Advertisement
০২ মে ২০২৪

‘ও ডাইনি’ শুনে ফিরলেন কর্তারা

ও ডাইনি। ওরা বাড়ি ফিরলে এলাকা ছাড়ব’’ — হুঁশিয়ারি দিলেন গ্রামের কয়েক জন। কুসংস্কারের এই দৃশ্যটা ‘পূর্ণ সাক্ষর’ জেলা বর্ধমানের কালনার বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতের কেশবপুর গ্রামের।

ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একাংশ।  —নিজস্ব চিত্র।

ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একাংশ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৬ ০১:২১
Share: Save:

‘‘ও ডাইনি। ওরা বাড়ি ফিরলে এলাকা ছাড়ব’’ — হুঁশিয়ারি দিলেন গ্রামের কয়েক জন। কুসংস্কারের এই দৃশ্যটা ‘পূর্ণ সাক্ষর’ জেলা বর্ধমানের কালনার বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতের কেশবপুর গ্রামের। ডাইনি অপবাদে বাড়ি ছাড়া বধূ ও তাঁর পরিবারকে ঘরে ফেরাতে গিয়ে শনিবার গ্রামবাসীদের একাংশের মুখে এমন কথাই শুনলেন প্রশাসনের কর্তারা।

কালনা সদর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে কেশবপুর গ্রাম। সেখানেই দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন কোঁড়া সম্প্রদায়ের ১৮টি পরিবার। গ্রামে স্কুল থাকলেও শিক্ষার আলো তেমন ভাবে এই পরিবারগুলির মধ্যে পড়েনি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, সমস্যার সূত্রপাত মাস চারেক আগে। অশুভ শক্তি মাথা চাড়া দেওয়ার কারণে রোগ ছাড়াচ্ছে, ঘটছে মৃত্যুর ঘটনাও— এমনই বিভিন্ন অজুহাতে খেতমজুর পরিবারের ওই বধূকে ডাইনি সাব্যস্ত করেন ওই সম্প্রদায়ের কয়েক জন। বধূ জানান, স্বামী, ছেলে ও দুই নাতিকে গ্রামে কার্যত একঘরে করে দেওয়া হয়। এমনকী জল পর্যন্ত নিতে দেওয়া হয়নি। শেষমেশ বাধ্য হয়ে বাড়ি ছাড়ে বধূর পরিবার। সপ্তাহ খানেক আগে বধূকে বাড়ি ফেরাতে গ্রামে যান কালনা ১ ব্লকের বিডিও অসীমকুমার নিয়োগী। কিন্তু কোঁড়াপাড়ার বাসিন্দারা জানিয়ে, ‘ওই ঘরকে গ্রামে নেব না।’

বধূকে বাড়ি ফেরাতে শনিবার ফের জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু, মহকুমাশাসক নিতীন সিংহানিয়া, এসডিপিও ওয়াই রঘুবংশী, কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রাবণী পাল, বিডিও অসীমবাবু ও কালনা থানার ওসি গ্রামে যান। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ গ্রামের স্কুল চত্বরে গ্রামবাসীদের একাংশের সঙ্গে শুরু হয় বৈঠক। ছিলেন বধূর স্বামী ও যাঁরা বধূকে ‘ডাইনি সাব্যস্ত’ করেছেন, তাঁরাও।

বৈঠকে প্রশাসনের কর্তারা বোঝানোর চেষ্টা করেন, গোটা বিষয়টাই কুসংস্কার। দেবুবাবু বলেন, ‘‘ত্রিশ বছর আগে দাদু যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন আমারও এমনটা মনে হয়। পরে জানতে পারি দাদু হৃদরোগে মারা গিয়েছেন। ডাইনি বলে কিছু হয় না।’’ কিন্তু এ সব কথা কানে তোলেননি কোঁড়া পাড়ার বাসিন্দাদের একাংশ। রীতিমতো উত্তেজিত ভঙ্গিতে কয়েক জন বলে ওঠেন, ‘‘ও তো ডাইনি। আমরা আমাদের সামাজিক নিয়ম মেনে চলব।’’ বৈঠক শেষে হতাশ মুখে বধূর স্বামী আক্ষেপ করেন, ‘‘সকলের সামনেই এই। কোন্ সাহসে বাড়ি ফিরব। ভিটে বিক্রি করে দিতে হবে।’’ বধূ জানান, এই পরিস্থিতিতে নবম শ্রেণিতে পড়া ছেলের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। টান পড়েছে রুজিতেও।

যদিও মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে। আশা করি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’’ গ্রামের কয়েক জন অবশ্য বধূটির পাশেও দাঁড়িয়েছেন। তেমনই এক জন ইন্দ্রজিৎ মজুমদার বলেন, ‘‘ওঁরা যাযাবরের মত ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’’ গ্রামে সচেতনতা প্রচার করা হবে বলে জানান বিজ্ঞান মঞ্চের কালনা শাখার সম্পাদক সঞ্জীত সেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

witch
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE