Advertisement
E-Paper

দুষ্কৃতী ঠেকাতে কড়া নজরদারি রাজ্য সীমানায়

আন্তঃরাজ্য সীমানার এ পারে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের তিন শহর— কুলটি, চিত্তরঞ্জন ও রূপনারায়ণপুর। ওপারে ঝাড়খণ্ডের মিহিজাম, জামতাড়া, নিরশা। সীমানা লাগোয়া শহরগুলির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে সম্প্রতি রাতের ঘুম উড়ছে পুলিশের।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০৩
চেকপোস্ট: ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে। ছবি: শৈলেন সরকার

চেকপোস্ট: ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে। ছবি: শৈলেন সরকার

ঝড়-জলের রাতে সদর দরজায় খিল এঁটে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে দোতলার ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন কুলটির হিল কলোনির এক খনি আধিকারিক। সকালে ঘুম ভেঙে দেখেন, পিছন দিকে জানালার গ্রিল কেটে ফেলা হয়েছে। ঘরের সিন্দুক, আলমারি ভেঙে চুরি করে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। গত জুন মাসের ওই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ কয়েকজনকে ধরে। জানা যায়, দুষ্কৃতীরা ছিল ঝাড়খণ্ডের। এর মাস কয়েক আগেই রূপনারায়ণপুরের গ্রিনপার্ক অঞ্চলে ঠিক একই কায়দায় হয়েছিল লুঠপাট। সে চুরিতে জড়িত অভিযোগে ধৃতেরাও ঝা়ড়খণ্ডের।

আন্তঃরাজ্য সীমানার এ পারে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের তিন শহর— কুলটি, চিত্তরঞ্জন ও রূপনারায়ণপুর। ওপারে ঝাড়খণ্ডের মিহিজাম, জামতাড়া, নিরশা। সীমানা লাগোয়া শহরগুলির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে সম্প্রতি রাতের ঘুম উড়ছে পুলিশের। রাজ্য পুলিশের দাবি, ঝাড়খণ্ডের পুরনো দুষ্কৃতীরা এ পারে ঢুকে অপরাধ করে সহজেই সীমানা টপকে নিজেদের এলাকায় গিয়ে গা-ঢাকা দিচ্ছে। এক বার ঝাড়খণ্ডে চলে যেতে পারলেই আইনি জটিলতায় সহজে তাদের নাগাল পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে ভিন্-রাজ্যের উচ্চপদস্থ পুলিশ-আধিকারিকদের অনুমতি নিয়ে তবেই অভিযান শুরু করা যায়। আবার এমনও দেখা যাচ্ছে, ঝাড়খণ্ডে অপকর্ম করে দুষ্কৃতীরা পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে এসে লুকিয়ে থাকছে।

গত বছরের গোড়ায় নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ চিত্তরঞ্জন রোড লাগোয়া অঞ্চল থেকে দুই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কারবারি হারুন আনসারি ও আইনুল মিয়াকে গ্রেফতার করেছিল। সূত্রের দাবি, তাদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, রূপনারায়ণপুরের কানগুই পাহাড় লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া, মিহিজাম এবং পশ্চিমবঙ্গের হাসিপাহাড়ি, ঘিয়াডোবা, গোবরগাদা এলাকায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করা হচ্ছে। বিহারের জামুই বা মুঙ্গের থেকে ওই সব অস্ত্র এই এলাকায় ঢুকছে।

ঝাড়খণ্ডের অপরাধীদের ‘সুপারি’ দিয়ে এ রাজ্যে ঢুকিয়ে খুন করানোর ঘটনাও রাজ্য পুলিশের অজানা নয়। চলতি বছরের ১০ অগস্ট কুলটি থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে খুন হন স্থানীয় এক মহিলা। তদন্তে নেমে পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত দু’জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানতে পারে, ওই মহিলা স্থানীয় এক দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে থানায় নালিশ জানিয়েছিলেন। সেই আক্রোশেই তাঁকে ঝাড়খণ্ডের অপরাধী দিয়ে খুন করানো হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার কয়েক মাস আগে কুলটি কলেজ রোড এলাকায় এক জমি কারবারিকে গুলি করা হয়। তাঁর স্ত্রীকে থেঁতলে খুন করা হয়। সে ঘটনাতেও নাম উঠে আসে ঝাড়খণ্ডের ‘সুপারি কিলার’দের।

এই পরিস্থিতিতে আন্তঃরাজ্য সীমানা ঘেঁষা শহরগুলিতে নিরাপত্তার কড়াকড়ি করতে চাইছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাড়াতে দুই রাজ্যের সীমান্তবর্তী থানাগুলির নিয়মিত যৌথ বৈঠকের ব্যবস্থা হয়েছে। সম্প্রতি রূপনারায়ণপুরে আয়োজিত এ রকমই একটি বৈঠকে দুই রাজ্যের পুলিশ কর্তারা যোগ দিয়েছিলেন। সীমানা অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একাধিক সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। দুষ্কৃতীদের সীমানা ডিঙানোর খবর দেওয়া-নেওয়া করার জন্য দুই রাজ্যের পুলিশ-কর্তাদের একটি যৌথ ‘হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ’ও তৈরি করা হয়েছে। নিরাপত্তায় কড়াকড়ির খাতিরেই কুলটি-বরাকরের সীমানা বরাবর প্রায় ৫০টি সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট টিভি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। রূপনারায়ণপুর, চিত্তরঞ্জনেও আরও ৫০টি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।

Miscreants Border Police Surveillance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy