Advertisement
১৭ মে ২০২৪

রক্ত বিক্রির চক্র চলছে, দাবি কর্তার

নার্সিংহোমে চিকিৎসকদের বসার ঘরের ফ্রিজে আপেল-ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গেই রয়েছে রক্তের প্যাকেট— জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর থেকে কিছুটা দূরের নার্সিংহোমে এই দৃশ্য দেখে থমকে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:১৫
Share: Save:

নার্সিংহোমে চিকিৎসকদের বসার ঘরের ফ্রিজে আপেল-ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গেই রয়েছে রক্তের প্যাকেট— জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর থেকে কিছুটা দূরের নার্সিংহোমে এই দৃশ্য দেখে থমকে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। খোসবাগান ও জিটি রোডের কিছু নার্সিংহোমেও মেয়াদ উত্তীর্ণ ডাঁই করা বিভিন্ন গ্রুপের নেগেটিভ রক্ত দেখা যায়। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষদের কাছে সদুত্তর না মিললেও স্বাস্থ্যকর্তাদের আশঙ্কা, রক্ত নিয়ে বড় কোনও চক্র কাজ করছে জেলায়। যার জন্য নেগেটিভ রক্ত জমিয়ে রাখা হচ্ছে।

মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ভাগে ভাগে বর্ধমান শহরের একাধিক নার্সিংহোম পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্যকর্তারা। রাতে তাঁদের রিপোর্ট দেখার পরে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় বলেন, ‘‘নিশ্চয় কোনও চক্র কাজ করছে। না হলে পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও নার্সিংহোমে শুধুমাত্র নেগেটিভ রক্ত মজুত করা হবে কেন? ওই সব রক্ত বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকেই বা নিয়ে আসা হবে কেন? এ তো মারাত্মক অপরাধ।” রাতেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুনেত্রা মজুমদারের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটিও গড়েন তিনি।

জানা দিয়েছে, স্বাস্থ্য কর্তারা জমানো রক্ত নিয়ে প্রশ্ন করলে কোনও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের জবাব, ‘রক্ত রোগীদের প্রয়োজনে আনা হয়েছিল। লাগেনি বলে রেখে দেওয়া হয়েছে।’ আবার কেউ বলেন, ‘বছরের পর বছর তো এটাই চলে আসছে।’ এর বেশি কোনও উত্তর মেলেনি তাঁদের কাছে। তবে রক্ত নিয়ে কোনও চক্র কাজ করছে কি না তা জানতে কয়েকটি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে বলেও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, রক্তের প্যাকেট বাইরে থেকে নিয়ে এসে মজুত করা হয়েছিল কেন, সচরাচর ওই সব নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত মেলে কি না, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই রক্ত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। তাঁরাই জানান, নিয়ম অনুযায়ী, রক্তের রিক্যুইজিশন দিয়ে ও রক্তের নমুনা দেখিয়ে নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্ত সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে সব ছাড়া রক্তের প্যাকেট ডাঁই হয়ে থাকে কী ভাবে, সে প্রশ্ন উঠছে। চড়া দামে রক্ত বিক্রির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিতে পারছেন না তদন্তকারীরা।

স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, বুধবার একেবারে প্রাথমিক স্তরে তদন্তের পরে যা তথ্য মিলেছে, তাতেই চোখ কপালে উঠে যাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের সঙ্গে এখানকার বেশ কিছু নার্সিংহোমের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। রোগী সাজিয়ে নিয়ম মেনে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন বলে দাম দিয়ে রক্ত নিয়ে আসা হয়। ওই সব নার্সিংহোমের দালাল রয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-সহ বেশ কয়েকটি নামী নার্সিংহোমেও। তাঁরা ঠিক রোগী খুঁজে নির্দিষ্ট নার্সিংহোমে ‘রক্ত আছে’ বলে নিয়ে যায়। তারপরে চড়া দামে সেই রক্ত বিক্রি করে দেওয়া হয়। আর সঠিক সময়ে রোগী না পাওয়া গেলে রক্তের প্যাকেট ফ্রিজের ভিতরেই মজুত থেকে যায়। সিএমওএইচ জানান, ফ্রিজের কাঁপুনিতে ওই সব রক্তের উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। ফলে রোগীর দেহে রক্ত দিলেও কাজে লাগে না। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার রোগী পরিবারকে সে সব রক্ত গছিয়ে দেওয়া হয়েছিল কি না, সে প্রশ্নও রয়েই গিয়েছে।

বর্ধমান শহরের নার্সিংহোম মালিকদের সংগঠনের এক নেতার কথায়, “একটা সময় ইউএসজি নিয়ে নানা রকম অনিয়ম উঠে আসত। নিয়মিত পরিদর্শনের জন্য এখন আর ইউএসজি ক্লিনিকের অনিয়ম সামনে আসে না। তেমনি নার্সিংহোমগুলিতেও নিয়মিত পরিদর্শন করা দরকার। নিয়মিত পরিদর্শন হয় না বলে ভয়ডরহীন হয়ে যার যা খুশি করছে।” ওই সংগঠনের একাধিক সদস্যেরও দাবি, ব্যাঙের ছাতার মতো শহরের চারিদিকে নার্সিংহোম গড়ে উঠছে। স্রেফ কাগজে-কলম দেখেই পরিকাঠামোহীন ভাবেই নার্সিংহোমগুলি খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে, যা হওয়ার সেটাই হচ্ছে। তদন্তের নেতৃত্বে থাকা বর্ধমানের ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুনেত্রা মজুমদার বলেন, “এ টুকু বলতে পারি, খুব বাজে অবস্থায় রয়েছে বর্ধমান।”

এ দিকে, আচমকা শহরের একাধিক নার্সিংহোম অভিযানের পরে স্বাস্থ্য দফতরের অভিযোগ মতো পারবীহাটার একটি নার্সিংহোমের সুমনকল্যাণ দাস ও নবাবহাট নার্সিংহোমের গোলাম সোহেল মোল্লাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের বুধবার আদালতে তোলা হলে বিচারক শর্তাধীন জামিন দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

blood racket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE