ব্যস্ত: নিজের বাড়িতে পড়াচ্ছেন সুজিত মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
পড়ানোতেই তাঁর আনন্দ। অবসর নেওয়ার পরেও। আবার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের পাশে থাকাতেও আনন্দ।
পড়ুয়াদের কাছে এক সময় ‘গুরুদক্ষিণা’ নিতেন বছরে এক টাকা। বাজারের কথা ভেবে তা নামমাত্র বেড়ে হয়েছে দু’টাকা! ওই টাকা জমিয়ে ফি-বছর তিনি থ্যালেসিমায় আক্রান্তদের পাশে থাকেন। আবার পড়শিদের কাছে হাত পেতে সাহায্য নিয়ে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত পড়ুয়াদেরও সাহায্য করেন। আজ, সোমবার ৭৪ বছরের ওই শিক্ষক সুজিত মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই গ্রামে থ্যালাসেমিয়া নির্ণায়ক শিবির হবে।
আউশগ্রামের উত্তর রামনগরের বাসিন্দা সুজিতবাবুকে এলাকার লোক এক ডাকে ‘মাস্টারমশাই’ বলে চেনেন। ১৯৬৫ সালে গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা জীবন শুরু। স্কুল ছুটির পরে তিনি পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের নিয়ে স্কুল ভবনেই ‘বিশেষ ক্লাস’ নিতেন। স্কুল জীবনের শেষ দিকে স্থানীয় জনজাতি পরিবারগুলির শিশু ও কিশোরদের স্কুলমুখী করার জন্য উৎসাহিত করতে শুরু করেন। ২০০৪ সালে অবসর নেওয়ার পরেও ওই সব দুঃস্থ পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে শিক্ষক-জীবন থেকে ‘অবসর’ নিতে পারেননি। বাড়িতেই শুরু করেন গৃহশিক্ষকতা। পেনশনের টাকার একাংশ খরচ করে পড়ুয়াদের বই-খাতাও কিনে দেওয়া শুরু করেন।
প্রথম কয়েক বছর তিনি বিনামূল্যেই পড়াতেন। সে সময় স্থানীয়রাই পড়তে আসত। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে সুজিতবাবুকে প্রণাম করে যেত। সুজিতবাবুর কাছে সেটাই ছিল ‘গুরুদক্ষিণা’। সময়ের সঙ্গে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে। উত্তর রামনগর থেকে ২০-২৫ কিলোমিটার দূরের গ্রামের পড়ুয়ারাও সুজিতবাবুর কাছে পড়তে আসতে লাগল। তখন তিনি ‘গুরুদক্ষিণা’ হিসেবে বছরে এক টাকা করে নিতে লাগলেন। বাড়ির দাওয়ায় বসে হাসতে হাসতে সুজিতবাবু বললেন, “বাজার আগুন। সে জন্য পড়ুয়ারা এখন দু’টাকা করে গুরুদক্ষিণা দেয়। ওই টাকা থ্যালাসেমিয়া নির্ণায়ক শিবিরে কাজে লাগাই।’’
মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতকস্তর মিলয়ে প্রায় ৩৫০ জন পড়ুয়া। এই বয়সেও ক্লান্তিহীন ভাবে প্রতিদিন সকাল-বিকেল পড়ান সুজিতবাবু। স্কুলের ক্লাসঘরের মতোই পড়ানোর আগে ‘রোল কল’ হয়। কোনও পড়ুয়া অনুপস্থিত দেখলে পড়শি পড়ুয়াদের কাছে খোঁজ নেন। তাঁদের উত্তরে অসন্তুষ্ট হলে অভিভাবকদেরও ডেকে পাঠান। প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর থেকে বাংলা পড়তে আসেন জালিকাঁদর গ্রামের ছাত্রী মধুমিতা দাসবৈরাগ্য, ডাঙাপাড়ার বুদ্ধদেব মেটে। তাঁদের কথায়, “আমরা অত দূর থেকে সাইকেল নিয়ে পড়তে আসি। মাস্টারমশাইয়ের মতো মানুষের সান্নিধ্যে থাকার ফলে আমরাও নানা রকম সামাজিক কাজ করতে পারি।’’
পড়ানোর ফাঁকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ালেন কী ভাবে?
সুজিতবাবুর কথায়, “এক দিন জানতে পারি গ্রামের এক ছাত্র থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। কিন্তু, বর্ধমান মেডিক্যালে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। ছাত্রদের সে কথা জানাতেই তারা উৎসাহিত হয়ে পড়ে। ওদের উৎসাহই ওই কাজে আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে। তিন-চার বছর ধরে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য নানা অনুষ্ঠান করা হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy