যাবেন-না: শিক্ষককে আর্জি বিকিহাট স্কুলের খুদেদের। নিজস্ব চিত্র
আড়াই বছর ধরে কচিকাঁচাগুলোকে সন্তানের মতো আগলে রেখেছিলেন যিনি, সেই ‘স্যার’ চলে যাবেন— এটা মানতে পারেননি অভিভাবকরা। স্যারের যত্ন, পড়ানো ভুলতে পারেনি পড়ুয়ারাও। সেই স্যারকে রেখে দেওয়ার নাছোড় দাবিতে স্কুলে তালা ঝোলাল ছাত্রেরা। তাতে প্রশ্রয় রইল অভিভাবকদেরও। শুক্রবার এমনটাই হল কাটোয়ার বিকিহাট অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
সতেরো বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন একাইহাটের বাসিন্দা বছর আটত্রিশের হীরক বিশ্বাস। শ্রীখণ্ড মুসলিম অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণ সময়ের শিক্ষকতা করার সময়ই বছর আড়াই আগে একমাত্র সহকারি শিক্ষিকা মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়ায় বিকিহাট পশ্চিমপাড়া বিদ্যালয়ে ‘স্টপগ্যাপে’ শিক্ষকতা শুর করেন হীরকবাবু। তিনি যখন স্কুলে আসেন তখন ছাত্রসংখ্যা ছিল মেরেকেটে জনা পনেরো। এখন সেটা ষাটেরও বেশি।
কী করে সম্ভব হল?
অভিভাবক বৈশাখী মাঝি, মামনি সর্দাররা জানালেন সেই কথাই। তাঁদের কথায়, ‘‘আমাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে ডেকে আনেন উনি। প্রতিদিন খোঁজ নিতেন বাড়িতে কে কেমন পড়াশোনা করছে।’’ কোনও ছাত্রছাত্রী অসুস্থ হলে বাড়ি গিয়ে তার খোঁজ নিতেন হীরকবাবু। পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতেন। অভিভাবকদের বলতেন চায়ের দোকানে নয়। ছাত্রদের জায়গা হল স্কুল। এ ভাবেই স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরাতে পেরেছিলেন হীরকবাবু। মুখ থুবড়ে পড়া মিড-ডে মিলও সচল করেন তিনি। নিজের উদ্যোগে পাশের বিশ্বশূক সেবাশ্রম সঙ্ঘের কুড়ি জন অনাথ শিশুকে স্কুলে আনেন তিনি। নিজের খরচায় ছাত্রদের নিয়ে ‘এডুকেশনাল ট্যুরে’ ঘোরান বর্ধমানের সায়েন্সসিটি। স্কুলে শিক্ষা সংসদও চালু করেন। বিকিহাট স্কুলের রাঁধুনি সোনালি দত্ত, মানসী বন্দ্যোপাধায়রা বলেন, ‘উনি আমাদের বেতনও দ্বিগুণ করানোর ব্যবস্থা করেন। ২০ জন অনাথশিশুর মিড-ডে মিলের ভারও উনি নিয়েছিলেন।’’
বিকিহাট স্কুলে দু’জন নতুন শিক্ষক আসায় বিদ্যালয় পরিদর্শকের আদেশে বুধবার থেকে হীরকবাবু ফিরে যান তাঁর পুরোনো স্কুল শ্রীখণ্ড মুসলিম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপরেই ‘হীরক স্যারকে ফেরাতে হবে’ দাবিতে বেঁকে বসে বিকিহাটের ৬৩ জন পড়ুয়া। বিকিহাটের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মল্লিকা মণ্ডল বলেন, ‘‘ওনারা দাবি লিখিত ভাবে জানালে এসআইকে জানাব। তবে স্কুল তালা বন্ধ রাখা যাবে না।’’ কাটোয়া পশ্চিম চক্রের স্কুল পরিদর্শক জানবাজ শেখ জানাচ্ছেন, লিখিত দাবি পেলে হীরকবাবুকে ওই স্কুলে ফেরানোর বিষয়ে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় কাউন্সিলে জানাব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy