Advertisement
০৮ মে ২০২৪

সন্ধে হতেই নজরহীন খাদান, কমছে রাজস্বও

বালি খাদান থেকে একের পর এক ট্রাক বেরিয়ে আসছে। কিন্তু চেকপোস্টের ঝাঁপ বন্ধ বিকেল ৫টাতেই। এমনই দশা জেলার চার চেকপোস্টের। কারণ জিজ্ঞেস করলে কর্মীদের দাবি, বেআইনি বালির ট্রাক আটকাতে দিন কয়েক আগেই কাটোয়ায় প্রহৃত হয়েছিল সেচ দফতর ও পুলিশের যৌথ দল।

সন্ধে নামতেই বন্ধ চেকপোস্ট। কাটোয়ার জাজিগ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

সন্ধে নামতেই বন্ধ চেকপোস্ট। কাটোয়ার জাজিগ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
কাটোয়া শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:০২
Share: Save:

বালি খাদান থেকে একের পর এক ট্রাক বেরিয়ে আসছে। কিন্তু চেকপোস্টের ঝাঁপ বন্ধ বিকেল ৫টাতেই। এমনই দশা জেলার চার চেকপোস্টের।

কারণ জিজ্ঞেস করলে কর্মীদের দাবি, বেআইনি বালির ট্রাক আটকাতে দিন কয়েক আগেই কাটোয়ায় প্রহৃত হয়েছিল সেচ দফতর ও পুলিশের যৌথ দল। তারপর থেকেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন তাঁরা। ফলে সন্ধে নামতেই চেকপোস্ট বন্ধ করে যত দ্রুত সম্ভব পাততাড়ি গুটোচ্ছেন। এ দিকে বিকেলের পর পোস্ট বন্ধ থাকায় খাদানের নিরাপত্তার পাশাপাশি সরকারি রাজস্ব আদায়ও মার খাচ্ছে বলে সেচ দফতরের দাবি।

খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, বর্ধমানের কৃষক সেতু লাগোয়া পলেমপুর, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর বড়শূল, জামালপুরের চৌবেরিয়া এবং কাটোয়ার জাজিগ্রাম চেকপোস্ট চার জায়গারই একই হাল। কোথাও বিকেল ৫টা, কোথাও ৬টা বাজতেই তালা ঝুলছে দফতরে। কর্মীরা জানাচ্ছেন, উপর মহলের নির্দেশেই এমনটা করছেন তাঁরা। সেচ দফতরের ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়র (বালি) প্রদীপ চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে কাটোয়ার ঘটনার পর থেকেই চেকপোস্টগুলি বন্ধ রয়েছে। সশস্ত্র বাহিনি নির্দেশ আসার পরেই আবার সেগুলি রাতে খোলা হবে।’’ যদিও কবে সশস্ত্র বাহিনি আসবে বা কবে রাতে খুলবে চেকপোস্ট তার নির্দিষ্ট কোনও হদিস তিনি দিতে পারেননি।

গত ২৬ নভেম্বর রাতে সেচ দফতরের রেভিনিউ অফিসার মনসিজ গঙ্গোপাধ্যায় ও অমিতাভ চৌধুরীর নেতৃত্বে দফতরের ১৫ জন কর্মী ও চার জন পুলিশকর্মী যৌথ ভাবে প্রথমে কৈচরে অভিযান চালান। ২৭ নভেম্বর ভোরে কাটোয়ার নতুনগ্রামে একের পরে এক ট্রাক আটকায় সেচ দফতর। আধিকারিকেরা জানান, নতুনগ্রামে ট্রাক আটকানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই মহিলা-সহ প্রায় জনা চল্লিশ ঘিরে ধরে তাঁদের উপর চড়াও হয়। বাঁচাতে গিয়ে পুলিশের কপালেও জোটে রড-লাঠির ঘা। সরকারি কাজে বাধা ও মারধরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করে কাটোয়া থানার পুলিশ। সম্প্রতি আরও ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে প্রায় ২৩ হাজার টাকা, রসিদ বই, ২টি এটিএম কার্ড-সহ বেশ কয়েকটি জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এরপরেই নিরাপত্তার স্বার্থে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাটোয়া বালি খাদান বন্ধের নির্দেশ দেয় পুলিশ। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘বালি পাচারের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। পুলিশ সুপারকে এ ব্যাপারে অভিযানের জন্য বিশেষ বাহিনী গড়ার কথা বলা হয়েছে।” কিন্তু তারপর বালি খাদানের কাজকর্ম শুরু হলেও নজরদারির কোনও ব্যবস্থা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও দাবি, কোনও নজরদারি না থাকায় সহজেই অতিরিক্ত পরিমাণ বালি নিয়ে যাতায়াত করছে ট্রাকগুলি।

চেকপোস্টের নিরাপত্তার ছবিটা ঠিক কেমন? জাজিগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারাই জানান, সকালে দু’জন লাঠিধারী পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারের দেখা মেলে। রাতে থাকেন মাত্র দু’জন বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষী। সেচ দফতরের একটি অংশের দাবি, ওই এলাকায় দিনভর সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। নিরাপত্তার অভাবে নিয়মিত অভিযানও চালানো যাচ্ছে না বলে সেচ দফতরের একটি সূত্রের দাবি। কাটোয়ার ওই চেকপোস্টের তহসিলদার ধনঞ্জয় ঘোষ ও আরও এক কর্মী সিরাজুল হকের যদিও দাবি, দফতর থেকেই বিকেলের পর ঝাঁপ বন্ধ করতে বলা হয়েছে।

যদিও পুলিশ জানিয়েছে, সেচমন্ত্রীর কথামতো অভিযান চালানোর জন্য বিশেষ বাহিনি গড়া হয়েছে। তবে চেকপোস্টগুলিতে ২৪ ঘণ্টা পাহারা দেওয়ার সশস্ত্র পুলিশকর্মী বহাল করার কোনও নির্দেশ এখনও আসেনি।

প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাভাবিক অবস্থায় দিনভর রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ থাকে দেড় লক্ষ টাকারও বেশি। রাতেই বেশি রাজস্ব আদায় হয় বালি খাদান থেকে। এখন তা দাঁড়িয়েছে মোটে হাজার চল্লিশে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বালির লরি মূলত রাতেই বেশি যাতায়াত করে। তাই রাজস্ব মার খাচ্ছে।

শুক্রবার গলসির পারাজে বালির গাড়ি যাতায়াতে রাস্তা খারাপ হয়ে যাচ্ছে দাবি তুলে লরি আটকে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে বিকেল নাগাদ পুলিশ ও গ্রামবাসীরা মিলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত বালির গাড়ি চলবে না ওই রাস্তায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

security lapse katwa sand mines tax decline
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE