Advertisement
০১ মে ২০২৪

‘আমাদের লোক আছে’, ট্রেনে নালিশ হুজ্জুতির

রেল সূত্রে জানা যায়, আসানসোল, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল থেকে সকালের দিকে সাধারণত অগ্নিবীণা ও কোলফিল্ড এক্সপ্রেসে চড়ে কলকাতা অভিমুখে যান নিত্যযাত্রীরা। আগে নিত্যযাত্রীদের সুবিধার জন্য দু’টি ট্রেনেই একাধিক কামরা নির্দিষ্ট করা থাকত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০৯:১০
Share: Save:

ফাঁকা সিট। কিন্তু তাতে রুমাল রাখা। সেখানে এক যাত্রী বসতে গেলে কাছাকাছি থাকা কয়েক জন কড়া গলায় বললেন, ‘পরের স্টেশনে আমাদের লোক আছে।’— অভিযোগ, নিত্যযাত্রীদের এমনই নানা হুজ্জুতি দেখা যাচ্ছে আসানসোল-হাওড়া রুটের ট্রেনে। জোর করে আসন থেকে তুলে দেওয়া, গালিগালাজ করা, এমনকী গায়ে হাত তোলার মতো নানা অভিযোগও উঠেছে।

রেল সূত্রে জানা যায়, আসানসোল, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল থেকে সকালের দিকে সাধারণত অগ্নিবীণা ও কোলফিল্ড এক্সপ্রেসে চড়ে কলকাতা অভিমুখে যান নিত্যযাত্রীরা। আগে নিত্যযাত্রীদের সুবিধার জন্য দু’টি ট্রেনেই একাধিক কামরা নির্দিষ্ট করা থাকত। এমনকী কোন স্টেশনের নিত্যযাত্রীরা কোন কামরায় উঠবেন তা-ও উল্লেখ থাকত। কিন্তু এখন সেই ব্যবস্থা আর নেই। ফলে সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে একই কামরায় যাতায়াত করেন নিত্যযাত্রীরাও।

কিন্তু তাতে সমস্যা মেটেনি। সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, নিত্যযাত্রীদের একাংশ কামরায় উঠে জোর করে আসন দখল করেন। যেমন, চলতি বছর মে মাসে পানাগড় স্টেশন থেকে অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে উঠে ফাঁকা আসন পেয়ে বসে গিয়েছিলেন কাঁকসার বিজয় সাউ। নিত্যযাত্রীরা তাঁকে আসন ছেড়ে দিতে বললে তিনি রাজি না হয়ে প্রতিবাদ করেন। এর পরে তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

সপ্তাহে এক দিন সংস্থার কাজে কলকাতা যান দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের বাসিন্দা বিপ্লব বসু। তাঁর কথায়, ‘‘আমার তো রীতিমতো ভয় লাগে। বাসে ভাড়া বেশি। তা না হলে বাসেই যেতাম।’’ বিধাননগরের বাসিন্দা ববি সেন বলেন, ‘‘শিয়ালদহ লাইনের তুলনায় আমাদের এ দিকে নিত্যযাত্রীর সংখ্যা অনেক কম। তাই তাস দিয়ে জায়গা রাখার ঘটনা নজরে আসে না। তবে বসার ক্ষেত্রে নিত্যযাত্রীরা অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করেন।’’ নিত্যযাত্রীদের লাগাতার কটাক্ষের মুখে আসন ছাড়তে হওয়ায় বাসে কলকাতা যাতায়াত করতে হয় বলে জানান সিটি সেন্টারের রতন বন্দ্যোপাধ্যায়।

যদিও হুজ্জুতির অভিযোগ মানেননি নিত্যযাত্রীরা। ‘দুর্গাপুর রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রায় ২৫ বছর ধরে নিত্যযাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট কামরা বরাদ্দ করা ছিল। হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে তুলে দেওয়া হল। এর ফলে নিত্যযাত্রীদের সমস্যা বেড়েছে। এর জন্য রেল কর্তৃপক্ষ দায়ী। সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধ নেই।’’ নিত্যযাত্রীদের জন্য ফের কামরা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ওই সংগঠন।

রেল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অভিযান চালানো হয়। টুইটার, হেল্পলাইনের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারেন যাত্রীরা। শুধু কামরার নির্দিষ্ট অবস্থান জানাতে হবে। তা হলেই রেলপুলিশ পৌঁছে যাবে। রেলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জোর করে আসন থেকে তুলে দেওয়া বা যাত্রী দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে পরবর্তী স্টেশনে সহকর্মী উঠবেন বলে আসন আটকে রাখা বেআইনি। রেলের আইনে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Train Local train Passenger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE