অন্ধকারে আবাসন কলোনিতে থাকতে ভয় করে। এখন আমরা জঞ্জালের শহরে না মরে বেঁচে রয়েছি।’’ বেতন বাকি থাকায় অর্থ সঙ্কটেও ভুগছেন তাঁরা। কত দিন এ ভাবে চলবে, ভেবে পাচ্ছেন না। আর এক কর্মী অমিতাভ মিত্র বলেন, ‘‘জমানো টাকায় সংসার খরচ চলছে। অসুখবিসুখের খরচ জোটাতে পারছি না। বেঁচে থাকার কোনও উপায় দেখছি না।’’

কার্যত হাল ছেড়ে দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলিও। কারখানার পুনরুজ্জীবনের আন্দোলন থেকেও কার্যত সরে এসেছেন নেতারা। বেতন মেটানোর আবেদন জানিয়ে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে আইএনটিইউসি। সংগঠনের কারখানার সম্পাদক উমেশ ঝা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন বেতন না দেওয়া আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করি। তাই কমিশনে গিয়েছি।’’ স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হলেও শ্রমিক-কর্মীদের পাওনা মেটানো হবে কি না, সে নিয়ে আশঙ্কায় শ্রমিক নেতারা। সিটুর সাধারণ সম্পাদক মধু ঘোষের কথায়, ‘‘পাওয়া না মিটিয়েই কারখানার ঝাঁপ ফেলে দেওয়া হবে কি না, সেই ভয়ে আছি।’’ বকেয়া বেতন দেওয়ার দাবি জানিয়ে মাসখানেক আগে ভারী শিল্প মন্ত্রকে তদ্বির করেছেন বলে জানান সিটু নেতা তথা আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। কিন্তু কোনও কাজ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ শ্রমিক-কর্মীরা। দিন কয়েক আগেও বকেয়া চেয়ে তাঁরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘‘আমি ভারী শিল্প মন্ত্রীর কাছে বকেয়া বেতন মেটানোর আর্জি জানিয়েছি। হিসেব মতো প্রায় ১৭৯ কোটি টাকা লাগবে। আশা করি সমস্যা মিটে যাবে।’’ কেব্‌লস কারখানার পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি জানিয়ে বাবুল জানান, কারখানা অধিগ্রহণের বিষয়ে অনেকটা এগিয়েছিল অর্ডিন্যান্স ফ্যাকট্রি বোর্ড (ওএফবি)। কিন্তু কারখানার দেনা রয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। এই টাকা ভারী শিল্প মন্ত্রক মেটাবে না ওএফবি, এই টানাপড়েনেই থমকে গিয়েছে উদ্যোগ।

১৯৫২ সালে তৈরি টেলিফোনের জেলি ফিলড কেবলের এই কারখানা রুগ্‌ণ হতে শুরু করে ১৯৯৫ থেকে। কারখানাটি ১৯৯৭ সালে বিআইএফআরে চলে যায়। ২০০৩-এ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হওয়ায় এর ভাগ্য নির্ধারনের দায়িত্ব পড়ে বিআরপিএসই-র হাতে। মাঝে এই কারখানা অধিগ্রহণের ইচ্ছা জানায় অর্ডিন্যান্স ফ্যাকট্রি বোর্ড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছু হয়নি। এখন প্রায় ১২০০ কর্মী পড়েছেন অথৈ জলে।

electricity Salary
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy