Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্রের মৃত্যু, ঘেরাও-বিক্ষোভ

এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে প্রায় দশ ঘণ্টা স্কুল ও শিক্ষকদের ঘেরাও, বিক্ষোভ চলল আউশগ্রামের জামতাড়ায়। অভিযোগ, ঘেরাও তুলতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে আউশগ্রাম থানার পুলিশও। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার বিকেলে ওই গ্রামে র‌্যাফ নামাতে হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ছাত্রের নাম রাকেশ মাঝি (১৫)। জামতাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সে।

জামতাড়া স্কুলের সামনে পুলিশের পাহারা। নিজস্ব চিত্র।

জামতাড়া স্কুলের সামনে পুলিশের পাহারা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫৬
Share: Save:

এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে প্রায় দশ ঘণ্টা স্কুল ও শিক্ষকদের ঘেরাও, বিক্ষোভ চলল আউশগ্রামের জামতাড়ায়। অভিযোগ, ঘেরাও তুলতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে আউশগ্রাম থানার পুলিশও। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার বিকেলে ওই গ্রামে র‌্যাফ নামাতে হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ছাত্রের নাম রাকেশ মাঝি (১৫)। জামতাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সে। বর্ধমানের মহকুমাশাসক (সদর) অরুণ রায় বলেন, “পরিস্থতি এখন স্বাভাবিক। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র‌্যাফ রয়েছে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার দুপুরে। ওই দিন জামতাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেণির মধ্যে একটি প্রদর্শনী ফুটবল প্রতিযোগিতা ছিল। তাতে জয়ী হয় দশম শ্রেণির ছাত্রেরা। কিন্তু নবম শ্রেণির পড়ুয়ারা অভিযোগ করে, অফসাইড থেকে গোল করে দশম শ্রেণিকে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে মাঠে হট্টগোলও শুরু করে দেয় তারা। গোলমাল বেধে যায় দু’দলের। গোলমাল থামাতে এগিয়ে আসেন স্কুলেরই এক শিক্ষক। অভিযোগ, ওই শিক্ষকের উদ্দেশে অশ্লীল মন্তব্য করে সোয়াতা গ্রামের রাকেশ। ওই শিক্ষক মাঠে তাকে মারধর করেন। পরে প্রধান শিক্ষকের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। বুধবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে মৃত ছাত্রের বাবা, পেশায় ভ্যান চালক ষষ্ঠী মাঝি অভিযোগ করেন, “প্রধান শিক্ষকের ঘরেও আমার ছেলেকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ওর পিঠে মারের দাগ ছিল।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, খেলার পরে বিকেলে রাকেশের অভিভাবকদের স্কুলে ডাকা হয়। মা লক্ষ্মীদেবী ছেলের দোষ মেনে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে মুচলেকাও দেন। ক্ষমা চায় রাকেশও। অভিযোগ, এরপরেও প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মীদেবীকে অপমান করেন। রাকেশকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। ষষ্ঠীবাবুর অভিযোগ, “নিজের ও মায়ের অপমান সহ্য করতে না পেরে আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে।”

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাজার থেকে কীটনাশক কেনে রাকেশ। পরে ওই কীটনাশক পান করে আত্মঘাতী হয়। রাতে গ্রামের একটি পুকুর পাড় থেকে তাকে তুলে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বুধবার সকাল ৮টা নাগাদ সেখানেই মারা যায় সে। পরে খবর জানাজানি হতে জামতাড়া ও সোয়াতা গ্রামের বাসিন্দারা স্কুলের সামনে জড়ো হতে থাকেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও ক্রীড়া শিক্ষক দু’জনেই স্কুলে আসেননি। গ্রামবাসীরা সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত তাঁদের স্কুলে আসার দাবি তোলেন। পরে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ১২ জন শিক্ষক ও ২ জন অশিক্ষক কর্মচারীকে একটি ঘরে তালাবন্ধ করে রাখা হয়। ওই পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ও শিক্ষকদের শাস্তির দাবিও করেন তাঁরা। গ্রামবাসীদের দাবি, “ওই শিক্ষকদের জন্যই একটা প্রাণ গেল। গরিব ছেলেটির পরিবারের জন্য স্কুলের শিক্ষকেরা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করুক।’’

ঘেরাওয়ের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পুলিশকে ঘিরেও গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখান বলে অভিযোগ। পরে বিকেল নাগাদ পরিচালন সমিতির, পুলিশ মিলে গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করার পরে ঘেরাও ওঠে। এক পুলিশ কর্মী বলেন, “শিক্ষকদের বেরোতে কেউ বাধা দেয়নি, তবে স্কুলের সামনে এনেকে জোট বেঁধে বসেছিলেন। ফলে অনেকেরই বেরোতে রাত হয়ে যায়।’’ শিক্ষকদের অভিযোগ, সোয়াতা গ্রামের পাশ দিয়ে স্কুলে আসার সময়েই গ্রামবাসীরা তাঁদের উপর হামলা করে। চড়-থাপ্পর মেরে হেনস্থাও করা হয়। তাঁদের দাবি, ‘‘পড়ুয়ারা যাতে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছয় সে ব্যবস্থা করতেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও স্কুলে আসি।’’

জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “মৃত ছাত্রের পরিবারকে অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে মামলা রুজু করা হবে।” তবে ওই দুই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। প্রধান শিক্ষকের ফোন বন্ধ ছিল। অন্য শিক্ষককে ফোন করা হলে বলা হচ্ছিল, “বাড়িতে নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ausgram Student suicide police agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE