Advertisement
০২ জুন ২০২৪

ষষ্ঠীতে ঘরে ফিরলেন রাষ্ট্রপতি

কীর্ণাহারে পৌঁছল রাষ্ট্রপতির কপ্টার।— সোমনাথ মুস্তাফি

কীর্ণাহারে পৌঁছল রাষ্ট্রপতির কপ্টার।— সোমনাথ মুস্তাফি

মহেন্দ্র জেনা ও অর্ঘ্য ঘোষ
কীর্ণাহার ও বোলপুর শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০২:১৭
Share: Save:

শুধু প্রিয় বইগুলো সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবন ছাড়ার ইচ্ছের কথা কিছু দিন আগেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তবে কি অবসরে যেতে চলেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়? সংবাদমাধ্যমে তো বটেই রাজনৈতিক জল্পনাও রয়েছে তা নিয়ে। এরই মধ্যে শুক্রবার, ষষ্ঠীর বিকেলে কীর্ণাহার ছুঁল রাষ্ট্রপতির কপ্টার। পুজোর সময়ে ঘরে ফিরলেন সকলের প্রিয় পল্টু। দেশবাসীর উদ্দেশে জানালেন শারদীয়ার

প্রীতি, শুভেচ্ছা— সম্প্রীতি, সৌভ্রাতৃত্বের বার্তাও।

সংবাদমাধ্যমের দৌলতে স্থানীয় বাসিন্দারা বেশ কিছু দিন আগেই জেনে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির বাড়িতে ফেরার নির্ঘণ্ট। ফলে অনেক আগে থেকেই দেখা গেল স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া মাঠে তৈরি হওয়া হেলিপ্যাডগামী মানুষের ভিড়। অনেকেই মনে করেন, একই জিনিস বারবার দেখলে মানুষের উৎসাহে ভাটা পড়ে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ঘরের ফেরার ছবি ওই দর্শনকে মিথ্যা প্রমাণ করে ছেড়েছে। পুলিশ তো বটেই প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই জানাচ্ছেন, অন্য বার যেখানে হেলিপ্যাডকে ঘিরে হাজার তিনেক মানুষের সমাগম হয়, এ বার সেখানে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ উপস্থিত হয়েছে। পুলিশের হিসেবে সংখ্যাটা অন্তত হাজার পাঁচেক।

তিনটে চল্লিশে নাগাদ ভারতীয় বায়ু সেনার তিনটি কপ্টারকে কীর্ণাহার বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশান মাঠের উপরে চক্কর কাটতে দেখা যায়। পৌনে চারটে নাগাদ কপ্টার হেলিপ্যাড ছুঁতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন উপস্থিত জনতা। অনেকেই বলতে শোনা যায়, ‘‘শেষ বারের মতো এক সঙ্গে তিন-তিনটে কপ্টারকে কীর্ণাহারের মাটিতে দেখে নে। এই সুযোগ আর পাবি না।’’

কেন, সে উত্তরও খোলসা করল জনতাই। বাবা নবকুমার দে’র হাত ধরে বিভিন্ন সময়ে প্রণববাবুকে দেখেছেন কীর্ণাহারের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা পেশায় গৃহশিক্ষক গোপাল দে। এ বার তিনি এক বছরের ছেলে রঙ্গনকে কাঁধে চাপিয়ে শুক্রবার ওই ব্যারিকেডের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘বাবা কর্নেল ছিলেন। সেই ছোটবেলা থেকে বাবার হাত ধরে চিনেছি প্রণববাবুকে। এ বার ছেলেকে চেনাতে এসেছি।’’ লাগোয়া মহেশপুর থেকে প্রতিবেশী ভাইপো, তৃতীয় শ্রেণীর পড়ুয়া জিতু থান্দারকে নিয়ে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনিও বাবার হাত ধরে চিনেছিলেন প্রণববাবুকে। কাফেরপুর থেকে ছোট ভাই, তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া মনিরুল খাঁকে সাইকেলে চাপিয়ে পাঁচ কিলোমিটার উজিয়ে এসেছিলেন কীর্ণহার গার্লস হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী লাভলি খাতুন। আসব, আসব করেও গেল বার আসতে পারেননি নিমড়া গ্রামের সান্ত্বনা বিবি, নুরপুরের জাবিলা বিবিরা। এ বার কপ্টার দেখে খুশি মনে বাড়ি ফিরেছেন তাঁরা। যেতে বললেন, ‘‘উনি আমাদের দিকে হাত নাড়লেন। খুব খুশি হয়েছি।’’

কপ্টার দেখার অভিজ্ঞতা কীর্ণহারবাসীর দীর্ঘ দিনের। রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভার সদস্য থাকাকালীন প্রায় প্রতি বারই পুজোর সময়ে কপ্টারে বাড়ি ফিরেছেন প্রণববাবু। তখন তাঁকে উড়িয়ে আনত একটি মাত্র কপ্টার। রাষ্ট্রপতি হওয়া ইস্তক তাঁকে নিয়ে আসে ভারতীয় বায়ুসেনার তিনটি কপ্টার। দীর্ঘ দিন ধরে কপ্টার দেখে দেখে মানুষের উৎসাহ কিছুটা ভাটা পড়েছিল। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে এক লপ্তে তিন-তিনটে কপ্টার দেখার আগ্রহে প্রথম বার ভিড় কিছুটা বাড়ে। তারপর থেকে ভিড়ে ভাটা পড়ছিল। এ বারের ছবিটা অবশ্য আলাদা। রাষ্ট্রপতির সফর ঘিরে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার ব্যবস্থাও ছিল।

এ দিন পৌনে চারটে নাগাদ কপ্টার মাটি ছুঁতেই, দৃপ্ত ভঙ্গিতে নেমে আসেন প্রণববাবু। তারপর হাত নাড়তে নাড়তে গাড়িতে গিয়ে ওঠেন। তারপরেই তাঁর কনভয় বেরিয়ে যায় লাগোয়া পরোটা গ্রামে দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। মন্ত্রী থাকার সময় থেকেই প্রণববাবু সস্ত্রীক এসে প্রথমে এই বাড়িতেই ওঠেন। তারপর সন্ধ্যায় মিরিটি পৌঁছন। রাতে অবশ্য দিদির বাড়িতেই ফিরে আসেন। অন্নপূর্ণাদেবী বলছেন, ‘‘গত বছরে পল্টুর স্ত্রী মারা যায়। তারপর তো একাই আসছে। আমরা এখনও শুভ্রার অভাব অনুভব করি।’’ পল্টুর প্রিয় আনন্দ নাড়ু ইতিমধ্যেই প্রস্তুত, জানাতে ভুললেন না তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

president
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE