Advertisement
E-Paper

প্রতি বর্ষায় ভাসে অস্থায়ী সেতু, ক্ষোভ

অজয়ে জল বাড়লে মুছে যায় সেতু। সমস্যায় পড়েন বাসিন্দারা। কিন্তু কয়েক দশকেও কেন চুরুলিয়ায় সেতু হয়নি। কেন এই পরিস্থিতি, কী বলছেন বাসিন্দা ও প্রশাসনের কর্তারা— বর্ষার আগে খোঁজ নিল আনন্দবাজার পত্রিকা।  অজয়ে জল বাড়লে মুছে যায় সেতু। সমস্যায় পড়েন বাসিন্দারা। কিন্তু কয়েক দশকেও কেন চুরুলিয়ায় সেতু হয়নি। কেন এই পরিস্থিতি, কী বলছেন বাসিন্দা ও প্রশাসনের কর্তারা— বর্ষার আগে খোঁজ নিল আনন্দবাজার পত্রিকা। 

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৮ ০৭:৩১
এই সেতু ধরেই যাতায়াত করেন তিন এলাকার বাসিন্দারা। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

এই সেতু ধরেই যাতায়াত করেন তিন এলাকার বাসিন্দারা। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

এ পাড়ে ‘কবিতীর্থ’। ও পাড়ে, পড়শি জেলা ও রাজ্য। মাঝখান দিয়ে বসে গিয়েছে অজয়।

পারপারের ভরসা, অস্থায়ী সেতু। দশকের পর দশক যায়। প্রতি বারই অস্থায়ী সেতু তৈরি হয়। আর প্রতি বছর বর্ষাতেই তা ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যায়। পশ্চিম বর্ধমানের চুরুলিয়া ও বীরভূমের খয়রাশোলের তিনটি পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুই প্রশাসনের সব স্তরেই বার বার আর্জি জানানো হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। ব্যবসা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা-সহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক নানা ক্ষেত্রে এর জেরে সমস্যা হচ্ছে।

এলাকায় গিয়ে জানা গেল, নদের এক পাড়ে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মভিটে চুরুলিয়া। অন্য দিকে রয়েছে, বীরভূমের খয়রাশোল ব্লকের পাটসুণ্ডি, বড়ড়া, বাবুইজোড় পঞ্চায়েত। রয়েছে ঝাড়খণ্ডের নলা থানার অফজলপুর পঞ্চায়েত এলাকাও। দু’পাড়ের বাসিন্দাদের যাতায়াতের সহজ পথ, অজয়। তার উপরেই রয়েছে অস্থায়ী সেতুটি। দু’পাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গেই কথা বলে জানা গিয়েছে, ফি বছর দুর্গাপুজোর আগে অস্থায়ী সেতু তৈরির বরাত দেয় খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতি। নদীতে মাটি, বোল্ডার, মোরাম ফেলে তৈরি হয় অস্থায়ী সেতু। কিন্তু বৃষ্টি হলেই সেই সেতু নষ্ট হয়। কিন্তু কেন এমন হাল? খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি অসীমা ধীবরের দাবি, ‘‘কয়েক হাজার মানুষ স্থায়ী সেতুর দাবিতে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। কিন্তু সমিতির পক্ষে অত টাকা খরচ করা সম্ভব নয়।’’

এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়েছেন এলাকাবাসী। তাঁরা জানান, এর জেরে প্রধানত প্রভাব পড়ছে অর্থনীতির ক্ষেত্রে। চুরুলিয়ার বাসিন্দা শেখ আসরফ জানান, বীরভূমের ওই ব্লকে চাষাবাদ ভালই হয়। ফলে ওপাড় থেকে চাষিরাচুরুলিয়ায় আনাজ সহজে আনতে পারলে দু’পাড়ের বাসিন্দারাই উপকৃত হবেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা ব্রজনারায়ণ রায়ের কথায়, ‘‘স্থায়ী সেতু তৈরি হলে এ পাড়ের বাসিন্দারা আনাজ ও চাল অনেকটা কম দামে পেয়ে যাবেন।’’ তেমনই বীরভূমের চাষিদের ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে। কারণ সে ক্ষেত্রে তাঁরা জামুড়িয়া, আসানসোল-সহ পশ্চিম বর্ধমানের বড় বাজারগুলিতে সহজেই আসতে পারবেন।

দ্বিতীয়ত, সামাজিক ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা হচ্ছে। যেমন, দু’পাড়ের বাসিন্দাদের অনেকেরই আত্মীয় রয়েছে দু’জায়গায়। তেমনই এক জন কাকলি ঘোষ। তাঁর বাড়ি, খয়রাশোলে। বিয়ে হয়েছে চুরুলিয়ায়। তাঁর কথায়, ‘‘নজরুল মেলা-সহ বছরের নানা সময়ে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু বর্ষায় সমস্যা হয়।’’ বর্ষায় ঘুরপথে জামুড়়িয়া, হরিপুর, পাণ্ডবেশ্বর হয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার ঘুরপথে খয়রাশোলে যেতে হয় বলে জানা গিয়েছে।

স্থায়ী সেতু তৈরির বিষয়ে বাসিন্দারা মাঝেসাঝেই দাবি জানিয়েছেন। চুরুলিয়ায় নজরুল অ্যাকাডেমির তরফে বিদ্যুৎ কাজীর কথায়, ‘‘রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে কয়েক বার চিঠি দিয়ে রবীন্দ্র-নজরুলের স্মৃতিতে স্থায়ী সেতু তৈরির আর্জি জানিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি।’’ সিপিএম নেতা মনোজ দত্তের অবশ্য দাবি, ২০১০-এ চুরুলিয়ায় স্থায়ী সেতু তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পরে তা বিশ বাঁও জলে।

বিডিও (জামুড়িয়া) অনুপম চক্রবর্তী জানান, বহু কাল আগে মৌখিক ভাবে আলোচনায় ঠিক হয়েছিল, দরবারডাঙা ও চুরুলিয়ায় অস্থায়ী সেতু দু’টি দেখবে যথাক্রমে সাবেক বর্ধমান ও বীরভূম জেলা প্রশাসন। অনুপমবাবুর দাবি, ‘‘দরবারডাঙায় আমরা স্থায়ী সেতু তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছি। চুরুলিয়ার ক্ষেত্রেও তা হলে ভাল।’’ অসীমাদেবীর বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি। আশানুরূপ সাড়া পেয়েছি। আশা করি বেশি দেরি হবে না।”

এই সেতুটির কারণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা-সহ নানা ক্ষেত্রেও বহু সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ চুরুলিয়ার বাসিন্দাদের।

(চলবে)

Bridge Rainy Season
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy