Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

মশার হামলা,পুর-ভূমিকায় ক্ষুব্ধ নাগরিক

স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব, বর্ধমান শহরে গত ছ’মাসে ৩১ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও দিন দিন বাড়ছে। শহরবাসীর ক্ষোভ, নিকাশি নালাগুলি ঠিকঠাক সাফাই হয় না।

অপরিষ্কার: বর্ধমানের তেলমারুই পাড়ায় নিকাশি নালার হাল এমনই। ছবি: উদিত সিংহ

অপরিষ্কার: বর্ধমানের তেলমারুই পাড়ায় নিকাশি নালার হাল এমনই। ছবি: উদিত সিংহ

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১৯
Share: Save:

চিত্র ১: প্রায় ১৩ একর ‘শশাঙ্ক বিল’টি কার্যত আস্তাকুঁড়ে পরিণত হয়েছে। বড় বড় আগাছা গজিয়েছে সেখানে।

চিত্র ২: নীলপুরের কিশোরকুমার সরণির ছোট ডোবা পানায় ভর্তি। তার পাড়েই আবর্জনার স্তূপ। গরু-কুকুর এক সঙ্গে আবর্জনার ভিতর থেকে উচ্ছিষ্ট টেনে বার করছে।

চিত্র ৩: তেলমারুই পাড়ার ভিতর দিয়ে শহরের মূল নিকাশি নালা গিয়ে বাঁকা নদীতে মিশেছে। ওই নর্দমার উপরে ঢাকা নেই। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দরা।

চিত্র ৪: গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের উপরে কলেজ মোড়ে নিকাশি নালার জল আটকে রয়েছে। একই অবস্থা রসিকপুরের নিকাশি নালাতেও। অল্প বৃষ্টিতেই জল উপচে রাস্তা ডুবে যায়।

এই চারটি ছবি বুঝিয়ে দিচ্ছে শহরের নিকাশি-ব্যবস্থাটা কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফলে, মশার হুলে বিদ্ধ হতে হচ্ছে শহরের আবালবৃদ্ধবণিতাকে।

স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব, বর্ধমান শহরে গত ছ’মাসে ৩১ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও দিন দিন বাড়ছে। শহরবাসীর ক্ষোভ, নিকাশি নালাগুলি ঠিকঠাক সাফাই হয় না। সংস্কারের অভাবে বছরভর নোংরা জল জমে থাকায় নিকাশি নালাগুলি মশার আঁতু়ড়ঘর হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু নিকাশি নালা কেন, শহরের বেশ কিছু পুকুর মজে থাকায় বা আংশিক ভরাট হয়ে যাওয়ায়, সেই সব পুকুর-পাড় এলাকার বাসিন্দারা মশার-দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা কলকাতার ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন চিকিৎসক-পতঙ্গবিদ গৌতম চন্দ্রের ক্ষোভ, “বর্ধমান শহরে এডিস মশার দু’রকম প্রজাতি মিলেছে। এ ছাড়া, শহরে পানাপুকুর ও নর্দমার জমা জল থেকেও মশার বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে।”

মশার হাত থেকে বাঁচতে দিনের বেলাতেও জানলা খুলতে ভয় পাচ্ছেন বর্ধমান শহরের বিভিন্ন পাড়ার বাসিন্দারা। সারাদিনই কামড় চলছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামলেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঘিরে ধরছে। অবস্থা এমনই, যে কথা বলতে গেলেও নাকে-মুখে ঢুকে যাচ্ছে মশা। অনেকে মশার হাত থেকে বাঁচতে দিনের বেলায় মশারি টাঙিয়ে রাখছেন, জানলাতে জাল লাগাচ্ছেন। মশা-সন্ত্রাসের হাত থেকে বাঁচতে বাজার চলতি মশা মারার ধূপ, ওষুধ, তেল এবং গায়ে মাখার ক্রিম, রোল-অনের বিক্রি বেড়ে গিয়েছে।

চলতি বছরের বর্ষা-মরসুম শুরুর ঠিক আগেই প্রতিটি পুরসভাকে মশার উৎপাত কমানোর নির্দেশিকা জারি করেছিল ‘নবান্ন’। সেখানে কী-কী করতে হবে, সে নির্দেশও ছিল। শহরবাসীর একটা বড় অংশের অভিযোগ, শীতের শুরুতেও মশা-সন্ত্রাস বুঝিয়ে দিচ্ছে, ‘নবান্ন’র নির্দেশ পুরসভা ঠিকঠাক মানেনি। শুলিপুকুর এলাকার বধূ সুনয়না গঙ্গোপাধ্যায়, তেলমারুই পাড়ার রিন্টু শেখদের কথায়, “পুরসভা যদি সবই ঠিকঠাক করবে তা হলে এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে মশা আসছে কী ভাবে? দিনভর দরজা-জানলা খোলার উপায় নেই।”

যদিও পুরসভার দাবি, আবর্জনা এবং নালা সাফাই থেকে শুরু করে মশা মারতে কামান দাগা, তেল ছড়িয়ে মশার উৎপাত কমানোর চেষ্টা হয়েছিল। পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত বলেন, “সরকারি পুকুরগুলি ৫০ লক্ষ টাকায় সংস্কার করেছি। সবচেয়ে দামী তেল ছড়ানো হচ্ছে। নিয়ম করে কামান দাগাও চলছে। আর কী করব? স্থানীয় মানুষকেও তো সচেতন হতে হবে!”

পুরপারিষদ খোকন দাসের কথায়, “শহরের মূল নিকাশি নালা ঢাকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। জিটি রোডে কোনও ভ্যাট রাখা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

তবে গৌতমবাবু ধরিয়ে দিচ্ছেন অন্য বিপদের কথা। বলছেন, “এমনিতেই মশার জ্বালায় দরজা-জানলা খোলা যায় না। তার উপরে যে ভাবে কামান দাগা হচ্ছে, তা বিপজ্জনক। তাতে বাইরের মশা ঘরে ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Mosquito Drainage System Water Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE