Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কাছারি রোডে গতি হারায় ব্যস্ত শহর, বাড়ছে দুর্ঘটনা

দু’বছরের বিউটিকে কোলে নিয়ে স্টেশন বাজার থেকে রিকশায় চড়ে আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন কাটোয়া ন্যাশনাল পাড়ার বাসিন্দা ময়না বিবি। যানজটে রিকশা থমকে যেতেই পিছন থেকে মোটরবাইকের ধাক্কা। কোলের শিশুকে নিয়েই হুড়মুড়িয়ে রিকশা থেকে পড়ে যান মহিলা। হাত-পায়ে অল্প চোট লাগলেও সে যাত্রা বরাতজোরে বেঁচে যান ওই বধূ।

একে রাস্তার উপর দোকান, তার উপর মোটরবাইক, গাড়িতে নিত্য যানজট।—নিজস্ব চিত্র।

একে রাস্তার উপর দোকান, তার উপর মোটরবাইক, গাড়িতে নিত্য যানজট।—নিজস্ব চিত্র।

সুচন্দ্রা দে
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৬ ০৭:৪২
Share: Save:

দু’বছরের বিউটিকে কোলে নিয়ে স্টেশন বাজার থেকে রিকশায় চড়ে আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন কাটোয়া ন্যাশনাল পাড়ার বাসিন্দা ময়না বিবি। যানজটে রিকশা থমকে যেতেই পিছন থেকে মোটরবাইকের ধাক্কা। কোলের শিশুকে নিয়েই হুড়মুড়িয়ে রিকশা থেকে পড়ে যান মহিলা। হাত-পায়ে অল্প চোট লাগলেও সে যাত্রা বরাতজোরে বেঁচে যান ওই বধূ।

শুধু ময়না বিবিই নন, কাটোয়ার বেশির ভাগ মানুষই নিত্য যাতায়াতে নাজেহাল। তাঁরাই জানান, নিত্য দিন যানবাহন, রিকশা, টোটোর ভিড়ে দুর্ভোগ নামে কপালে। দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সকাল হোক বা দুপুর যানজটে হাঁফায় কাটোয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে কাছারি রোড হয়ে পুরসভা মোড় পর্যন্ত রাস্তা। প্রশাসনের আশ্বাস, পুরসভা, ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কবে, তার নির্দিষ্ট উত্তর মেলে না।

শহর ঘুরে দেখা যায়, কখনও যেখানে সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা সাইকেলে ধাক্কা লাগছে পথচলতি স্কুলছাত্রীদের, কখনও যানজটে আটকে নির্দিষ্ট সময়ে হাসপাতালে পৌঁছতে পারছেন না রোগীরা। এমনকী বাসস্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে আসার পরে বাসগুলো যাত্রী তোলার জন্য রাস্তার মোড়ে প্রায় ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে। স্বাভাবিক ভাবেই পিছন থেকে আসা মোটরবাইক, সাইকেল, ম্যাটাডরের লাইন পড়ে যায়। অনেক সময় নিত্যযাত্রীদের মধ্যে বচসা, হাতহাতিও বাধতে দেখা যায় বলে জানা বাসিন্দারা।

শহরের ভিতরে ঢুকলে দেখা যায়, রেল গেট বন্ধ থাকলেই তৈরি হয় যানজট। স্টেশন বাজার চৌরাস্তা থেকে স্টেশন বাজার ধরে এগোতে চেষ্টা করলেও ভিড়ভাট্টা ঠেলে এগোনোটাই মুশকিল হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মুশকিল আরও বাড়িয়ে দেয় রাস্তার ধার ঘেঁষে থাকা বাজার ও সব্জির আড়ত। দেখা যায়, রাস্তায় উপরে দোকানগুলির সামনে প্রায় সময়েই পণ্যবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। কোথাও রাস্তায় পড়ে থাকে মালপত্র, কোথাও সাইনবোর্ড। যানজট বেড়ে যায় আরও। দোকানের সঙ্গে রাস্তার দু’ধারে জমে থাকে আবর্জনার স্তূপও। তার উপর রাস্তার খানা-খন্দ তো উপরি পাওনা। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্টেশন বাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ভেঙেচুরে গর্তে ভরে গিয়েছে। একটু বৃষ্টিতেই সেখানে জল দাঁড়িয়ে যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও অভিযোগ, বহুবার অভিযোগ করা সত্ত্বেও রাস্তা মেরামতে নজর নেই প্রশাসনের।

কাছারি রোডের ধারে আবার সমস্যা ভ্যান বোঝাই করে সব্জি-ফল বিক্রি। পথচলতি মানুষজনের অভিযোগ, ডিডিসি স্কুল লগোয়া এলাকায় যানজট সবচেয়ে বেশি। রাস্তার একদিকে বাজার, আর এক দিকে সব্জি, ফলের ঠেলাগাড়িতে বিপাকে স্কুলছাত্রী থেকে পথচারী সকলেই। হাসপাতালের সামনে গেলে দেখা যায়, অসংখ্য গাড়ি ও মোটরবাইক ছ়ড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে। রোগীর পরিজনদের একাংশের দাবি, হাসপাতালের কাছের বাজার কমপ্লেক্সটির কোনও পার্কিং এরিয়া নেই। ফলে ওখানকার কর্মী ও ক্রেতাদের গাড়ি হাসপাতালের মূল গেটের সামনেই থাকে। অনেক ক্ষেত্রে অ্যাম্বুল্যান্স যাতায়াতেও সমস্যা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরানো শহর হওয়ায় কাটোয়ার রাস্তা খুব একটা চওড়া নয়। অথচ মহকুমা শহর হওয়ায় প্রতিদিন নানা কাজে আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বহু মানুষ এ শহরে আসেন। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, আদালত যেখানেই দরকার, যেতে হয় কাছারি রোডের উপর দিয়ে। ব্যস্ত রাস্তায় দুর্ঘটনাও হয় প্রায়শই।

কাটোয়া মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির মুখপাত্র বিদ্যুৎকুমার নন্দীর কথায়, ‘‘ব্যবসায়ীরা যাতে দোকানের বাইরে মালপত্র না রাখেন সে জন্য সমিতির তরফে সতেচনতা মূলক লিফলেট বিলি করা হয়েছে। স্টেশন বাজারের সব্জি বিক্রেতাদেরও অনুরোধ করা হয়েছে যাতে তাঁরা রাস্তা থেকে সরে বসেন। তাতেও অবশ্য কোনও সুরাহা হয়নি।’’ তাঁর আর্জি, সকালে ব্যস্ততার সময়ে যদি অ্যাম্বুলেন্স ও অন্য গাড়ির যাত্রাপথ গোয়েঙ্কা মোড় দিয়ে ঘোরানো যায় তাহলে যানজটের সমস্যা খানিক মিটবে। প্রশাসন ও পুরসভাকে ধারাবাহিক ভাবে অভিযানেরও দাবি করেছেন তিনি। ওসি (ট্রাফিক) সংগ্রাম মোহিত জানান, বাসস্ট্যান্ড, স্টেশনবাজার, চৌরাস্তা, গোয়েঙ্কা মোড় ও পুরসভা মোড়ে ৪টে সিগন্যাল পয়েন্ট রয়েছে। ওখানে সিভিক পুলিশ ও হোমগার্ড থাকেন, যারা ট্রাফিক ব্যবস্থা সবসময় নজর রাখেন। তাঁর দাবি, ‘‘যতটা সম্ভবযানজট কমানোর চেষ্টা চলছে।’’ মহকুমাশাসক মৃদুল হালদারের কথায়, ‘‘ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে আগেও কথা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্টেশন বাজারের রাস্তা মেরামতির জন্য রেল কর্তৃপক্ষের সাথেও কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Car accident Pedestian
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE