বিধানসভায় ধাক্কার পরে কালনার কিছু পঞ্চায়েতেও সিপিএমের ভাঙন অব্যাহত। পঞ্চায়েত সদস্যদের অনাস্থা আনা, দলত্যাগের কারণে এ বার কালনা ২ ও মন্তেশ্বরের একটি পঞ্চায়েত সিপিএমের হাতছাড়া হতে চলেছে।
শুক্রবার কালনা ২ ব্লকের বড়ধামাস পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ পাঁচ সিপিএম সদস্য চলতি পঞ্চায়েত বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা জমা দিয়েছেন। একই সঙ্গে ওই ছয় সিপিএম কর্মী দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চান বলেও ব্লক সভাপতির কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। মন্তেশ্বরের জামনা পঞ্চায়েতেও সিপিএমের আট সদস্য অনাস্থা এনে চিঠি পাঠিয়েছেন বিডিও-র কাছে।
গত পঞ্চায়েত ভোটে কালনা ২ ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূলের দখলে যায় সাতটি। এক মাত্র বড়ধামাস পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়ে সিপিএম। এখানে ১২টি আসনের মধ্যে ১১টিতেই জয়ী হন সিপিএম প্রার্থীরা। তবে এ বারের বিধানসভা ভোটে এই পঞ্চায়েতেও ভোট ব্যাঙ্কে ধাক্কা খায় সিপিএম। দুশোর বেশি ভোটে জয় পেলেও ১৫টি বুথের মধ্যে ৯টিতেই এগিয়ে যায় শাসক দল। তৃণমূল সূত্রের খবর, সম্প্রতি ওই পঞ্চায়েত সদস্যদের মধ্যে কয়েকজন তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। প্রধান মালতী মান্ডি-সহ পাঁচ জন বিডিও এবং তৃণমূলের ব্লক সভাপতিকে দলে যোগ দেওয়ার কথাও জানান। বাকি সদস্যদের মধ্যে সুফল রায়, মিতা মান্ডি, গোলক মান্ডি, প্রবীর সরকার অনাস্থা প্রস্তাবে সাক্ষর করেন। মাতিশ্বর এলাকা থেকে নির্বাচিত প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নে আকৃষ্ট হয়ে দলত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তৃণমূলের হাতে পঞ্চায়েত গেলে আরও ভাল পরিষেবা পাবেন এলাকার সাধারণ মানুষ।’’ তৃণমূল ব্লক সভাপতি প্রণব রায় বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী পঞ্চায়েত সম্পাদক ১৫ দিনের মধ্যে আস্থা ভোটের আয়োজন করবেন। আমরা নিশ্চিত তাতে সিপিএমের বোর্ড আর ক্ষমতায় থাকবে না।’’ উল্লেখ্য, এ দিন সিপিএমের পাঁচ সদস্য দলত্যাগ করায় এই পঞ্চায়েতে তৃণমূল সদস্যের সংখ্যা দাঁড়াল ছয়। অর্থাৎ সিপিএমে সঙ্গে সমান-সমান। প্রণববাবুর দাবি, ওই পাঁচ জন ছাড়া আরও দু’জন দলত্যাগের ইচ্ছা জানিয়েছেন। ফলে আস্থা ভোট নিয়ে তাঁরা চিন্তিত নন। তিনি আরও জানান, পঞ্চায়েতে তৃণমূল বোর্ড দখল করলেও প্রধান হিসাবে রেখে দেওয়া হবে মালতিদেবীকেই। ব্লকের একমাত্র দখলে থাকা পঞ্চায়েত হাতছাড়া হওয়ার খবর শুনে সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সম্পাদক সুকুল শিকদার বলেন, ‘‘ওই পঞ্চায়েতে কয়েকজন সদস্যের পদত্যাগ করার কথা কানে এসেছে। বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া চলছে।’’
মন্তেশ্বরের জামনা পঞ্চায়েতেও ১৮টি আসনের মধ্যে ১২টি পেয়েছিল সিপিএম। ছ’টি পায় তৃণমূল। বুধবার মন্তেশ্বর ব্লক অফিসে চলতি বোর্ডের বিরুদ্ধে সিপিএমের আট এবং তৃণমূলের ছয় সদস্য স্বাক্ষরিত একটি অনাস্থাপত্র জমা প়ড়ে। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা বিধায়ক সজল পাঁজা বলেন, ‘‘সোমবার আস্থা ভোট হবে। সিপিএম থেকে যাঁরা অনাস্থায় সই করেছেন তাঁদের মধ্যে উপপ্রধান বন্দনা দাসও রয়েছেন। আমাদের দলে যোগ দেওয়ারও আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। আস্থা ভোটের পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
সিপিএমের অবশ্য দাবি, চাপের মুখে পড়েই পঞ্চায়েত সদস্যেরা দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। দলের মেমারি ২ জোনাল কমিটির সম্পাদক অশেষ কোনার জানান, দলীয় পঞ্চায়েত সদস্যদের উপর শাসক দলের ব্যাপক চাপ ছিল। ফলে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন দলত্যাগ করতে। তাঁর দাবি, ‘‘শাসক দলের তাণ্ডবে ১২টি শাখা অফিস এবং তিনটি লোকাল কমিটির কার্যালয় এখনও খোলা যায়নি।’’ যদিও তৃণমূল এই দাবি মানতে চায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy