রাস্তাতেই ফোনে আলাপ।
পথ-নিরাপত্তার বেহাল দশা ঘোচাতে গত জুলাইয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে চালু হয় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি। পরে থেকে ঠিক হয়, মাথায় হেলমেট না থাকলে পেট্রোল পাম্পে মিলবে না তেল। বর্ধমান জেলায় এই নির্দেশিকা ২০১৫-র গোড়ায় জারি হয়। কিন্তু এতকিছুর পরেও শুক্রবার দুর্গাপুর ঘুরে দেখা গেল, হেলমেট ছাড়ায় দিব্যি ছুটছে মোটরবাইক।
বিধাননগরের হাডকো মোড়ের কাছেই রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসি, ম্যানেজমেন্টের বেশ কয়েকটি কলেজ। বেলা ১০টার পরেই দেখা গেল, বিভিন্ন কলেজ পড়ুয়াদের মোটরবাইকের ‘ধুম’। প্রায় কারও মাথাতেই হেলমেট নেই। এর সঙ্গে রয়েছে একে অপরকে টেক্কা দিতে গতির লড়াই। বাসিন্দাদের একাংশ জানান, এর ফলে অনেক সময়েই ছোট-বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকছে।
জাতীয় সড়কের ডিভিসি মোড়— প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলির এটি মধ্যে অন্যতম। মোটরবাইকে সওয়ার দম্পতির মাথায় হেলমেট থাকলেও সামেন বসে থাকা বাচ্চাটির মাথা ফাঁকা। হেলমেট নেই কেন? খানিক চুপ করে থেকে বাবা-মায়ের আমতা আমতা করে জবাব, ‘না, মানে, কিনব-কিনব করে আর কেনার সময় হয়ে ওঠেনি।’’
ঝুঁকির সওয়ারি ভগৎ সিংহ মোড়ে।
ভগৎ সিংহ মোড়। কবিগুরু থেকে ডিএসপি টাউনশিপে ঢোকার মুখে দেখা গেল, হেলমেট না পরাটাই যেন নিয়ম! তবে কোনও কোনও মোটরবাইকের পাশে বা হাতলে হেলমেট ঝুলছে দিব্যি। এই ‘ঝুলিয়ে রাখা’রও কারণ দেখিয়েছেন কেউ কেউ। এক মোটরবাইক আরোহী বলেন, ‘‘পেট্রোল পাম্পে অনেক সময়েই তেল দিতে চায় না। তাই সঙ্গে রাখা আর কী!’’
তবে হেলমেট না থাকলে সত্যিই কি তেল মিলছে না?
সিটি সেন্টারের একটি পেট্রোল পাম্পে ঢোকার পরে দেখা যায় দু’-এক জন মোটরবাইক আরোহীর মাথায় হেলমেট নেই। তেল দিয়ে ওই সব আরোহীদের উদ্দেশ্যে পেট্রোল পাম্প কর্মীদের অবশ্য বলতে শোনা গেল, ‘‘পরের বার পরে আসবেন কিন্তু।’’ শহরের বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে অবশ্য এখনও ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ লেখা বোর্ড বেশ উজ্জ্বল! তবে অগস্ট মাসে কড়াকড়ির সময় মাথায় হেলমেট না থাকলে কিছুতেই তেল মিলছিল না বলে জানান বাসিন্দারা। যেমন, ডিএসপি টাউনশিপের বাসিন্দা সুনন্দ ঘোষ জানান, অগস্টে কবিগুরু এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পে মাথায় হেলমেট না থাকায় তেল পাননি। শুক্রবার অবশ্য সুনন্দবাবু বলেন, ‘‘প্রথম দিকের সেই কড়াকড়ি এখন অনেকটাই শিথিল।’’
বিধাননগরের হাডকো মোড়ে পড়ুয়াদের বেপরোয়া যাতায়াত।
যদিও পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘মোটরযান আইন ১৯৮৮’-এর ১২৯ ধারা অনুসারে, মোটরবাইক চালানোর সময় একমাত্র শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়া সকলের ক্ষেত্রে হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। হেলমেট মাথায় না থাকলে পরিবহণ দফতর ১৭৭ ধারায় ‘স্পট ফাইন’ও করতে পারে। হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীকে পাকড়াও করে পুলিশ আদালতেও পাঠাতে পারে। তবে ‘অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার কর্মকর্তা সমীর বসু বলেন, ‘‘বিধি বা আইনের থেকেও বেশি দরকার সচেতনতা গড়া।’’
হেলমেট ছাড়া তেল দেওয়া হচ্ছে কেন? ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-র বর্ধমান জোনের সম্পাদক বিশ্বদীপ রায়চৌধুরী অবশ্য বলেন, ‘‘নিয়ম সকলের মানা দরকার। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় যখন এক পাম্পে নিয়ম মানা হচ্ছে, অথচ অন্য পাম্পে হচ্ছে না। তখন ব্যবসায় সমস্যা হয়।’’ তবে সেই সঙ্গে তাঁর এও দাবি, ‘‘পথ-নিরাপত্তার স্বার্থেই হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালানো বন্ধ হওয়া দরকার।’’
পথ-নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দাদের একাংশ। যদিও পুলিশ আধিকারিকেরা জানান, মাঝেসাঝেই পথ-সচেতনতা শিবির আয়োজন করা হয়ে। মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরা বলেন, ‘‘প্রতিদিন নজরদারি চলে। কিন্তু কর্মী ঘাটতির জন্য সব জায়গায় নজরদারি সম্ভব হয় না। তবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
শুক্রবার ছবিগুলি তুলেছেন বিশ্বনাথ মশান ও বিকাশ মশান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy