Advertisement
E-Paper

Asansol: বন্ধ সাইকেল কারখানা নিয়ে চর্চা শহরে

৯০-এর দশক থেকে উৎপাদন কমতে থাকে। ২০০২-এর ১৮ জানুয়ারি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৪২
বর্তমানে সেন-র‌্যালে কারখানা এমনই খণ্ডহরে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে সেন-র‌্যালে কারখানা এমনই খণ্ডহরে পরিণত হয়েছে। ছবি: পাপন চৌধুরী।

লুধিয়ানা থেকে প্রতি বছর পড়ুয়াদের জন্য ১০ লক্ষ সাইকেল কিনতে হয় রাজ্য সরকারকে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে সাইকেল কারখানা গড়তে প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির থেকে আগ্রহপত্র চেয়েছে রাজ্য সরকার। এর পরেই বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন আসানসোলের বন্ধ সেন-র‌্যালে সাইকেল কারখানাটি এবং সেটির জমির ভবিষ্যৎ নিয়ে চর্চা শুরু করেছে। পাশাপাশি, শ্রমিক নেতৃত্বের গলায় এই বন্ধ কারখানাটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে আক্ষেপও ঝরে পড়েছে।

রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের অবশ্য দাবি, আইনি কারণে, এখন ওই বন্ধ কারখানার জমি হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রণে আছে। আইনি জটিলতা কাটাতে কেন্দ্রকেই তোড়জোড় করতে হবে। পাশাপাশি, মলয়ের সংযোজন: “আসানসোলে সাইকেল কারখানা হতেই পারে। সে জন্য ওই কারখানার জমির বদলে অন্যত্রও জমি পাওয়া যাবে। কোনও অসুবিধা হবে না।”

কারখানার প্রাক্তন শ্রমিকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বিলেতের র‌্যালে কারখানার সহযোগিতায় শিল্পোদ্যোগী সুবীর সেন এবং পরে তাঁর ছেলে অভিজিৎ ও সঞ্জয় সেনের উদ্যোগে এশিয়ার বৃহত্তম ও অন্যতম প্রাচীন সাইকেল কারখানা হিসাবে এটি তৈরি হয়। ১৯৫১-য় শুরু হয় কারখানার উৎপাদন। প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মী এক সময় কাজ করতেন এখানে। এই কারখানায় উৎপাদিত ‘র‌্যালে’, ‘রবিনহুড’, ‘হাম্বার’, ‘বলাকা’ ইত্যাদি নামের সাইকেল একসময় ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে তো বটেই, বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও পাঠানো হত।

সিটু অনুমোদিত ‘সাইকেল কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া’র র‌্যালে শাখার নেতা রথীন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৭৫-এ কারখানার পরিচালন বিভাগটি এবং ১৯৮০-তে পুরো কারখানাটিই অধিগ্রহণ করে। নতুন নাম হয় ‘সাইকেল কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড’। কিন্তু কারখানার স্বাস্থ্য ফেরেনি। ৯০-এর দশক থেকে উৎপাদন কমতে থাকে। ২০০২-এর ১৮ জানুয়ারি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।

এই কারখানার জমিতে নতুন শিল্প-স্থাপনের চেষ্টা একেবারে যে হয়নি, তা-ও নয়। আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সিটুর পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীর দাবি, ২০০৯-এ কারখানার ৩১৪ একর জমি ৩২ কোটি টাকায় সংশ্লিষ্ট অছি পরিষদের থেকে এডিডিএ কিনতে চেয়েছিল। সাইকেল কারখানা-সহ শিল্পতালুক তৈরির পরিকল্পনাও ছিল তাঁদের। কিন্তু ২০১১-র পরে বিষয়টি নিয়ে আর কিছু হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। বংশগোপালের সংযোজন: “যাবতীয় আইনি জটিলতা কাটিয়ে রাজ্য সরকার যদি এই কারখানার জমি অধিগ্রহণ করে, তাহলে শিল্পাঞ্চলের অর্থনীতি উপকৃত হবে।”

যদিও, রথীনের অভিযোগ, “রাজ্যে নতুন সাইকেল কারখানার কথা বলা হচ্ছে। অথচ, এই গর্বের শিল্প প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে খণ্ডহরে পরিণত হয়েছে। দুষ্কৃতীরা নির্মাণ ভেঙে ফেলেছে। সব কিছু চুরি করে নিয়ে গিয়েছে।” পাশাপাশি, বিএমএস-এর আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়েরও অভিযোগ, “কেন্দ্র সবসময় চায়, শিল্প হোক। রাজ্যে একের পর এক শিল্প বন্ধ হয়েছে। সেন-র‌্যালের জমিতে নতুন শিল্প তৈরি করা গেলে, অবশ্যই তা ভাল হয়। কিন্তু এই রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমাদের কাছে সাহায্য চাইলে, আমরা সবরকম ভাবে প্রস্তুত।” যদিও, রাজ্য শিল্পায়নে উদ্যোগী বলেই নতুন সাইকেল কারখানার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনটাই দাবি আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটকের।

জেলায় নতুন সাইকেল কারখানার সম্ভাবনার দিকটি দেখছেন শিল্পোদ্যোগীরাও। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব স্মল ইন্ড্রাস্টিজ়’-এর সহ-সভাপতি সন্দীপ ভালোটিয়া জানান, জেলায় চারটি ইস্পাত কারখানা আছে। সাইকেল তৈরির অন্যতম কাঁচামাল ইস্পাত। ফলে, জেলায় অবশ্যই সাইকেল কারখানা তৈরি করা যাতে পারে, তা সে সেন-‌র‌্যালের জমিতেই হোক, বা অন্য জমিতে। আর তা বাস্তবায়িত হলে সাইকেলের বিভিন্ন অংশ তৈরি করে উপকৃত হবেন ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীরাও।

Cycle factory Asansol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy