Advertisement
০৭ মে ২০২৪

শহরের মনের নকশা ফুটছে ট্যাটুতে

দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের কল্পতরু বিল্ডিং-এর একটি ট্যাটু পার্লার। কলেজ-ফিরতি বছর একুশের এক যুবক হাতে আঁকিয়ে নিচ্ছেন ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারাবিয়ান সি’ ফিল্ম থেকে একটি চরিত্রের ছবি। বিকেলের হাঁটা সারছিলেন দুর্গাপুরের বছর ষাটের এক ভদ্রলোক। অল্প ঠাহর করলেই নজরে আসে, তাঁর গায়ে কার মুখের ছবি। এই বয়সে হঠাৎ ট্যাটু? ভদ্রলোকের জবাব, ‘‘নাতির মুখ। আসলে নাতিকে সব সময় কাছে রাখতে চাই তো, তাই আঁকিয়ে নিয়েছি।’’

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৫ ১৭:২৭
Share: Save:

দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের কল্পতরু বিল্ডিং-এর একটি ট্যাটু পার্লার। কলেজ-ফিরতি বছর একুশের এক যুবক হাতে আঁকিয়ে নিচ্ছেন ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারাবিয়ান সি’ ফিল্ম থেকে একটি চরিত্রের ছবি।

বিকেলের হাঁটা সারছিলেন দুর্গাপুরের বছর ষাটের এক ভদ্রলোক। অল্প ঠাহর করলেই নজরে আসে, তাঁর গায়ে কার মুখের ছবি। এই বয়সে হঠাৎ ট্যাটু? ভদ্রলোকের জবাব, ‘‘নাতির মুখ। আসলে নাতিকে সব সময় কাছে রাখতে চাই তো, তাই আঁকিয়ে নিয়েছি।’’

বছরখানেক আগেও ট্যাটু দেখা যেত কিছু অল্পবয়সী ছেলেমেয়ের গায়ে। শহরে ট্যাটু পার্লারও তেমন ভাবে গজিয়ে ওঠেনি। ট্যাটু করানোর শখ হলে যেতে হত কলকাতায়। অথচ এখন দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার এলাকাতেই রয়েছে পাঁচটি ট্যাটু পার্লার। প্রতি সপ্তাহে সেখানে অন্তত তিন-চারজন করে ট্যাটু করাতে আসছেন। ট্যাটু করানোর খরচও নাগালের মধ্যে রেখেছেন পার্লার মালিকেরা। জাতীয় সড়কের পাশের একটি পার্লারের মালিক প্রসেনজিৎ দাস ও বিশ্বজিৎ দাস জানালেন, সাধারণত ঘণ্টার হিসেবে টাকা নেওয়া হয়। খরচ দেড় হাজার টাকা থেকে থেকে শুরু।

ট্যাটু করাতে তরুণদের পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলের প্রবীণেরাও যথেষ্ট উৎসাহী। তবে পার্থক্য রয়েছে ট্যাটুর বিষয় নির্বাচনে। রানিগঞ্জের মেঘদূত বাগচি, দুর্গাপুরের পিন্টু নায়কদের মতো কয়েকজন তরুণের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, কমবয়েসিদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে মেসি, নেইমার থেকে শুরু করে হাল আমলের ‘মমি’ বা ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ জাতীয় হলিউডি সিনেমার চরিত্রের ছবি। রয়েছে হাল আমলের বিভিন্ন নকশাও। আবার অনেকের পছন্দ ব্লকের উপর বিশেষ ধরনের ট্যাটু-ছবিও।

ট্যাটু ফ্যাশানে পিছিয়ে নেই মেয়েরাও। যেমন উখরার বাসিন্দা চাঁদনি পাঠক বাঁ হাতে নকশা আঁকিয়েছেন। কথা বলে জানা গেল, রীতিমতো ফ্যাশন ম্যাগাজিনের পাতায় ঢুঁ মেরেই পছন্দের ট্যাটু-নকশা বেছে নিয়েছেন চাঁদনি।

তবে প্রবীণদের কাছে ট্যাটু ‘ফ্যাশন স্টেটমেন্ট’ নয় তেমন ভাবে। নিতান্ত ব্যক্তিগত কারণেই তাঁদের ট্যাটু আঁকানো। যেমন, আসানসোলের বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর প্রৌঢ় বলেন, ‘‘বছর কয়েক আগে স্ত্রী মারা গিয়েছেন। ওঁর ছবি সঙ্গে থাকলে মনে হয় ও পাশেই রয়েছে।’’

তবে ট্যাটু আঁকানোর সময় কয়েকটি বিষয়ে সতর্কতা দরকার বলে জানান পার্লার মালিকেরা। প্রথমত, পুরো প্রক্রিয়াটি ‘স্বাস্থ্যসম্মত’ হওয়া দরকার। এই কারণে ট্যাটু করার জন্য ব্যবহৃত সূচগুলিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে আর ব্যবহার করা যায় না। তা ছাড়া ব্যবহারের আগে বিশেষ উপায়ে জীবাণুমুক্তও করতে হয় সেগুলিকে।

ট্যাটু করাতে এলে কিন্তু ধৈর্য ধরে বসে থাকাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। একটি ট্যাটু সম্পূর্ণ করতে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় লাগতে পারে। স্থায়ী ট্যাটু করাতে হলে বছর তিন-চার পরে ফের আঁকাতে আসতে হয়।

ট্যাটু নিয়ে অনেক ডাক্তারবাবুদের অবশ্য খুঁতখুঁতানি রয়েই গিয়েছে। যেমন, দুর্গাপুরের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ শর্মিষ্ঠা দাস বলেন, ‘‘চামড়ার উপর বাইরে থেকে কিছু করা হলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকেই যায়। ট্যাটু এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।’’ তবে এমন সতর্ক বার্তা নিয়েই আজকের দুর্গাপুর পৌঁছে যাচ্ছে ট্যাটু পার্লারে। সেখানেই ফুটে উঠছে শহরের মনের নকশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE