Advertisement
০৭ মে ২০২৪

শিক্ষকের দ্বারস্থ হয়ে বিয়ে রুখল ছাত্রী

আসানসোল ওল্ড স্টেশন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সাউ সঙ্গে-সঙ্গেই খবর দেন প্রশাসনের কর্তাদের। বৃহস্পতিবার ছাত্রীটির বাবাকে স্কুলে ডেকে পাঠিয়ে দু’জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বোঝানো হয়। পরে প্রধান শিক্ষকের কাছে তিনি নাবালিকা মেয়ের বিয়ে না দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে মুচেলকা দেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৭ ০৭:৩০
Share: Save:

দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছাত্রীকে অঝোরে কাঁদতে দেখে এগিয়ে গিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। কী হয়েছে প্রশ্ন করতেই ছাত্রীটি বলেছিল, ‘‘বাবা বিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু আমি তো আরও পড়তে চাই।’’

আসানসোল ওল্ড স্টেশন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সাউ সঙ্গে-সঙ্গেই খবর দেন প্রশাসনের কর্তাদের। বৃহস্পতিবার ছাত্রীটির বাবাকে স্কুলে ডেকে পাঠিয়ে দু’জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বোঝানো হয়। পরে প্রধান শিক্ষকের কাছে তিনি নাবালিকা মেয়ের বিয়ে না দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে মুচেলকা দেন।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সব সময় হাসিখুশি দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীটিকে বুধবার থমথমে মুখে দেখে সহপাঠীদের সন্দেহ হয়। প্রশ্ন করতেই সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সব শোনার পরে সহপাঠীরাই তাকে প্রধান শিক্ষকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘ছাত্রীটি জানায়, রবিবার পাত্রপক্ষ তাদের বাড়িতে আসবে। তাই তার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সে জন্য তড়িঘড়ি প্রশাসনের দ্বারস্থ হই।’’ ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ করার পরে মহকুমাশাসক (আসানসোল) প্রলয় রায়চৌধুরী দুই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সোমনাথ দত্ত ও সায়ন্তন বসুকে বিষয়টি দেখার পরামর্শ দেন।

এ দিন মেয়েটির বাবাকে স্কুলে ডেকে পাঠান প্রধান শিক্ষক। চলে আসেন দুই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটও। প্রধান শিক্ষকের অফিসেই মেয়েটির বাবাকে বোঝানো হয়, নাবালিকার বিয়ে দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। কম বয়সে বিয়ে হলে কী সমস্যা হতে পারে, তা-ও বোঝানো হয়। মেয়ের অমতে বিয়ে না দিয়ে পড়াশোনায় উৎসাহ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

সব শোনার পরে মেয়েটির বাবা লিখিত ভাবে জানান, কখনও নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। মেয়ের অমতেও বিয়ে দেবেন না। তিনি জানান, ছোট সেলুন চালানোর রোজগারে সংসার চলে। তিনি মেয়ের বিয়ে দিতে হবে। তাই এই ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে প্রশাসনের কর্তারা বোঝানোর পরে তিনি বলেন, ‘‘পাত্রপক্ষকে রবিবার আসতে নিষেধ করে দেব।’’ প্রধান শিক্ষক তাঁকে আশ্বাস দেন, মেয়ের পড়াশোনার সব ব্যবস্থা স্কুল থেকে করা হবে।

এ দিনও স্কুলে এসেছিল ছাত্রীটি। সব মিটে যাওয়ায় সে খুশি। মেয়েটি বলে, ‘‘স্যার ছিলেন বলেই বাঁচলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Marriage Minor Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE