পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে কয়লা কারবারের বরাত যে সিন্ডিকেট পেয়েছিল তার মাথাতেও নাকি রাজু ছিলেন। —ফাইল চিত্র।
কয়লা ব্যবসায়ী রাজু ঝা খুনের ঘটনায় নানা দিক থেকে ঝাড়খণ্ড-যোগ খুঁজে পাচ্ছে পুলিশের ১২ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। তদন্তে উঠে এসেছে, খুনের দিন ‘রহস্যজনক’ নীল গাড়িটিকে দেখা গিয়েছে ঝাড়খণ্ডেও। যেখান থেকে অনুমান করা হচ্ছে ঝাড়খণ্ডের ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে খুন করা হয় দুর্গাপুরের কয়লা ব্যবসায়ীকে। এ বার উঠে আসছে আরও নতুন তথ্য। সেখান থেকেই প্রশ্ন উঠছে, ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে কয়লার সিন্ডিকেট তৈরি করাই কি কাল হল রাজুর? সেখান থেকেই খুন হতে হল তাঁকে?
স্থানীয় মানুষদের বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, কয়লা কারবারিরা কয়লার কাজ করবেনই। সে যে ভাবেই হোক। কারণ, গত দু’তিন দশক ধরে যাঁরা এই কাজ করছেন, তাঁরা অন্য কাজে জড়াননি। কিন্তু ইডি, সিবিআই অথবা সিআইডি যে ভাবে আসানসোল-দুর্গাপুর কয়লা অঞ্চলে অভিযান চালাচ্ছে, তাতে অবশ্য শিল্পাঞ্চলে এই কারবারে ভাটা পড়েছে। এখন আসানসোল, দুর্গাপুর ইত্যাদি অঞ্চলের কয়লা কারবারিরা (কয়লা মাফিয়ারাও) পাড়ি জমাচ্ছেন ঝাড়খণ্ডে। সিন্ডিকেট তৈরিরও খবর মিলেছে। এ-ও জানা যাচ্ছে, প্রতিবেশী রাজ্যের কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে এ রাজ্যের কয়লা কারবারিদের একাংশের বৈঠকও হয়। তাতে সিদ্ধান্ত হয় ঝাড়খণ্ড থেকে যে কয়লা অবৈধ ভাবে উত্তোলন হবে, তা এ রাজ্যে আনার ব্যবস্থা হবে। আবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে ওই কয়লা ভিন্ রাজ্যে পাঠানোর জন্য উদ্যোগী হবে সিন্ডিকেট। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, এই কাজের বরাত যে সিন্ডিকেট পেয়েছিল, তার মাথাতেও নাকি রাজু ছিলেন। চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝিই নাকি সেই ব্যবসা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই আততায়ীদের গুলিতে প্রাণ গেল রাজুর। এই বিষয়ে আরও তদন্ত করার জন্য আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারের একটি দলের সঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের দল যৌথ ভাবে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা যাচ্ছে পুলিশেরই একটি সূত্রে।
অতি সম্প্রতি একাধিক বার ঝাড়খণ্ড থেকে আসা কয়লাবোঝাই লরি পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার পর বিভিন্ন থানার পুলিশ তা আটক করেছে। লরিচালকের গ্রেফতারেরও ঘটনা ঘটেছে। তবে এ সবই ছোটখাটো কারবার ছিল বলে জানাচ্ছে পুলিশ। তদন্তকারীদের একাংশ এ-ও জানাচ্ছেন, পাকাপাকি ভাবে রাজুদের সিন্ডিকেট এই কাজ শুরুর তোড়জোড় করেছিল। তাঁরা ১৬ এপ্রিল তারিখটিকে বেছে নেন কারবারের শুরুর দিন হিসেবে। তাই রাজু খুনের ঘটনায় সিন্ডিকেট-যোগের সম্ভাবনাও থাকতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
আশির দশকের শেষের দিক থেকে অবৈধ কয়লার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রাজু। ২০০৩-’০৪ সাল নাগাদ জয়দেব মণ্ডল, নারায়ণ নন্দা-সহ বেশ কয়েক জন রাজুর সঙ্গে ওই কারবারে জড়ান। এঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন সিবিআই, ইডির তদন্তের মুখে পড়েছিলেন। এঁদের কেউ কেউ জেলেও ছিলেন। বর্তমানে তাঁরা জামিনে মুক্ত। তবে রাজুর নতুন সিন্ডিকেটে ওই জয়দেব এবং নারায়ণ আর যোগ দেননি বলেই মনে করছে পুলিশ। রাজু খুনের তদন্তে এঁদের বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞেসাবাদও করা হয়েছে বলে খবর। তাতে জানা যায়, রাজু এখনকার কয়লা কারবারিদের নিয়ে নতুন সিন্ডিকেট তৈরি করে কাজ শুরু করছিলেন। পাশাপাশি চলছিল বালির সিন্ডিকেটের কাজ।
তদন্তে উঠে আসছে গরু পাচার মামলা কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের নজরে থাকা আব্দুল লতিফের কথাও। ভাইরাল ছবিতে (ওই ছবির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) দেখা গিয়েছে, রাজু খুনের দিন তাঁর গাড়িতে ছিলেন লতিফ। এ সব দিক খোলা রেখেই পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে। রাজু খুনের কিনারার জন্য আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট, পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ এবং সিআইডি সমান্তরাল ভাবে তদন্ত করছে। ঝাড়খণ্ড, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের পুলিশেরও সাহায্যে নেওয়া হচ্ছে বলে খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy