Advertisement
E-Paper

পড়ুয়াদের টানে বদলি ছাড়লেন বাংলার স্যার

প্রতিদিনের মতো সোমবারও সকাল সকাল স্কুলে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। ঢুকতেই ঘিরে ধরে পড়ুয়ারা। এক আবদার, ‘‘স্যার এই স্কুল ছেড়ে যাবেন না। আমাদের ছেড়ে যাবেন না।’’ অক্লান্ত আবদারে, ভালবাসায় নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি ওই শিক্ষকও।

সুচন্দ্রা দে

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৬ ০০:৩১
মুুদাস্‌সর হোসেনকে ঘিরে উচ্ছাস পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র।

মুুদাস্‌সর হোসেনকে ঘিরে উচ্ছাস পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র।

প্রতিদিনের মতো সোমবারও সকাল সকাল স্কুলে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। ঢুকতেই ঘিরে ধরে পড়ুয়ারা। এক আবদার, ‘‘স্যার এই স্কুল ছেড়ে যাবেন না। আমাদের ছেড়ে যাবেন না।’’ অক্লান্ত আবদারে, ভালবাসায় নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি ওই শিক্ষকও। জানিয়ে দিলেন, ‘‘বদলি থাক, যতদিন চাকরি আছে এই স্কুলেই কাটাব।’’

সোমবার ওই ঘটনার সাক্ষী রইল মঙ্গলকোটের কাশেমনগরের নবাব আব্দুল জাব্বার উচ্চ বিদ্যালয়। কাটোয়ায় বাড়ির কাছে ঘোড়ানাশ উচ্চ বিদ্যালয়ে মিউচুয়াল ট্রান্সফার পেয়েও তা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলার শিক্ষক মহম্মদ মুদাসস্‌র হোসেন। দিন কয়েক আগেই রায়নার গোতানের এক প্রধান শিক্ষককে এভাবে আটকে দিয়েছিল পড়ুয়ারা। স্কুলের সময় ছাড়াও প্রত্যেক ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে, খুঁটিনাটি খোঁজ খবর নিয়ে যে আত্মীয়তা তৈরি করেছিলেন ওই শিক্ষক, তা ছাড়তে চায়নি পড়ুয়ারা।

এ দিনও খুদে শুভম অধিকারী, ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা জানায়, স্যার ক্লাসে ঢুকলে খেলা ছেড়েও মন বসত বইখাতায়। অঙ্ক, ইংরেজির পরে মুদাস্‌সর স্যারের বাংলা ক্লাস ছিল ফুরফুরে হাওয়ার মতো। তাই ছুটির পরেও কবিতাটা, গদ্যটা বুঝিয়ে দেওয়ার আবদারে স্যারকে ছাড়ত না গরিব খেতমজুর পরিবারের ছাত্ররা। স্যারও টিফিন বিরতিতেও বইখাতা নিয়ে বসে পড়তেন পড়ুয়াদের নিয়ে। এমনকী, প্রায়দিনই ক্লাস শেষে বিনা পয়সায় পড়াতে গিয়ে বাড়ি না গিয়ে স্কুলের একটা ঘরেই রাত কাটিয়ে দিতেন কাটোয়া স্টেডিয়াম পাড়ার বাসিন্দা ওই শিক্ষক। সপ্তম শ্রেণির প্রিয়া ঘোষ, নাজির শেখরা বলে, ‘‘স্যার পড়াতে গিয়ে খাবার কথাও ভুলে যেতেন। পরে প্রতিবেশীরা খাবার দিয়ে যেতেন।’’ জানা যায়, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে ছাত্রদের তৈরি করতে সকাল থেকে রাত খাটতেন ওই শিক্ষক।

স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্থানীয় দুঃস্থ কিছু কলেজ পড়ুয়ারাও ওই শিক্ষকের কাছে এসে পড়া বুঝে যান। গুসকরা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মৌসুমী বড়ালের কথায়, ‘‘স্কুলে পড়ার সময়েই উনি পড়ায় সাহায্য করতেন। বাংলা নিয়ে স্নাতক পড়ছি। এখনও প্রয়োজন হলে স্যারের কাছে যাই। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েরও কিছু ছাত্রছাত্রীও ওনার কাছে পড়তে আসে। কোনও দিন উনি পারিশ্রমিক চাননি।’’

এ হেন শিক্ষকের চলে যাওয়ার খবর শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল পড়ুয়াদের। এককাট্টা হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, যেভাবেই হোক স্যারকে যেতে দেওয়া যাবে না। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অনুরোধ করেন অভিভাবকেরাও। ফল যা হওয়ার তাই হয়। এত আবদার, আদর ফেলে যাওয়া যায়! বছর আটচল্লিশের মুদাস্‌সর হোসেন বলেন, ‘‘যাতায়াতের সুবিধার জন্যই ঘোড়ানাশ স্কুলে বদলি চেয়েছিলাম। কিন্তু ২৩ বছর ধরে এই স্কুলে পড়াচ্ছি। ওদের আবেগ দেখে আমি সিদ্ধান্ত বদল করেছি। প্রাথমিক ভাবে বিষয়টি পরিচালন সমিতিতে জানিয়েছি।’’

স্কুলের প্রধান শিক্ষক বৈদ্যনাথ সাহার কথায়, ‘‘উনি বরাবরই ছাত্রদের কাছে প্রিয়। উনি যেতে না চাইলে আমরা অবশ্যই ওনাকে রাখার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব।’’ পরিচালন সমিতির সভাপতি নারায়ণচন্দ্র নাগও বলেন, ‘‘স্কুল সার্ভিস কমিশনে আবেদন জানাব যাতে ওনার বদলি না হয়।’’

School student Teacher
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy