Advertisement
১৭ মে ২০২৪
কুলটি ওয়াগন কারখানা

নেতার আশ্বাসেও চালু হয়নি কাজ

বাধার মুখে কাজ আটকেই রইল কুলটি ওয়াগন কারখানায়। বুধবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আশ্বাস দিয়েছিলেন বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়-সহ এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু এ দিনও কারখানার গেটে শ্রমিক-কর্মীদের আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কুলটি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৬
Share: Save:

বাধার মুখে কাজ আটকেই রইল কুলটি ওয়াগন কারখানায়। বুধবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আশ্বাস দিয়েছিলেন বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়-সহ এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু এ দিনও কারখানার গেটে শ্রমিক-কর্মীদের আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তার পরেই তড়িঘড়ি দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিধায়ক। কারখানা কর্তৃপক্ষকে আশ্বাস দেন, আজ, বৃহস্পতিবার স্থানীয় কাউন্সিলররা কারখানার গেটে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ চালু করতে সাহায্য করবেন।

স্থানীয় লোক নিয়োগের দাবিতে শনিবার থেকে কারখানার গেটে বিক্ষোভ শুরু করেছেন এলাকার কিছু যুবক। অভিযোগ, তাঁদের বেশির ভাগই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিত। কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রথম তিন দিন শ্রমিক-কর্মীদের কিছুক্ষণ আটকে রেখে পরে কাজে যেতে দেওয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে কারখানায় ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছে না। ঢোকার চেষ্টা করলে মারধরের হুমকি, ধাক্কাধাক্কি করা হচ্ছে।

কারখানা কর্তৃপক্ষ পুলিশের পাশাপাশি বিধায়ক ও শাসক দলের নেতাদেরও বিষয়টি জানান। বুধবার থেকে অচলাবস্থা কাটানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন বিধায়ক। কিন্তু তা হয়নি। এ দিনও শ্রমিক-কর্মীরা কাজে গেলে গেটে আটকে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় হতাশ কারখানা কর্তৃপক্ষ ফের বিধায়ক-সহ তৃণমূল নেতাদের দ্বারস্থ হন।

এ দিন দলের নেতা ও এলাকার কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার থেকে যে কোনও উপায়ে কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নিয়োগ সংক্রান্ত দাবিদাওয়া থাকতেই পারে। তবে এ ভাবে উৎপাদন ব্যাহত করে কোনও আন্দোলন চলতে দেওয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান বের করতে হবে।’’ তিনি জানান, দলের কুলটি ব্লক সভাপতি মহেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের উপরে এ বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে বিধায়কের একটি প্রতিনিধি দল কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। সংস্থার ডিজিএম স্বপন বসু বলেন, ‘‘বিধায়কের উদ্যোগে আমরা খুশি। বৃহস্পতিবার থেকে কারখানার স্বাভাবিক উৎপাদন শুরু হলে আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচব।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মহেশ্বরবাবু জানান, কুলটির আট জন দলীয় কাউন্সিলরকে বৃহস্পতিবার সকালেই কারখানার গেটে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। থাকবেন দলের কর্মী-সমর্থকেরাও। মহেশ্বরবাবু বলেন, ‘‘আমাদের উপস্থিতিতে কারখানার কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন।’’

২০০৩-এর ৩১ মার্চ ইস্কোর কুলটি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তার জেরে এলাকার অর্থনীতি ক্রমশ ভেঙে পড়তে শুরু করে। ২০০৮-এর ২৫ ডিসেম্বর কারখানা ফের চালুর কথা ঘোষণা করেন তৎকালীন ইস্পাতমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান। কিন্তু সেই অর্থে উৎপাদন শুরু না হওয়ায় বাজার সে ভাবে চাঙ্গা হয়নি। ২০১০-এ সেল-রেলের যৌথ উদ্যোগে এখানে ওয়াগন কারখানা তৈরির প্রস্তাব আসতেই ঘুড়ে দাঁড়ানোর আশায় বুক বাঁধেন কুলটিবাসী। বছরে ১২০০ ওয়াগন তৈরির লক্ষ্যে বিনিয়োগ হয় প্রায় দেড়শো কোটি টাকা। গত বছর থেকে উৎপাদনও শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩২টি পুরনো রেক পুনর্নির্মাণ করে সরবরাহ হয়েছে। কাজ চলছে আরও ১৩টি রেকের। শ্রমিক-কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

এই অবস্থায় বারবার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন এলাকার বাসিন্দারাও। তাঁদের দাবি, এলাকায় ফের বাজারহাটের দিন ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু এ ভাবে বারবার বাধা দিয়ে কারখানার ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে ফেলে দিলে আবার অন্ধকার নেমে আসতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rail wagon project Wagon Factory Kulti
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE