Advertisement
০৮ মে ২০২৪
নোয়াপাড়়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র

‘স্যার যাবেন না’, এক রা বাসিন্দাদের

ডাক্তার নেই বলে অগ্রদ্বীপে যখন বিক্ষোভ চলছে, তখন মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরের কাটোয়ার নোয়াপাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সৌজন্যে এক জন ডাক্তারবাবুই। যাঁর বদলির নির্দেশ আটকাতে একজোট হয়ে বাসিন্দাদের দাবি জানালেন, ‘যেতে নাহি দিব।’

বাসিন্দাদের মাঝে চিকিৎসক দেবদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

বাসিন্দাদের মাঝে চিকিৎসক দেবদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

সুচন্দ্রা দে
কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৫১
Share: Save:

ডাক্তার নেই বলে অগ্রদ্বীপে যখন বিক্ষোভ চলছে, তখন মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরের কাটোয়ার নোয়াপাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সৌজন্যে এক জন ডাক্তারবাবুই। যাঁর বদলির নির্দেশ আটকাতে একজোট হয়ে বাসিন্দাদের দাবি জানালেন, ‘যেতে নাহি দিব।’

বছর ত্রিশের দেবদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গত বৃহস্পতিবার কেতুগ্রামের রামজীবনপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় দেবদীপবাবুকে। ডাক্তারবাবু চলে যাওয়ার খবর চাউর হওয়ার পরে সোমবার সকালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে ভিড় জমান কয়েকশো বাসিন্দা। বছর ত্রিশের দেবদীপবাবুর হাতে ধরে বাসিন্দারা একটাই আবেদন করেন, ‘স্যার আপনি যাবেন না।’

বদলির ‘নির্দেশ বদলানোর’ দাবিতে আজমাইল শেখ, সিদ্ধার্থ প্রধানদের মতো কয়েক জন বাসিন্দা ততক্ষণে চলে গিয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে। ‘দেবদীপবাবুকেই চাই’— এমন স্লোগানও দিতে শোনা যায় কয়েক জনকে। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মহম্মদ মহসিন এ দিন অবশ্য বলেছেন, ‘‘দেবদীপবাবুকে স্থানীয় বাসিন্দারা এত পছন্দ করেন দেখে ভাল লাগছে! ব্যক্তিগত ভাবে আমিও চাই, উনি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই থেকে যান।’’

ন’মাস আগে কেতুগ্রামের রামজীবনপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নোয়াপাড়ায় সাময়িক ভাবে পাঠানো হয় দেবদীপবাবুকে। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে তিন জন চিকিৎসক থাকলেও তাঁদের মধ্যে দু’জনই বর্তমানে ছুটিতে। এমন অবস্থায় দেবদীপবাবু আসাতে খানিক ভরসা পেয়েছিলেন গ্রামের বাসিন্দারা।

শুরুর দিনগুলো কেমন ছিল? সোমবার বছর তেরোর ছেলেকে নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন অপূর্ব প্রধান। তাঁর কথায়, ‘‘সব হাসপাতালেই দেখি, কথায় কথায় রোগীদের স্থানান্তরিত করে দেওযার হিড়িক! একমাত্র এই ডাক্তারবাবুকেই দেখা যায় অবস্থা আয়ত্তের বাইরে চলে না যাওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়ছেন না।’’ শুধু তাই নয়, ডাক্তারবাবুকে রোগীদের ক্যাথিটার পরিয়ে দেওয়ার মতো কাজও অবলীলায় করতে দেখা যায় বলে জানান সত্তর বছরের বৃদ্ধ কার্তিক প্রধান। শুধু তাই নয়, রাতবিরেতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শুনলেই দেবদীপবাবুকে এক ডাকে পাওয়া যায় বলে জানান গ্রামবাসীরা।

বাসিন্দাদের ভালবাসায় আপ্লুত ডাক্তারবাবুও। গলায় স্টেথো ঝুলিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখতে লিখতেই তিনি বলে ফেলেন, ‘‘নোয়াপাড়া ছেড়ে কোথাও যেতে মন চাইছিল না।’’ প্রশাসনের সূত্রে খবর এখানে থাকতে চেয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে আবেদনও জানিয়েছেন তিনি।

অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা কবিতা শাসমল জানিয়ে দেন, ‘‘পুজোর সময়ে কয়েকটা দিন ওনাকে কেতুগ্রাম পঠানো হবে। পুজোর পরে উনি যাতে স্থায়ী ভাবে নোয়াপাড়াতেই থাকতে পারেন, সে জন্য সিএমওএইচের কাছে আবেদন জানানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

people doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE