Advertisement
০৭ মে ২০২৪

প্রার্থী নয় প্রতীক, স্লোগান বদল তৃণমূলে

প্রার্থী নয়, প্রতীকে ভোট দিন— প্রচারের শেষ লগ্নে কালনায় এই স্লোগানকে অস্ত্র করেই এগোতে চাইছে তৃণমূল। তবে বিরোধীদের দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের প্রভাব যাতে ভোটবাক্সে না পড়ে তা সামলাতেই এই ছক। এমনিতে প্রতীককে সামনে রেখে ভোট চাওয়া বামেদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। কিন্তু এ বার ভোটের প্রচারের এক সপ্তাহ বাকি থাকতে আচমকা শাসকদল কেন সেই নীতি নিল, সে প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৭
Share: Save:

প্রার্থী নয়, প্রতীকে ভোট দিন— প্রচারের শেষ লগ্নে কালনায় এই স্লোগানকে অস্ত্র করেই এগোতে চাইছে তৃণমূল। তবে বিরোধীদের দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের প্রভাব যাতে ভোটবাক্সে না পড়ে তা সামলাতেই এই ছক।

এমনিতে প্রতীককে সামনে রেখে ভোট চাওয়া বামেদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। কিন্তু এ বার ভোটের প্রচারের এক সপ্তাহ বাকি থাকতে আচমকা শাসকদল কেন সেই নীতি নিল, সে প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে। ভোটারেরাও প্রথা ভাঙা প্রচারে বিস্মিত। তৃণমূলের একাংশের দাবি, এমনিতেই এক ওয়ার্ডের নেতা অন্য ওয়ার্ডে প্রচারে যাচ্ছেন না। পুরভোটের আগে বিরোধ যাতে আরও না বাড়ে তা সামাল দিতেই এই সিদ্ধান্ত। যদিও তৃণমূল নেতাদের দাবি, ‘‘আমাদের দল উন্নয়নের প্রতীক। তাই সেই উন্নয়নের প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্যই মানুষকে আবেদন জানাচ্ছি।’’

কালনা, মেমারি, দাঁইহাট ও কাটোয়া—এই চার পুরসভাতেই কমবেশি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। প্রার্থীতালিকা তৈরির সময় থেকেই তা স্পষ্ট। চার পুরসভা থেকেই একাধিক গোষ্ঠী প্রার্থীদের নামের তালিকা জমা দেয়। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরেও বিভিন্ন গোষ্ঠীর ক্ষোভ সামনে আসে। তাই বিরোধীরা এ নিয়ে সরব হওয়ার আগেই নিজেদের ঘর সামলাতে দল এই কৌশল নিয়েছে দল বলে দাবি তৃণমূলেরই একাংশের।

জেলার গ্রামীণ এলাকায় ভোটের দায়িত্বে রয়েছেন জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের ক্ষুদ্র, কুটির শিল্প এবং প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। প্রচার শুরুর আগেই তাঁর নির্দেশে দলের চার পুর এলাকার জন্য পাঁচ জন পর্যবেক্ষক বাছা হয়। কালনার দায়িত্ব পান জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু এবং কালনা ২ ব্লকের দলীয় সভাপতি প্রণব রায়। দাইহাটের দায়িত্ব পান পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়, মেমারির দায়িত্ব জামালপুরের বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিকের এবং কাটোয়া পুরসভার দায়িত্বে পান কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়। দলীয় সূত্রে খবর, পর্যবেক্ষকরা পুর এলাকাগুলিতে কাজে নেমে প্রথমেই বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। চেষ্টা করা হয়, সবাইকে একত্রিত করে পথে নামানোর। তবে আলোচনায় দ্বন্দ্ব না মেটায় পাঁচ পর্যবেক্ষকই কড়া বার্তা দেওয়া শুরু করেন বলে দলের কর্মীদেরই দাবি। নেতাদের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়, পুরভোটে অন্তর্ঘাত মানেই দলে কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হবে। প্রয়োজনে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে। কালনা পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা দেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা গোপাল তেওয়ারি। পরে অবশ্য সিদ্ধান্ত বদলে যায় তাঁর। তিনি জানিয়ে দেন, পুরনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না তিনি। তবে নির্ল হিসেবে নেওয়া জোড়া পাতার প্রতীকটি তাঁর নামেই রয়ে যায়। শুধু গোপালবাবুই নন, উপর মহলের চাপে অনেক নেতাই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে দলীয় মিটিং মিছিলে হাঁটতে শুরু করেন। জেলা সভাপতি দেবুবাবু বলেন, ‘‘যাঁর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের কোনও প্রমাণ মিলবে ভোটের গণনার পরে তাঁর আর কোনও জায়গা থাকবে না দলে। আশা করি আমাদের নেতা-কর্মীরা সে রাস্তায় হাঁটবেন না।’’

তবে যতই কড়া বার্তা থাকুক কিছু কিছু জায়গায় অন্য ওয়ার্ডের নেতাদের দেখা মিললেও তাঁদের অনুগামীদের দেখা যাচ্ছে না। তৃণমূলের একাংশের দাবি, এ সব কারণেই প্রচারের শেষ দিকে স্ট্র্যাটেজি বদলাচ্ছে দল। বৃহস্পতিবার থেকেই ‘প্রার্থী নয়, প্রতীক দেখে ভোট দিন’ স্লোগানকে সামনে রেখে মেমারি পুরসভায় প্রচার শুরু করেছেন স্বপন দেবনাথ। দাইহাট ও কালনাতেও একই স্লোগানকে সামনে রেখে প্রচার সারেন তিনি। শুক্রবার স্বপনবাবু বলেন, ‘‘কে, কোথায় লড়ছেন সেটা বড় কথা নয়। আমাদের দলের প্রতীক উন্নয়নের। মানুষকে তাই উন্নয়নের প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য আমরা আবেদন জানাচ্ছি।’’ স্বপনবাবুর দাবি, তৃণমূলের পুরবোর্ড কোথায় কি কি উন্নয়নের কাজ গত পাঁচ বছরে করেছে তাও ভোটারদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। যেমন, কালনায় তুলে ধরা হচ্ছে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য লাইট অ্যান্ড শ্যাডো প্রকল্প, ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পানীয় জলের প্রকল্পের মতো বিষয়গুলি।

যদিও শেষ বেলার এই বদলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি অন্য দলগুলি। বিজেপির বর্ধমান পূর্ব এলাকার জেলা সভাপতি রাজীব ভৌমিক বলেন, ‘‘আসলে নিজেদের প্রার্থীদের উপরে যে তৃণমূলের ভরসা নেই তা এই স্লোগানই বলে দিচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘শাসকদলের গোষ্ঠীকলহ দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছেন সাধারণ মানুষ। পুরভোটের আগে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও মানুষ তা বরদাস্ত করবে না।’’ সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বামপন্থীরা বরাবরই দলের প্রতীকেই ভোট চান। কিন্তু তৃণমূলের এভাবে ভোট চাওয়া বিস্ময়কর। দলীয় প্রার্থীদের প্রতি হয়ত ওঁদের আস্থা নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE