—প্রতীকী চিত্র।
ছাত্র ভর্তির অনুমোদন বাতিল হয়ে গিয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার বেশ কয়েকটি বিএড কলেজের। যার ফলে শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হতে চলেছেন দুই জেলার অন্তত ২৫ হাজার শিক্ষার্থী। আপাতত আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানের আশায় রয়েছেন পড়ুয়ারা থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
জুলাই থেকে বিএড কলেজগুলির শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়। কলেজগুলি আগে অফলাইনে ছাত্র ভর্তি নেয়। পরে অনলাইনে ভর্তির ‘লিঙ্ক’ খুললে, সেখানে আনুষ্ঠানিক ভাবে ছাত্র ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কিন্তু একাধিক অনিয়মের অভিযোগে গত মাসে রাজ্যের ২৫৩টি বেসরকারি বিএড কলেজের অনুমোদন বাতিল করে বি আর আম্বেডকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটি (রাজ্যের বিএড বিশ্ববিদ্যালয়)। সেখানে পূর্ব বর্ধমানের ৩৪টি বিএড কলেজের ২০টি এবং পশ্চিম বর্ধমানের ১৩টির মধ্যে ৭টির নাম রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত ওই কলেজগুলিতে ভর্তির অনলাইন ‘লিঙ্ক’ ওয়েবসাইটে উপলব্ধ নয়। পোর্টালে নাম না ওঠায় অফলাইনে ভর্তি হওয়া ছাত্রেরা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া হিসেবে গণ্য হচ্ছেন না। এখন ভর্তির অনুমোদন বাতিল হওয়ায় কয়েক হাজার বিএড পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বছরের পর বছর ‘অনিয়ম’ করেই কলেজগুলি চলছিল। বিশ্ববিদ্যালয় চেপে ধরলে ‘নিয়ম মানতে বাধ্য থাকব’, এ রকম মুচলেকা দিয়ে পার পেয়ে যেত কলেজগুলি। এ বছর ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব টিচার এডুকেশন’ (এনসিটিই)-এর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। নিয়ম না মানা কলেজগুলিকে অনুমোদন দেওয়া যাবে না বলেও এনসিটিই-র তরফে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হয়। এর পরেই রাজ্যের ৬২৪টি বিএড কলেজের মধ্যে ২৫৩টির ভর্তির অনুমোদন বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়। দুই বর্ধমান, বীরভূম ও হুগলি জেলার মোট ৬২টি কলেজ দু’বছর আগেও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনে চলত। বর্ধমানের কাজিরডাঙা, কাটোয়া ও কালনার কলেজ ছাড়া বাকি ৫৯টি কলেজ এখন বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে গিয়েছে।
মূলত কী কী অভিযোগে ওই সমস্ত বিএড কলেজের অনুমোদন বাতিল হল? জানা গিয়েছে, এনসিটিই প্রতিটি কলেজ ভবনের জন্য দমকলের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছিল। ২০১৪ সালের বিধি অনুযায়ী, কলেজগুলিকে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতেই হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বেশির ভাগ কলেজ সে ছাড়পত্র নেয়নি। দমকলের দাবি, প্রতিটি কলেজের ছাদে ন্যূনতম ১০ হাজার লিটারের জলের ট্যাঙ্ক বসাতে হবে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প ও কলেজের সামনে জলাধার রাখার কথা বলা হয়েছিল। ছ’মাস সময় দেওয়া হলেও, অনেক কলেজ দমকলের ছাড়পত্র পায়নি। আবার, এনসিটিই-র বিধি অনুযায়ী, একটি বিএড কলেজে ৫০ জন পড়ুয়া পিছু ৮ জন শিক্ষক থাকতে হবে। এই নিয়মও অনেক কলেজ মানেনি। শিক্ষকদের বেতন সরাসরি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে দেওয়াও বাধ্যতামূলক। সে নিয়মেরও বালাই নেই অনেক কলেজে।
দুর্গাপুরের শিক্ষার্থী সায়ন্তিকা দত্তের কথায়, ‘‘একটি বিএড কলেজে ২০২৩-২৫ শিক্ষাবর্ষে অফলাইনে ভর্তি হয়েছিলাম। নভেম্বরে এসে জানলাম, ওই কলেজের অনুমোদন বাতিল হয়ে গিয়েছে। টাকাও গেল, বছরটাও নষ্ট হলে মনে হচ্ছে। কী হবে, বোঝা যাচ্ছে না।”
অনুমোদন বাতিল হওয়ায় এই কলেজগুলির শিক্ষকদের চাকরি নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বর্ধমানের বেসরকারি বিএড কলেজের শিক্ষকদের একাংশের দাবি, ভর্তির অনুমোদন বাতিল হওয়ার পরেই কর্মীদের ছুটি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কয়েক জন শিক্ষক এখনও টিকে রয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘ছাত্র না থাকলে আমাদেরও তো বেতন দেওয়া হবে না। আমরা চাই, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক। ছাত্রদের ভবিষ্যতের যেমন ক্ষতি হবে, তেমনই আমাদের মতো অনেকে হঠাৎ বেকার হয়ে যাবেন।”
বিএড কলেজের মালিকদের সংগঠন ‘ইউনাইটেড ফোরাম’-এর রাজ্য সভাপতি তপন বেরা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যে সব কলেজ নিয়ম মেনে নথি জমা দিতে পারবে, তাদের অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ চিন্তাভাবনা করবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy