Advertisement
১১ মে ২০২৪

বন কেটে বসত, লোকালয়ে উদ্ধার ময়াল

বৃহস্পতিবার ওই জঙ্গল থেকে ১৩ ফুট লম্বা একটি ময়াল জনবসতির দিকে আসতে দেখেন এলাকাবাসী। সেটিকে উদ্ধার করে তাঁরা আমরাসোঁতা ফাঁড়ির পুলিশের হাতে তুলে দেন। এলাকাবাসী জানান, এই জায়গায় গত এক বছরের মধ্যে অন্তত চার বার ময়াল উদ্ধার হল।

শীতলদাস কোলিয়ারি কর্মী আবাসন লাগোয়া এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

শীতলদাস কোলিয়ারি কর্মী আবাসন লাগোয়া এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০০
Share: Save:

ফের ময়াল উদ্ধার হল রানিগঞ্জের ৫ নম্বর শীতলদাস কোলিয়ারি কর্মী আবাসন লাগোয়া জঙ্গলে। কিন্তু বারবার এই এলাকায় কেন ময়াল দেখা যাচ্ছে, সেই প্রশ্নও উঠেছে এলাকায়।

বৃহস্পতিবার ওই জঙ্গল থেকে ১৩ ফুট লম্বা একটি ময়াল জনবসতির দিকে আসতে দেখেন এলাকাবাসী। সেটিকে উদ্ধার করে তাঁরা আমরাসোঁতা ফাঁড়ির পুলিশের হাতে তুলে দেন। এলাকাবাসী জানান, এই জায়গায় গত এক বছরের মধ্যে অন্তত চার বার ময়াল উদ্ধার হল। অনেক সময়ে ময়ালের আক্রমণে গৃহস্থের হাঁস, মুরগিও বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। দিন কয়েক আগে প্রায় ১৫ ফুটের একটি ময়াল ইসিএলের ক্রেনের তলায় পড়ে কাটাও যায় বলে জানান রাজু সাউ, মহেশ মোদীর মতো স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, তার পরে জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় এই ময়ালটিকে দেখা যাচ্ছিল। এ দিন রাজুবাবু বলেন, ‘‘সাপটির মুখে গামছা ছুঁড়ে দিতেই তা ঘোরাফেরা বন্ধ করে। তার পরে সেটিকে বস্তাবন্দি করা হয়।’’

কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন এই এলাকায় বারবার ময়াল উদ্ধার হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে বেশ কিছু বিষয় সামনে এসেছে। প্রথমত, এ বিষয়ে এলাকাবাসী ও বনকর্তাদের একাংশের মত, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় বনাঞ্চল কমেছে। ফলে ময়াল জঙ্গল ছেড়ে অনেক সময়েই লোকালয়ে চলে আসছে। রামপ্রবেশ প্রসাদ নামে বছর ৬৫-র এক প্রবীণ বলেন, ‘‘অতীতে এমন ঘটনা খুব একটা দেখিনি। কিন্তু গত পাঁচ বছরে লোকালয় থেকে ময়াল উদ্ধারের ঘটনা অনেক বেড়ে গিয়েছে।’’

কিন্তু বন্ধ খনি এলাকায় কেন বসতি বেড়েছে? এলাকাবাসীর একাংশের ব্যাখ্যা, খনি বন্ধ হলেও প্রাক্তন খনিকর্মীরা এলাকা ছেড়়ে যাননি। সেই সঙ্গে তাঁদের পরিবার বেড়েছে। শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ার কারণে বাইরে থেকে রুজির টানে লোক আসাও কমেনি। তাছাড়া এই এলাকা থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে জাতীয় সড়ক, দু’কিলোমিটার দূরে মূল রানিগঞ্জ শহর। ফলে রয়েছে যাতায়াতের সুবিধাও।

এলাকায় ময়াল দেখা যাওয়ার দ্বিতীয় কারণ হিসেবে প্রবীণ শ্রমিক নেতারা বলছেন, পুরনো বন্ধ খনি এলাকাগুলিতে ইসিএল কোনও রকম রক্ষণাবেক্ষণ করে না। ফলে সেই সব এলাকায় ঘন জঙ্গল তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিক জঙ্গলের পরিমাণ কমে যাওয়ায় লোকালয় লাগোয়া সেই খনি এলাকার জঙ্গলগুলিতেই ঠাঁই নিচ্ছে ময়ালগুলি। বন দফতরের পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য আধিকারিক মিলনকান্তি মণ্ডলও বলেন, “পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বর্ধমানের একাংশ রাঢ়ভূমি বলে পরিচিত। এখানকার পাথুরে জমিতে এই সাপগুলি বরাবরই ছিল। এখন, জেলার বিভিন্ন বন্ধ খনি ও কারখানায় এরা নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে বংশবিস্তার করছে। বছরখানেকের মধ্যে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় এই প্রজাতির ১৭টি ময়াল উদ্ধার হয়েছে।’’

এই পরিস্থিতিতে ইসিএলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শ্রমিক নেতৃত্ব। সিটু নেতা নবকুমার মিশ্র বলেন, ‘‘ইসিএল এই ধরনের এলাকাগুলির প্রতি উদাসীন। ফলে এমন ময়াল বার হওয়া, জঙ্গল হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা বেড়েই চলেছে।’’ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইসিএলের কর্তারা। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের কথায়, ‘‘আমরা সবরকম দায়িত্বই পালন করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Python Locality Raniganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE