Advertisement
০৮ মে ২০২৪

ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন ভবন রক্ষার দাবি

বর্ধমান শহরের ইতিহাস গবেষকদের একাংশেরও দাবি, স্টেশনে এ রকম ঝুল-বারান্দা বা গাড়ি-বারান্দা বিরল।

উপরে, ভাঙার আগে বর্ধমান স্টেশনের ঝুল-বারান্দা।  নিজস্ব চিত্র (ইনসেটে)হাতিতে চড়ে রাজার ট্রেন দেখতে যাওয়ার দৃশ্য। ছবি সৌজন্যে: ‘রেল: উনিশ শতকে বাঙালি জীবন ও  সাহিত্যে’ বই।

উপরে, ভাঙার আগে বর্ধমান স্টেশনের ঝুল-বারান্দা। নিজস্ব চিত্র (ইনসেটে)হাতিতে চড়ে রাজার ট্রেন দেখতে যাওয়ার দৃশ্য। ছবি সৌজন্যে: ‘রেল: উনিশ শতকে বাঙালি জীবন ও সাহিত্যে’ বই।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৩৭
Share: Save:

বঙ্গভঙ্গের বছরে ঝুল-বারান্দা তৈরি হয়েছিল বর্ধমান স্টেশনে। সম্প্রতি থাম ও ছাদের সঙ্গে ভেঙে পড়েছে শতাব্দীপ্রাচীন ওই ভবনের ইতিহাসের একাংশও।

ঝুল-বারান্দা রক্ষার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে। বর্ধমান শহরের ইতিহাস গবেষকদের একাংশেরও দাবি, স্টেশনে এ রকম ঝুল-বারান্দা বা গাড়ি-বারান্দা বিরল। সেটি রক্ষা করা রেলের কর্তব্য বলে মনে করছেন তাঁরা।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত একটি বই থেকে জানা যায়, ১৮৫৫ সালে হাওড়া থেকে বর্ধমান ট্রেন চলাচলের প্রথম দিনে স্টেশনকে ঘিরে মানুষের উৎসাহের ছবি প্রকাশিত হয়েছিল ‘দ্য ইলাসট্রেটেড লন্ডন নিউজ়’ পত্রিকায়। ওই ছবির সূত্র ধরে ‘রেল: উনিশ শতকে বাঙালি জীবন ও সাহিত্যে’ রমেনকুমার সর লিখেছেন, ‘১৮৫৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ১২টা নাগাদ বর্ধমান স্টেশনে প্রথম ট্রেন আসে। সেই সময় বর্ধমানের মহারাজা হাতির পিঠে বহুমূল্যবান পোশাকে সজ্জিত হয়ে এসে ট্রেনের যাত্রীদের অভ্যর্থনা জানান। শুধু বর্ধমান শহর নয়, আশেপাশের হাজার লোক এসেছিলেন ‘কলের গাড়ি’ দেখার জন্য’।

তবে বর্ধমান স্টেশনের মূল ভবন তৈরি হয় আরও আগে। ইতিহাস গবেষকদের দাবি, ‘লন্ডন নিউজ়’ পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ভবনের সেই কাঠামো এখনও রয়েছে। পরবর্তী সময়ে ঝুল-বারান্দা তৈরি হয়। পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার সুনীত শর্মা জানিয়েছেন, ভেঙে যাওয়া অংশটি ১৯০৫ সালে তৈরি হয়েছিল।

বর্ধমান স্টেশন সূত্রে জানা যায়, পূর্ব রেলের ‘হেরিটেজ’ কমিটি ভেঙে যাওয়া অংশের দু’টি ইট সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছেন। ওই ইটগুলি রেলের সংগ্রহশালায় রেখে দেওয়ার কথা। ওই কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের দাবি, “ভেঙে যাওয়া দু’টি থাম থেকে ইটগুলি সংগ্রহ করা হয়েছে। ইটের আকৃতি ও প্রস্তুতকারক সংস্থার নাম দেখে অনুমান, ভেঙে যাওয়া অংশটি শতাব্দী প্রাচীন। তবে স্টেশনের ভবনটিকে রেলের তরফে ঐতিহ্যশালী বা হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়নি।’’

বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সাইদুল হকও বলেন, “স্টেশনের মূল ভবনটিকে হেরিটেজ ঘোষণার জন্য বারবার রেলকে বলেছি। সংসদেও সরব হয়েছিলাম। কিন্তু রেল মন্ত্রক সেই দাবি মানেনি। দাবি মানলে আজকে এই দৃশ্য হয়তো দেখতে হত না।’’ বর্ধমান স্টেশনের সঙ্গে যে ইতিহাসের নানা কাহিনী জড়িয়ে তা বলছেন গবেষকেরা। রমেনবাবু বলেন, “তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে জানা যায়, মহারাজা মহতাব চাঁদের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ট্রেনে চেপেই বর্ধমানে এসেছিলেন ‘ইয়ং বেঙ্গল’-এর অন্যতম পুরোধা রামগোপাল ঘোষ। সেই সময় যে ক’জন চিন্তাশীল ব্যক্তি ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম রামগোপালবাবু।’’

বর্ধমানের ইতিহাস গবেষক সর্বজিৎ যশেরও দাবি, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গাঁধী, নেতাজির স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে স্টেশনে। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত নেতাজি বর্ধমান স্টেশনে একাধিক বার এসেছেন। ঝুলবারান্দার সামনেই তাঁকে সংবর্ধিত করা হয়।’’ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গিরিধারী সরকারও বলেন, “ঝুল-বারান্দা বা গাড়ি-বারান্দা বর্ধমান স্টেশন ছাড়া, খুব একটা দেখা যায় না। ওই স্থাপত্যশৈলি রক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে।’’ নিত্যযাত্রী, কলেজ শিক্ষক শ্রীকান্ত বসুর দাবি, অবৈজ্ঞানিক ভাবে সৌন্দর্যায়ন করতে গিয়ে ইতিহাস নষ্ট করা হয়েছে। এ বার যাতে ইতিহাসকে বাঁচানো যায়, সে দিকে রেলের খেয়াল রাখা উচিত।

সোমবারই রেলের ইঞ্জিনিয়ার, বিশেষজ্ঞেরা ভেঙে যাওয়া ভবনের অংশ দেখে গিয়েছেন। খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তবে ঝুল-বারান্দা-সহ ভবনের ভেঙে পড়া অংশ পুরোপুরি মুছে দেওয়া হবে, না আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে রক্ষা করা হবে, তার উত্তর এখনও অজানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman Station Indian Railways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE