চড়া রোদে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার ঝক্কি নেই ছেলেমেয়েদের। আবার অহেতুক গোলমাল-গণ্ডগোলের আশঙ্কা নেই কলেজ চত্বরে। অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়া নিয়ে এমনই স্বস্তির ছাপ সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পড়ুয়াদের অভিভাবক এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ— দু’পক্ষেরই।
আসানসোল শিল্পাঞ্চলের কলেজগুলিতে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া গত বছর হয়নি। এই বছর অবশ্য সব কলেজেই অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি হচ্ছে। কী ভাবে অনলাইনে আবেদন করতে হবে, তালিকা প্রকাশের পরে কী ভাবে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ভর্তি হতে হবে, তা বিশদে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের জানানোর জন্য সব কলেজেই একটি হেল্প ডেস্ক তৈরি করা হয়েছে। জুনের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে এই অঞ্চলের সব ক’টি কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলা হবে বলে জানা গিয়েছে।
সোমবার থেকে কুলটি কলেজে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ লক্ষ্মীনারায়ণ নিয়োগী জানান, ওই দিন সকাল ১০টা থেকে ছাত্রছাত্রীরা ভর্তির ফর্ম পেতে শুরু করেছেন। পাশ ও অনার্সের জন্য ১০ জুন পর্যন্ত ফর্ম পাওয়া যাবে। তালিকা প্রকাশের পরে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ভর্তি হতে হবে। রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজেও ওই দিন থেকে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান অধ্যক্ষ স্বদেশ মজুমদার। সেখানেও আবেদনপত্র মিলবে ১০ জুন পর্যন্ত। তালিকায় নাম থাকলে বেসরকারি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে ভর্তি হতে হবে। বাড়তি সুবিধা দিতে কলেজেও ওই ব্যাঙ্কের কর্মীরা টাকা জমা নিয়ে ভর্তি করবেন।
আসানসোলের বিবি কলেজে মঙ্গলবার থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান অধ্যক্ষ অমলেশ চট্টোপাধ্যায়। ১২ জুন পর্যন্ত চলবে এই প্রক্রিয়া। চিত্তরঞ্জনের দেশবন্ধু মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আশিষ দে জানান, তাঁদের কলেজে অনলাইনে ফর্ম দেওয়া হবে ৫ জুন থেকে। এখানে ভর্তি প্রক্রিয়া হবে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। আসানসোলের গার্লস কলেজ ও বিসি কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য অনলাইনে ফর্ম দেওয়ার প্রক্রিয়া চালুর কথা জানালেও কবে থেকে তা শুরু করতে পারবেন, তা নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেননি। আসানসোল গার্লস কলেজের টিচার ইন-চার্জ সন্দীপ ঘটকের আশ্বাস, দিন কয়েকের মধ্যেই দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে।
অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করতে পেরে খুশি কলেজ কর্তৃপক্ষগুলি। তাঁদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, কলেজে ফর্ম দেওয়া হলে ঘাঁটি গেড়ে বসেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা। উদ্দেশ্য, কলেজে পা রাখার দিন থেকেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের দলে টানা। ছাত্র সংসদের ক্ষমতায় যারা থাকে, এ ব্যাপারে তারা বেশি আধিপত্য কায়েম করতে চায়। সে নিয়ে অন্য সংগঠনের সঙ্গে বচসা, মারপিট বাধে। আসানসোল বিবি কলেজের অধ্যক্ষ অমলেশবাবু যেমন জানান, গত বছরও এই কলেজে কয়েক বার গোলমাল হয়। পুলিশ ডেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘সেই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেয়েছি।’’ গত বছরে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কুলটি কলেজেও। শেষ দিন পর্যন্ত কলেজে নিয়মিত পুলিশি টহলের ব্যবস্থা ছিল। অধ্যক্ষ লক্ষীনারায়ণবাবু বলেন, ‘‘এ বার আর কোনও ঝামেলা নেই। সব অনলাইনে হয়ে যাবে।’’
বেশ কয়েকটি কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে খোঁজখবর নিতে এসেছিলেন ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরা। এমনই এক অভিভাবক দীগম্বর পাল বলেন, ‘‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় রোদে দাঁড়িয়ে ফর্ম নেওয়ার ঝক্কি নেই। গোলমালের মধ্যে পড়ার ভয় নেই। অনেক নিশ্চিন্ত লাগছে।’’ জেকে নগরের ছাত্রী সঙ্ঘমিত্রা রায় বলে, ‘‘ঘরে বসেই ফর্ম পাওয়া যাবে, এর চেয়ে সুবিধা আর কী হতে পারে!’’
অনলাইনে ফর্ম বিলি নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে মতের ফারাক রয়েছে। টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের বক্তব্য, ‘‘জনসংযোগে সামান্য সমস্যা হয়েছে। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভালই। আমরা ভর্তির সময়ে ব্যাঙ্কের সামনে শিবির করে ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করব।’’ এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর দে আবার বলেন, ‘‘অনলাইনে প্রক্রিয়া পৃথক ভাবে সব কলেজগুলির তরফে না করে কেন্দ্রীয় ভাবে করার দাবি তুলেছি আমরা। এই প্রক্রিয়ায় ছাত্রছাত্রীদের বেশি খরচ হবে। হয়রানিও হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy