Advertisement
১১ মে ২০২৪
Potato Price

জোগানে টানেই দাম চড়েছে বীজ-আলুর

পূর্ব বর্ধমানে সাধারণত ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। তার মধ্যে ৭-৮% জলদি জাতের আলু চাষ করা হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২০ ০০:৩০
Share: Save:

লাফিয়ে বেড়ে গিয়েছে বীজ-আলুর দাম। তার জেরে সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। তবে এর ফলে আলু চাষের এলাকা কমবে না বলেই আশা করছেন কৃষি আধিকারিকেরা। বরং, গত বছরের চেয়ে বেশি জমিতেই আলু চাষ হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। প্রগতিশীল আলু বীজ ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদেরও একাংশের দাবি, মরসুমের শুরু থেকেই বীজ-আলু কেনার উৎসাহ রয়েছে চাষিদের।

চাষি ও ব্যবসায়ীদের অনেকে জানান, পুজোর পরে পোখরাজ জাতের পঞ্জাবের সার্টিফায়েড বা শংসিত বীজের দাম ছিল বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ১২০০-১৪০০ টাকা। এ বার সেখানে তা কিনতে হচ্ছে ৩৫০০-৪০০০ টাকায়। এখনও পঞ্জাবের জ্যোতি জাতের সার্টিফায়েড আলুর বীজ জেলায় আসেনি। ওই বীজ আসতে কয়েকদিন দেরি আছে। এর মধ্যেই অনেক চাষি প্রতি বস্তা ৪২০০ টাকা দরে আলুর বীজ কেনার জন্য ‘বুক’ করে রেখেছেন। গত বছর সার্টিফায়েড জ্যোতি আলুর বীজ বিক্রি শুরু হয়েছিল ১৪০০ টাকায়। শেষে দাম দাঁড়িয়েছিল ২৬০০ টাকা। এ ছাড়া, হিমঘরে বীজের জন্য রাখা আলুর দামও প্রতি বস্তা গড়ে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ওই আলুই চাষি কিনেছিল ৭৫০-৮০০ টাকায়।

এ বছর বীজ-আলু দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ কী? কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, পোখরাজ জাতের আলু জলদি জাত বলে গ্রাম বাংলায় পরিচিত। পূর্ব বর্ধমানে সাধারণত ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। তার মধ্যে ৭-৮% জলদি জাতের আলু চাষ করা হয়। জ্যোতি আলু লাগানোর ফাঁকেই পোখরাজ আলু বাজারে চলে আসে। এ রাজ্যের চাষিরা পোখরাজ জাতের আলু হিমঘরে পাঠান না। ওই আলুর বীজ পুরোটাই পঞ্জাব থেকে আসে। কিন্তু এ বার বাজারে আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় চাষিদের একটি বড় অংশ পোখরাজ আলু চাষ করার দিকে ঝুঁকেছেন। ফলে জোগানে টান পড়ছে। সে কারণে পোখরাজ জাতের বীজের দাম বেড়ে গিয়েছে। মেমারির বাসিন্দা, প্রগতিশীল আলু বীজ ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য আশিস দাসের দাবি, “পঞ্জাবের পোখরাজ আলুর বীজ বাংলাতেই বেশিরভাগ আসত। এ বার বাংলার বদলে গুজরাতে চলে গিয়েছে। জ্যোতি আলুর বীজ আনতে প্রতি বস্তায় চার হাজার টাকার উপর খরচ পড়ে যাচ্ছে।’’

মেমারির গন্তারের ব্যবসায়ী সুদীপ্ত ভাণ্ডারির কথায়, ‘‘হিমঘরে রাখা জ্যোতি আলু চাষ করতে বিঘা প্রতি ১০ বস্তা বীজ লাগে। সেখানে পঞ্জাবের আলু চাষ করতে চার বস্তা বীজ যথেষ্ট। বীজ লাগাতে খরচ এক হওয়ায় চাষিরা পঞ্জাবের বীজের দিকে ঝুঁকছেন।’’ যদিও কাটোয়ার বীজ-আলু ব্যবসায়ী আয়ুব মিঞার অভিযোগ, ‘‘এক শ্রেণির মজুতদারদের হাতে বীজ-আলু সংরক্ষিত হয়ে রয়েছে। তাঁরাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।’’

বীজের দাম বৃদ্ধিতে চিন্তায় চাষিরা। বর্ধমানের বেগুট গ্রামের অশোক কুমার কুণ্ডু, কালিনগরের প্রদীপ লাহা, মেমারির অশোক ঘোষ, পিণ্টু ভাণ্ডারিদের কথায়, “গত বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আলু চাষ অনেকটাই মার খেয়েছিল। প্রতি বস্তা আলু সাড়ে চারশো-পাঁচশো টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ বছর আলু চাষের খরচ বিঘাতেই প্রায় ১৫ হাজার টাকা বেড়ে যাবে। প্রতি বস্তা ৮০০-৯০০ টাকা দাম না পেলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে।’’ মেমারির অরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভাল ফলন পেতে হলে সার্টিফায়েড বীজ দরকার। কারণ, তাতে রোগপোকার হামলা কম হয়, ফলনও বেশি মেলে। এ বার দাম বেড়ে যাওয়ায় কতটা কিনে চাষ করতে পারব সন্দেহ আছে। তাই ফলন কেমন হবে, সে নিয়েও আশঙ্কায় থাকছি।’’ কালনার চাষি শিব ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘গত বার ভাল দাম মিলেছিল। এ বার তো তা না-ও মিলতে পারে। সেক্ষেত্রে বেশি দামে বীজ কিনে ক্ষতির মুখে না পড়তে হয়, চিন্তা রয়েছেই।’’

শুধু খোলা বাজারে নয়, সরকারি খামার থেকেও এ বার ২০-২৫% বেশি দামে আলু বীজ বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য সরকার। সে কথা জানিয়ে দফতরের উপ-কৃষি অধিকর্তা (পূর্ব বর্ধমান) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘আলু বীজের দাম বাড়লেও চাষে প্রভাব পড়বে না। বরং, এ বার চাষ বেশি হবে বলেই মনে করছি।’’ জেলা কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক সুদীপ পাল বলেন, ‘‘আমরা অভিযান চালাছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে কম দামে আলু বিক্রির স্টল খোলা হয়েছে। তার পরেও বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় বুঝতে হবে, চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE