Advertisement
০৯ মে ২০২৪

সব হারিয়ে সাইকেল সঙ্গী তীর্থর

তীর্থ জানায়, বিভিন্ন জেলায় ঘুরে সেখানকার প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছ থেকে শংসাপত্র সংগ্রহ করে গিনেস বুকে নাম তোলাও তার লক্ষ্য। তার আগে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে নিজের দারিদ্র্যের কথা জানিয়ে পড়াশোনার জন্য সাহায্য চাইবে সে।

ভ্রমণে: কাটোয়ায় তীর্থ। নিজস্ব চিত্র

ভ্রমণে: কাটোয়ায় তীর্থ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৭ ১২:৫৬
Share: Save:

বইয়ে তার মন টেকে না। অভিজ্ঞতা দিয়ে না বুঝলে পড়া মনেও থাকে না। ফলে বইয়ে মুখ গুঁজে না থেকে প্রকৃতির বৈচিত্র কুড়োতে বেরিয়ে পড়েছে জলপাইগুড়ির বছর উনিশের তীর্থকুমার রায়। সঙ্গী সাইকেল। সারা বাংলা ঘোরার উদ্দেশ্য নিয়ে আপাত কাটোয়ায় পৌঁছেছে সে।

তীর্থ জানায়, বিভিন্ন জেলায় ঘুরে সেখানকার প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছ থেকে শংসাপত্র সংগ্রহ করে গিনেস বুকে নাম তোলাও তার লক্ষ্য। তার আগে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে নিজের দারিদ্র্যের কথা জানিয়ে পড়াশোনার জন্য সাহায্য চাইবে সে।

জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরের তীর্থর বয়স যখন এক, তখনই বাবা সুশীলচন্দ্র রায়কে হারায় সে। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় মারা যান মা লক্ষ্মীদেবীও। পুরুলিয়া আনন্দমার্গ স্কুল থেকে মাধ্যমিক দিয়ে সে ফেরে পাহাড়পুরে। সেখানে সোনাউল্লা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় পায় ‘সবুজ সাথী’ সাইকেল। সেই শুরু। প্রথমে কার্শিয়াং, কোচবিহার পরে গত বছর মার্চে রাজ্য ঘুরতে বেরোয় সে। আশ্রয় নেয় কোথাও থানায়, কোথাও ব্লক অফিসে। তীর্থ জানায়, দিনে সাইকেলে ঘুরলেও সন্ধ্যা হলেই পড়তে বসে সে। কোথাও আটকালে সোজা হাজির হয় স্থানীয় কোনও বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে। পরীক্ষার সময় সাইকেল কোনও সরকারি দফতরে জমা রেখে স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দেয় সে। যেমন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় তার সাইকেল ছিল মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায়। তীর্থ জানায়, ২৪ মে কাটোয়ায় এসে পুরসভার একটি লজে উঠেছে সে। সাইকেল সেখানে রেখে কলকাতা গিয়ে হেরম্বচন্দ্র কলেজে অর্থনীতিতে সাম্মানিক নিয়ে ভর্তি হয়েছে সে।

কিন্তু সাইকেলে ঘোরার ভাবনা কেন? তীর্থ বলে, ছোট থেকেই অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় তার। স্কুলে পড়াকালীন নানা জায়গায় ক্যাম্প করার পর থেকে প্রকৃতি,আঞ্চলিক সংস্কৃতি জানার ‘ভূত’ চাপে মাথায়। কিন্তু খরচ? তীর্থর জবাব, ‘‘পুলিশ, প্রশাসনের কাছে সাহায্য চাই। যা পাই তাতেই পড়াশোনা ও ঘোরার খরচ চলে।’’ সে জানায়, মাস তিনেক আগে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার এক পুলিশ আধিকারিক তাকে ৫,৬৪০ টাকা দিয়েছিল। তা দিয়েই এখনও চলছে।

কোন ব্লক দিয়ে কোন নদী ছুটছে, কোথায় কোন লোকসংস্কৃতির প্রভাব বেশি, সবই জমা হচ্ছে তীর্থর নোটবইয়ে। পথে প্রবীণ-নবীনদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডাও দিচ্ছে সে। তীর্থর কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত প্রায় দু’হাজার শংসাপত্র সংগ্রহ করেছি। পুরো দেশ ঘুরে দু’কোটি শংসাপত্র পেতে চাই।’’ আপাতত কাটোয়া থেকে নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা হয়ে কলকাতা তার গন্তব্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tirtha Kumar Roy Jalpaiguri nature beauty Cyvle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE