মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে গুসকরার তৃণমূল নেতাদের নিয়ে আজ, সোমবার বৈঠকে বসার কথা পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের। তার আগেই দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সরব হয়ে প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠালেন কাউন্সিলর মল্লিকা চোঙদার।
চিঠিটি আপাত ভাবে দলের নেতাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হলেও, এরপরে দ্বন্দ্ব মেটানোর বৈঠক কতখানি কার্যকর হবে সে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। মল্লিকাদেবীর দাবি, চিঠির সমস্ত কথায় বৈঠকে বলবেন তিনি। তা শুনে পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায় বলেন, উনি তো আমার দিদি। সংবাদমাধ্যমের কাছে না বলে দলের কাছে বলতে পারতেন।’’
৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মল্লিকাদেবী কিছুদিন আগেও পুরপ্রধানের আস্থাভাজন ছিলেন। কয়েক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত পূর্ত দফতরের দায়িত্বও সামলেছেন। কিন্তু অনাস্থা পরবর্তী সময়ে গোষ্ঠী-অঙ্কে পরিস্থিতি বদলে যায়। তৃণমূলেরই একটা সূত্রের দাবি, নিজের পদ বাঁচাতে ভোল বদলে মল্লিকাদেবীর পাশ ছেড়ে আর এক প্রবীণ কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের দিকে ভেড়েন পুরপ্রধান। নতুন ‘জোটে’ কার্যত ‘একা’ হয়ে যান গুসকরার প্রাক্তন পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াই ও প্রাক্তন উপপুরপ্রধান মল্লিকা চোঙদার। যদিও কোনও জোটেই পুর পরিষেবার হাল যে বদলায়নি তা বলছেন শহরবাসী। বাধ্য হয়ে আসরে নামেন দলনেত্রী। দু’দিন আগেই এক সপ্তাহের মধ্যে কাউন্সিলরদের গোলমাল মেটানোর নির্দেশ দেন তিনি। না হলে বোর্ড ভেঙে দেওয়ার নির্দেশও দেন দলের কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, আউশগ্রামের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলকে।
এই পরিস্থিতিতেই মল্লিকাদেবীর অভিযোগ, গত ৯ অগস্ট পুরসভাসমূহেরর দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক জেলার বিভিন্ন পুরসভাকে চিঠি দিয়ে ‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে শৌচাগার তৈরির দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে কাজের বরাত দেওয়ার কথা জানান। কিন্তু ৩০ অগস্ট বোর্ডের সভায় পুরপ্রধান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কোনও রকম দরপত্র ছাড়াই একটি বেসরকারি সংস্থাকে শৌচাগার তৈরির বরাত দেওয়া হবে। মল্লিকাদেবীর দাবি, “১৯৬৩টি শৌচাগার তৈরি হবে। প্রতিটি শৌচাগার তৈরির সর্বোচ্চ খরচ ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৯৯৬ টাকা। অথচ নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার কাজ করবে পুরসভা।’’
সরকারের নিয়মে, ৫ লক্ষ টাকার বেশি কাজ হলে ই-টেন্ডার ডাকা বাধ্যতামূলক। গুসকরা পুরবোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবার দু’লক্ষ টাকার উপর কাজ হলেই দরপত্র ডাকতে হবে। অথচ শহরে ২১টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগানোর সময়েও ছ’লক্ষ টাকা খরচ হলেও পুরসভা দরপত্র ডাকেনি বলে মল্লিকাদেবীর অভিযোগ। তাঁর দাবি, ‘‘পুরসভার দাদা-ভাইরা এ ভাবেই দুর্নীতি করছে।”
যদিও বুর্ধেন্দুবাবুর দাবি, “সমস্ত কিছু নিয়ম মেনে হয়েছে। বোর্ডের সভায় আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিরোধীরাও বিষয়টি জানেন।’’ নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়েরও দাবি, ‘‘কোনও ভুল হলে বিরোধীরা তো হইচই করতেন, তাঁরা তো কিছু বলেননি। অথবা পরবর্তী বৈঠকে আগের সভার সিদ্ধান্ত নিয়েও ওই কাউন্সিলর প্রশ্ন তুলতে পারতেন। তিনি কিন্তু সেটাও করেননি। আসলে এত বাধার পরেও উন্নয়ন হচ্ছে বলে কেউ কেউ পুরপ্রধানকে হিংসা করছেন।” যা শুনে মল্লিকাদেবী ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, ‘‘দলীয় শৃঙ্খলায় যদি মানবেন, তাহলে দাদা-ভাই বাইকবাহিনী নিয়ে গিয়ে গ্রামের ভিতর জায়গা দখল করতে গিয়ে বোমাবাজি-গুলি ছুঁড়তেন না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy