Advertisement
E-Paper

ধস-ধোঁয়া নিয়েই বাস, পুনর্বাসন দাবি কেন্দায়

চার দিকে কোলিয়ারি। মাঝখানে যেন দ্বীপের মতো জেগে রয়েছে গ্রাম। ধসপ্রবণ এলাকা হিসেবে ১৭ বছর আগে চিহ্নিত হলেও এখনও পুনর্বাসন পাননি জামুড়িয়ার কেন্দা গ্রামের বাসিন্দারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৫ ০১:১৫
মাঝে-মধ্যেই এলাকায় দেখা যায় এমন ফাটল। —নিজস্ব চিত্র।

মাঝে-মধ্যেই এলাকায় দেখা যায় এমন ফাটল। —নিজস্ব চিত্র।

চার দিকে কোলিয়ারি। মাঝখানে যেন দ্বীপের মতো জেগে রয়েছে গ্রাম। ধসপ্রবণ এলাকা হিসেবে ১৭ বছর আগে চিহ্নিত হলেও এখনও পুনর্বাসন পাননি জামুড়িয়ার কেন্দা গ্রামের বাসিন্দারা। ধস, মাটি ফুঁড়ে ধোঁয়া বেরোনোর মতো ঘটনা ঘটেছে বারবার। বাসিন্দারা ‘কেন্দা গ্রাম রক্ষা কমিটি’ তৈরি করে এ বার পুনর্বাসন প্রকল্প রূপায়ণের দাবিতে চিঠি পাঠালেন ইসিএলের সিএমডি এবং রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট নানা দফতরে।

ওই কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম ধসের ঘটনা ঘটে বছর তিরিশ আগে। সে বার কেন্দা গোয়ালাপাড়ায় এক দিন ভোরে বিকট আওয়াজ শুনে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন রামা গোপ। এর পরে তাঁদের চোখের সামনেই তলিয়ে যায় বসতবাড়ি, গবাদি পশু-সহ গোয়ালঘর। সে বার তৎপরতার সঙ্গে দ্রুত ওই পরিবারকে পুনর্বাসন দিয়েছিলেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ। তৎকালীন সাংসদ আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় এলাকা পরিদর্শন করে যান।

পরে এলাকাবাসী জানতে পারেন, কেন্দা গ্রাম ও লাগোয়া এলাকা ধসপ্রবণ। মাটির নীচে দু’টি কয়লাস্তর আছে। খনি ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকার সময় থেকে ভূগর্ভে লাগাতর কয়লা কেটে সেই জায়গা ভরাট না করায় মাটির তলা ফাঁপা হয়ে রয়েছে। যখন-তখন এই রকম ধস, আগুন ও ধোঁয়া বেরোনোর সম্ভাবনা রয়েছে। তার পরে একের পর এক ধসের ঘটনা ঘটেছে।

গত বছর গোড়ার দিকে কাহারপাড়ায় রাস্তার গাঁ ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এলাকা ধসে যায়। ওই বছরের মাঝামাঝি কোলিয়ারির এজেন্ট কার্যালয়ের সামনে বেশ খানিকটা এলাকা ধসের কবলে পড়ে। বছর দশেক আগে নিউ কেন্দা কোলিয়ারির ভূগর্ভে বিস্ফোরণে ৫৫ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তাঁদের স্মৃতিতে নির্মিত শহিদ পার্কের সামনে কেন্দার প্রধান রাস্তার পাশেও ধস নেমেছে। নিউ কেন্দা কোলিয়ারির ৮ নম্বর পিট এলাকায় যত্রতত্র মাটি ফুঁড়ে আগুন ও ধোঁয়া বেরনোর ঘটনা ঘটে। কেন্দা গ্রাম ও লাগোয়া এলাকায় কুড়ি বারের বেশি ধস নেমেছে। এ ছাড়া যেখানে-সেখানে মাটিতে ফাটল ধরার ঘটনাও ঘটে চলেছে বলে এলাকাবাসী জানান।

কেন্দা গ্রাম লাগোয়া কোড়াপাড়া, শালডাঙা, বনধাওড়া, ঝাটিবন, কোদাকুলির মতো ছ’টি আদিবাসী পাড়ার অবস্থা বেশ করুণ। বারবার জমি অধিগ্রহণ করে খনি চালু হওয়ায় বর্তমানে গরু চরারও কোনও জায়গা নেই বলে খেদ স্থানীয় বাসিন্দাদের। গ্রাম রক্ষা কমিটির লোকজনের দাবি, খনি থেকে কার্যত ঢিল ছোড়া দূরত্বে চাপা কল বসানো হলেও তাতে জল পড়ে না। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কল থাকলেও জল মেলে না। এলাকার চারটি পুকুর শুকিয়ে গিয়েছে। এলাকাবাসীর ভরসা বলতে একটি জোড়ের জল। গরমে স্থানীয় পঞ্চায়েত এক ট্যাঙ্কার জল প্রতি দিন সরবরাহ করে। কিন্তু তাতে চাহিদা মেটে না বলে জানান তাঁরা।

ওই কমিটির আহ্বায়ক মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গ্রামবাসীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ভিটে ছেড়ে যেতে প্রথম দিকে নিমরাজি থাকলেও এখন সবাই বুঝেছেন, এই জনপদ বসবাসের জন্য নিরপাদ নয়। চার বছর আগে পুনর্বাসনের তালিকায় থাকা সব পরিবারের সদস্যদের পরিচয়পত্র পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর। তিনি বলেন, “সম্প্রতি আমার ইসিএলের সিএমডি-সহ রাজ্য সরকারের সমস্ত দফতরে চিঠি পাঠিয়েছি। আমাদের দাবি, যাদের নিজেদের নামে জমি নেই অথচ এলাকায় বাস করেন, তাঁদেরও পুনর্বাসন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”

ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘পুনর্বাসনের জন্য জমি চিহ্নিতকরণের দায়িত্বে রয়েছে এডিডিএ। তারা তা এখনও করতে পারেনি বলে পুনর্বাসন দেওয়া যাচ্ছে না।’’ এডিডিএ-র চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘এ নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি রয়েছে।’’

Jamuria People landslide Saldanga CMD
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy