এটিএমে শুধু দু’হাজার। তাই ভিড়ও কম। —নিজস্ব চিত্র।
শীত সব পড়ছে। তার মধ্যেও দরদর করে ঘামছেন এটিএম, ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষ। একটাই প্রশ্ন, শেষ হয়ে যাওয়ার আগে টাকা পাব তো?
তার মধ্যে কিছু এটিএমে শুধু দু’হাজারের নোট মিলছে। সেখানে ভিড় নেই বললেই চলে। দৈনন্দিনের কাজ মেটাতে একশো টাকার নোটের জন্য হন্যে হয়ে রয়েছেন বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, দু’হাজারের নোটের খুচরো পাওয়া যাচ্ছে না। তার চেয়ে অপেক্ষা করে একশোর নোট পেলেও সুবিধে। আর যাঁদের অপেক্ষা করার উপায় নেই তাঁরা ঘুরছেন এ দরজা থেকে ও দরজা। এই পরিস্থিতিতে দু’দিন ধরে ঘুরতে মোবাইল এটিএমে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে।
গ্রাহকদের চাপে নাজেহাল অবস্থা ব্যাঙ্ক কর্মীদেরও। টাকা জমা নিতে আর নোট বদল করতেই দিন কাবার। রাত ৮ টাতেও কাজ চলছে। গ্রাহকদের লাইন পৌঁছে যাচ্ছে ব্যাঙ্ক থেকে ৫০ মিটার দূরে। বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমগুলিতে প্রায় সময়ই ঝোলানো থাকছে ‘নো ক্যাশ’ বা ‘আউট অফ সার্ভিস’। ব্যাঙ্কে গিয়ে চেকে বা উইথড্রল স্লিপ দিয়ে টাকা তুলতেও গেলেও গ্রাহকদের প্রচুর ঝামেলার মধ্যে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিলের দু’সপ্তাহ কাটতে চলল, অথচ পরিস্থিতি ছন্দে ফিরতে যে বহু দেরি,তা বলছেন ভুক্তভোগীরাই।
তবে এর মধ্যেই শহরে ঘুরতে থাকা ‘মোবাইল এটিএম’ গাড়ি দেখে কিছুটা হাঁফ ছাড়ছেন মানুষ। দেশের অন্যতম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তরফে শনিবার থেকেই শহরের নানা জায়গায় ওই গাড়ি নিয়ে ঘোরা হচ্ছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কার্ড সোয়াইপ করে টাকা পাচ্ছেন গ্রাহকেরা। গ্রাহকদের দাবি, এটিএমের সামনে ঘণ্টা পর ঘণ্টা লাইন না দিয়েও কাজ চলার মতো টাকা মিলছে। অনেকটাই স্বস্তি। ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জোনাল দফতরের এক কর্তা বলেন, “ব্যাঙ্ক ও এটিএমগুলির উপর চাপ বাড়ছে। গ্রাহকরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। গ্রাহকদের সুবিধার্থেই আমাদের আউটসোর্সিং সংস্থার সঙ্গে কথা বলে জেলা সদরে মোবাইল এটিএমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।” জানা গিয়েছে, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই পরিষেবা শহরের বিভিন্ন জনবহুল জায়গায় মিলবে। ওই আউটসোর্সিং সংস্থার ম্যানেজার বলেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চলবে।’’
মোবাইল এটিএম কী? একটি গাড়িতে কার্ড সোয়াইপ করার যন্ত্র রয়েছে। গাড়িতেই থাকছে অ্যালুমিনিয়ামের বড় বাক্সে ১০০ টাকার নোট। গ্রাহক ওই যন্ত্রে টাকার অঙ্ক লেখার পরে কার্ড সোয়াইপ করছেন। তারপরে পিন নম্বর দিতেই ‘স্লিপ’ বেরোচ্ছে। তখন কর্মীরা অ্যালুমিনিয়াম বাক্স থেকে টাকা বের করে দিচ্ছেন। ওই গাড়িতে থাকা এক কর্মী বলেন, “শপিং মলে কার্ড সোয়াইপ করে জিনিস মেলে, আমরা তার বদলে নগদ দিচ্ছি।”
সোমবার সংস্কৃতি প্রেক্ষাগৃহের কাছে ‘মোবাইল এটিএম’ থেকে টাকা তোলেন মেহেদি বাগানের নাসিম আহমেদ, রায়নার সেহেরাবাজারের হারাধন কর্মকাররা। তাঁদের কথায়, “যে সব এটিএম থেকে দু’হাজার টাকার নোট বেরোচ্ছে দিচ্ছে, সেখানে প্রায় ফাঁকা। আর ১০০ টাকা দিচ্ছে সেই সব এটিএমে লম্বা লাইন। ওই দেখে আজ আর কপালে টাকা নেই ভাবছিলাম। হঠাৎ ওই গাড়ি দেখে আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো ছুটে গেলাম।” বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনেও ওই গাড়ি গিয়েছিল। টাকা পান রোগীর আত্মীয় মঙ্গলকোটের জয়ন্ত রাউত থেকে মুর্শিদাবাদের উন্নতি হাজরারা। তাঁরা বলেন, “রোগী ছেড়ে বেরোতেই পারছি না। এটিএম কার্ড থাকলেও টাকা তুলতে পারছিলাম না। কী করে ওষুধ কিনব ভাবছি, সেই সময় গাড়িটি এসে খুবই উপকার হল।” হাসপাতালের নার্স রিয়া বসুও বলেন, “ধুস! সব এটিএমেই দু’হাজার টাকার নোট। ওই নোট দিয়ে কী দিনের বাজার হবে। কাজ ছেড়ে লাইনেও দাঁড়াতে পারছিলাম না। ভ্রাম্যমান গাড়ি আসায় আমাদের উপকারই হল।”
বাজারে যে দু’হাজার টাকার নোটের চাহিদা নেই তা বিলক্ষণ টের পাওয়া যাচ্ছে। শহরে যে সব এটিএম থেকে শুধু দু’হাজার টাকার নোট মিলছে, সেই সব এটিএম প্রায় ফাঁকা। ভুল করে দু’হাজার টাকা তুলে বিপাকে পড়ে গিয়েছেন মিরছোবা গ্রামের হাফিজুল হোসেন। তিনি বলেন, “এটিএম ফাঁকা দেখে টাকা তুলে দু’হাজার টাকার নোট পেয়েছি। ওই টাকা দিয়ে বাজার করব কী ভাবে?” কালনা থেকে মাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছেন সুনিধি সেন। তাঁর কথায়, “দু’ হাজার নোট তো কেউ নিতে চাইছে না। এক ঘন্টা ঘুরেও ওষুধ কিনতে পারছি না।” আপাতত পাঁচশো টাকার নোটের অপেক্ষা বর্ধমানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy