Advertisement
০১ মে ২০২৪
Raju Jha

নজর সীমানায়, প্রশ্ন দুই গাড়ির আসা-যাওয়ায়

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর থেকে রাজু ঝা, ব্রতীন মুখোপাধ্যায়েরা রওনা দেন ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ। এ

পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানার ডুবুরডিহি চেকপোস্টে তল্লাশি। ডান দিকে, বাঁশকোপা টোলপ্লাজ়ায় তদন্তে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানার ডুবুরডিহি চেকপোস্টে তল্লাশি। ডান দিকে, বাঁশকোপা টোলপ্লাজ়ায় তদন্তে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত বণিক, সুব্রত সীট
দুর্গাপুর, কুলটি শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:২১
Share: Save:

কয়লা কারবারি রাজেশ ওরফে রাজু ঝা খুনের ঘটনায় বিহার, ঝাড়খণ্ড বা উত্তরপ্রদেশের ভাড়াটে খুনিরা জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তবে কোন পথে তারা এ রাজ্যে ঢুকেছিল, সে নিয়ে এখনও ধন্দ রয়েছে। তবে ঝাড়খণ্ড সীমানায় ডুবুরডিহিতে ঘটনার দিন ভোরে ঝাড়খণ্ডের দিকে যেতে এবং দুপুরে এ রাজ্যে ফিরে আসতে দেখা গিয়েছে নীল গাড়িকে, সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দু’টি ছবি (আনন্দবাজার সেগুলির সত্যতা যাচাই করেনি) ঘিরে এমন দাবি উঠেছে। পুলিশ সূত্রে অবশ্য তার কোনও সত্যতা স্বীকার করা হয়নি। তবে অতীতেও খনি-শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন খুনের ঘটনায় দেখা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে এসে ‘অপারেশন’ সেরে চলে গিয়েছে আততায়ীরা। এই পরিস্থিতিতে, ডুবুরডিহি চেকপোস্ট-সহ সীমানা এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর থেকে রাজু ঝা, ব্রতীন মুখোপাধ্যায়েরা রওনা দেন ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ। একটি সূত্রের দাবি, রাজুর গাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে পুরসভা মোড়ে একটি ভয়াবহ বাঁক নিয়ে বিপজ্জনক গতিতে বেরোয় নীল গাড়িটি। রাজুদের গাড়িকে বাঁশকোপা টোলপ্লাজ়া পেরোতে দেখা যায় সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিট নাগাদ। তার মিনিট দুয়েক পরেই চোলপ্লাজ়া পেরোয় নীল গাড়িটি, জেনেছেন তদন্তকারীরা।

রাজু খুনের পরে পুলিশ শক্তিগড় থানার কাছ থেকে আততায়ীদের ব্যবহৃত নীল গাড়িটি উদ্ধার করে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যদি বিহার, ঝাড়খণ্ড বা উত্তর প্রদেশ থেকে আততায়ীরা এসে থাকে, তবে তারা কোন পথে সীমানা পেরিয়ে এ রাজ্যে ঢুকেছিল, তা স্পষ্ট নয়। পুলিশের নানা সূত্রের দাবি, ঝাড়খণ্ড থেকে এ রাজ্যে ঢোকার সহজ পথ বরাকরের ডুবুরডিহি ও বেগুনিয়া চেকপোস্ট, রূপনারায়ণপুরের বিহার রোড এবং বারাবনির রুনাকুড়া ঘাট। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, এই চার জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে ওই গাড়িটির কোনও তথ্য সেখানে মেলার কথা মানতে চায়নি পুলিশ। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুধীরকুমার নীলকান্তম বলেন, ‘‘তদন্তের বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান পুলিশকে সব রকম সাহায্য করা হচ্ছে।’’

রাজু খুনের ঘটনার পরেই পশ্চিম বর্ধমান জেলার সীমানা এলাকায় কড়া পুলিশি নজরদারি শুরু হয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, রামনবমী উপলক্ষে অনেক আগে থেকেই সীমানায় নাকাবন্দি চলছে। পুলিশ আধিকারিকেরা জানান, শিল্পাঞ্চলে এর আগে যত খুনের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলির অনেক ক্ষেত্রেই ঝাড়খণ্ড বা বিহারের দুষ্কৃতীদের জড়িত থাকার খোঁজ মিলেছে। সম্প্রতি আসানসোল সেনর‌্যালে রোড লাগোয়া এলাকায় নিজের হোটেলে খুন হন হোটেল ব্যবসায়ী অরবিন্দ ভগত। তার তদন্তে নেমেও পুলিশ ঝাড়খন্ড ও বিহারের দুষ্কৃতীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি।

পুলিশ আধিকারিকদের অনেকের মতে, অপরাধ ঘটিয়ে সীমানা পেরিয়ে যদি ভিন্‌ রাজ্যে চলে যাওয়া যায়, তবে আর তাদের নাগাল পাওয়া সহজ হবে না বলে আততায়ীরা মনে করে। সে কারণে পুলিশের তরফে জেলার সীমানা অঞ্চলের নজরদারিতে জোর দেওয়া হয়। রাজু খুনের ঘটনার পরে সেই নজরদারি কয়েক গুণ বাড়ানো হয়। বুধবারও সীমানা পারাপারের চার এলাকায় কড়া নজরদারি দেখা গিয়েছে। পুলিশ জানায়, বিভিন্ন গাড়ি, মোটরবাইকের ডিকিও খুলে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সূত্রে বুধবার জানা গিয়েছে, রাজু খুনের আততায়ীরা যে নীল গাড়িতে এসেছিল, সেটি দিল্লির জনকপুরী থেকে জানুয়ারিতে চুরি যায় বলে জানা গিয়েছে। সেটির মালিক গুরুগ্রামের বাসিন্দা।তবে নীল গাড়ি ছেড়ে আততায়ীরা সাদা গাড়িতে করে পালিয়েছে, এমন সম্ভাবনার তথ্য মিলেছে। সে কারণে নীল গাড়িটি কোন পথে এসেছিল, সে রহস্যভেদের থেকে, সাদা গাড়িটি কোন পথে পালিয়ে গেল, তার খোঁজে এখন বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। (তথ্য সহায়তা: সৌমেন দত্ত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Raju Jha Border Area Jharkhand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE