Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রস্রাবের সঙ্গে বার হচ্ছে ভাত! বিরল অস্ত্রোপচার বর্ধমান মেডিক্যালে

নানা পরীক্ষার পরে জানা যায়, বিরল রোগ ‘ইউরেটেরো ডিওডেনাল ফিসচুলা’য় আক্রান্ত রফিকুল। মঙ্গলবার নরেন্দ্রনাথবাবুর নেতৃত্বে দশ জন চিকিৎসকের একটি দল অস্ত্রোপচার করেন ওই যুবকের। আপাতত সুস্থ তিনি, দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। 

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৬
Share: Save:

অক্টোবরের মাঝামাঝি শল্য চিকিৎসক নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে এসেছিলেন বছর তেইশের এক যুবক। উপসর্গ, প্রস্রাবের সঙ্গে ভাত বার হচ্ছে। রোগীর দাবি যাচাই করতে তাঁকে ভাত খাওয়ান ওই চিকিৎসক। দেখেন, রোগীর দাবি ঠিক। সঙ্গে সঙ্গেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে নেওয়া হয় বর্ধমান শহর লাগোয়া নেড়োদিঘির বাসিন্দা শেখ রফিকুল ইসলামকে।

নানা পরীক্ষার পরে জানা যায়, বিরল রোগ ‘ইউরেটেরো ডিওডেনাল ফিসচুলা’য় আক্রান্ত রফিকুল। মঙ্গলবার নরেন্দ্রনাথবাবুর নেতৃত্বে দশ জন চিকিৎসকের একটি দল অস্ত্রোপচার করেন ওই যুবকের। আপাতত সুস্থ তিনি, দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

বর্ধমান মেডিক্যালের শল্য চিকিৎসা বিভাগের প্রধান নরেন্দ্রনাথবাবুর দাবি, গত একশো বছরে সারা বিশ্বে ১১টি এ ধরনের ‘কেস’ পাওয়া গিয়েছে। তিনি জানান, ১৯ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি হন রফিকুল। ‘সিটি ইউরোগ্রাফি’ করা হয় তাঁর। তাতে দেখা যায়, খাদ্যনালিতে ফুটো রয়েছে ওই যুবকের। ফলে, খাদ্যনালির নীচের অংশ ‘ডিওডেনম’ থেকে একটি সরু নালা তৈরি হয়ে কিডনির ‘ইউরেটর’ পর্যন্ত চলে গিয়েছে। সেই যোগসূত্র দিয়েই খাদ্যবস্তু চলে যাচ্ছে মূত্রথলিতে।

রফিকুলের মা নূরজাহান বিবি জানান, তিনি ও রফিকুল দু’জনেই শক্তিগড় জুটমিলের কর্মী। আট বছর বয়সে প্রথম ছেলের এই রোগ দেখা যায়। খাওয়ার পরে প্রস্রাব করলেই বেরিয়ে আসত ভাত বা অন্য খাবার। নূরজাহান বিবি বলেন, ‘‘তখন ভাবতাম, ছেলের গ্যাস-অম্বলের সমস্যা রয়েছে। বেশি করে জল খেতে বলতাম। ওই ভাবেই চলছিল। ইদানিং সমস্যা বাড়ে। কিছুই হজম করতে পারছিল না ছেলে।’’

এ দিন সকালে নরেন্দ্রবাবুর তত্ত্বাবধানে মধুসূদন চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য-সহ ছ’জন চিকিৎসক এবং চার জন অ্যানাস্থেটিস্ট দু’ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করেন। আপাতত সুস্থ ওই যুবক। রোগীর মামা নাজেমউদ্দিন মল্লিক বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের পরে, রফিকুলের সঙ্গে কথা হয়েছে। ও ভাল আছে।’’ পরিবারের দাবি, বাইরে এই অস্ত্রোপচারের জন্য প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ হবে বলা হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে বিনামূল্যে সমস্ত চিকিৎসা হয়েছে।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা বলেন, ‘‘ওই রোগী ১৫ বছর ধরে এই রোগে ভুগছিলেন। অনেক জায়গায়, তাঁকে মানসিক রোগী হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। আমাদের সিনিয়র সার্জেন নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় রোগটি ধরতে পারেন। গোটা বিশ্বেই এই রোগ বিরল। আমাদের চিকিৎসেকরা যে ভাবে কাজটা করেছেন, তা হাসপাতালের কাছে গর্বের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Burdwan Medical College And Hospital Operation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE