Advertisement
০৭ মে ২০২৪

জিতেও বাদ পড়লেন নিখিল, বনমালী

জয়ী প্রার্থীদের বেশির ভাগই রয়ে গিয়েছেন। অনেককে চেনা মাঠ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আবার জিতেও জমি হারিয়েছেন কয়েকজন। শুক্রবার তৃণমূল ভবন থেকে প্রকাশিত বিধানসভা ভোটের প্রার্থী তালিকায় জেলা জুড়ে এমনই ছবি। দলের অন্দরের খবর, কাউকে তোলাবাজির অভিযোগে, কাউকে জনসংযোগ না থাকার জন্য আবার কারও বিরুদ্ধে বারবার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সরানো হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০২:১৭
Share: Save:

জয়ী প্রার্থীদের বেশির ভাগই রয়ে গিয়েছেন। অনেককে চেনা মাঠ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আবার জিতেও জমি হারিয়েছেন কয়েকজন।

শুক্রবার তৃণমূল ভবন থেকে প্রকাশিত বিধানসভা ভোটের প্রার্থী তালিকায় জেলা জুড়ে এমনই ছবি। দলের অন্দরের খবর, কাউকে তোলাবাজির অভিযোগে, কাউকে জনসংযোগ না থাকার জন্য আবার কারও বিরুদ্ধে বারবার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সরানো হয়েছে। তবে চমক যা রয়েছে তার মধ্যে আগে নাম আসবে মেমারি, ভাতার আর দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের। তিন জায়গাতেই দলের জয়ী প্রার্থীকে সরিয়ে অন্য মুখ হয়েছে।

ভাতারে গত বারের জয়ী প্রার্থী ছিলেন বনমালী হাজরা। তৃণমূল সূত্রের খবর, জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানগোবিন্দ অধিকারীর গোষ্ঠী বরাবরই ভাতারে বনমালী হাজরার বিরোধী বলে পরিচিত। বারবার ভাতারের মানুষের সঙ্গে বনমালীর যোগাযোগ না থাকার অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। এ নিয়ে দলের নানা স্তরে চিঠি দিয়েছিলেন মানগোবিন্দবাবুরা। কয়েক মাস আগে হাটগোবিন্দপুরে বড় সমাবেশ করে তৃণমূলেরই কিছু লোক প্রকাশ্যে বনমালীর বিরোধীতাও করেন। এরপরেই এ বার প্রার্থী করা হয় সুভাষ মণ্ডলকে। বর্তমানে তিনি রায়নার পর্যবেক্ষক। সঙ্গে কিছুদিন আগে সভা করে দলের জেলা যুব সভাপতির দায়িত্বও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের কর্মীদের দাবি, তখনই তাঁকে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছিল।

মেমারিতেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই প্রার্থী বদলের মূল কারণ বলে তৃণমূল কর্মীদের দাবি। দলের একাংশের দাবি, গত বারের প্রার্থী আবু হাসেম মণ্ডল মেমারি শহরের উপর নির্ভর করেই ভোটে জিতেছিলেন। কিন্তু এখন মেমারির পুরপ্রধান স্বপনকুমার বিষয়ীর সঙ্গে তাঁর বিরোধ। কার্যত মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। তা ছাড়া লোকসভা ভোটে নিজের গ্রামেই হেরে গিয়েছিলেন তিনি। ফলে এ বার তাঁর জায়গায় নার্গিস বেগমকে বেছে নিয়েছে দল। নার্গিস বেগম আগে কংগ্রেসে ছিলেন। পরে তৃণমূলে যোগ দেন। লোকসভার প্রার্থীও হন। দলের অন্যতম মহিলা নেত্রী তিনি।

তালিকায় নাম নেই দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন আমলা প্রদীপকুমার মজুমদার। তৃণমূলের অন্দরের খবর, বেশ কয়েক বছর ধরেই নিখিলবাবুর কাজকর্মের প্রতি দলীয় নেতৃত্বের একাংশ অসন্তুষ্ট ছিলেন। যেমন, ২০১৪-র গোড়ার দিকে ডিএসপি-র আইএনটিটিইউসি শ্রমিক সংগঠনের পাল্টা সংগঠনের সঙ্গে বিধায়কের ঘনিষ্ঠতা নজর এড়ায়নি নেতৃত্বের। আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও নিখিলবাবুর বিভিন্ন কাজকর্মও ভাল চোখে নেয়নি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। যেমন, নিখিলবাবুর উদ্যোগে শহরে অবৈধ নির্মাণ ভাঙার উদ্যোগ করা হয়। সেই সময় দলেরই বেশ কয়েকটি কার্যালয় অবৈধ বলে ভেঙে দেয় পর্ষদ। ঘটনার জেরে দলের মধ্যেই বিতর্কের মুখে পড়েন নিখিলবাবু। মাস খানেক আগে কলকাতায় তৃণমূল ভবনের বৈঠকে এডিডিএ-র কাজকর্ম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়কে এডিডিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। শুক্রবার প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে নিখিলবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলনেত্রী যা ভাল বুঝেছেন, করেছেন।’’ প্রচারে দেখা যাবে? নিখিলবাবু বলেন, ‘‘দল বললে নিশ্চয় থাকব প্রচারে।’’

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

মন্তেশ্বর গত বার সিপিএমের ছিল। তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন আবু আয়েশ মণ্ডল। তবে এ বার টিকিট পেয়েছেন ব্লক সভাপতি সজল পাঁজা। তৃণমূল সূত্রের খবর, ব্যবসায়ী সজলবাবু তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সমস্ত অনুষ্ঠানেই তাঁকে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা যায়। শোনা যায়, তাঁর জন্য উপরমহলে আর্জি জানিয়েছিলেন পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস নিজে। ফলে টিকিট পাওয়া আটকানো যায়নি।

কালনাতেও গত বারের বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু প্রার্থী হয়েছেন এ বার। আপাত চোখে স্বাভাবিক মনে হলেও দলের অনেকেই অন্য কথা বলছেন। তাঁদের দাবি, টেট কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছিল বিশ্বজিৎবাবুর। দলের কিছু লোকই পোস্টার লাগিয়ে প্রচার করেছিলেন। পুরভোটেও হেরে গিয়েছিলেন তিনি। ফলে মনে হয়েছিল টিকিট ভাগ্যে নেই। কিন্তু সম্প্রতি দলের সব স্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে গোষ্ঠীবাজির ‘বদনাম’ অনেকটাই দূর করতে পেরেছিলেন তিনি। যার ফল মিলল তালিকায়। এ ছাড়া কেন্দ্রটি তফসিলি জাতি সংরক্ষিত হওয়ায় দলের কাছে বিকল্প নামও তেমন ছিল না বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি।

মঙ্গলকোটে গত বারের জয়ী প্রার্থী অপূর্ব চোধুরীকে সরিয়ে এ বার নতুন মুখ সিদিক্কুল্লা চৌধুরী। বেশ কিছু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল কাটোয়ার করজ গ্রামের বাসিন্দা সিদিকুল্লা প্রার্থী হচ্ছেন। তাঁর ভাই রহমতুল্লা চৌধুরীকে বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করতে দেখা যায়। ফেসবুকেও দলের অনেকে সিদিকুল্লা প্রার্থী হচ্ছে বলে প্রচারও শুরু করে দেন। তার মধ্যেই কৈচরে অনুব্রতর সভায় অপূর্ব চৌধুরীকে প্রার্থী করার দাবি জানান কয়েকজন। কিন্তু সিদিকুল্লাই টিকিট পান।

নতুন মুখে দেখা গিয়েছে জামুড়িয়া-রানিগঞ্জ খনি এলাকাতেও। টিকিট পেয়েছেন রেলের লোহা চুরিতে দোষি সাব্যস্ত রানিগঞ্জের বিধায়ক সোহরাব আলির স্ত্রী কাউন্সিলর নার্গিস বানো। দলের অন্দরের খবর, মূলত দু’টি দিক মাথায় রেখেই প্রার্থী করা হল নার্গিসকে। প্রথমত, অল্প সময়ের মধ্যেই পুরসভার বিভিন্ন কাজকর্মে ভাল কাজের জন্য দলনেত্রীর নেক নজরে পড়েছেন নার্গিস। দ্বিতীয়ত, আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের অন্তর্গত বার্নপুরের বেশ কয়েকটি পুর এলাকা ও রানিগঞ্জের প্রায় ৫টি পঞ্চায়েতে বিস্তীর্ণ এলাকায় সোহরাবের ভাল প্রভাব রয়েছে। ফলে তাঁর স্ত্রী টিকিট না পেলে ভোট হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নার্গিস অবশ্য বলেন, ‘‘দল দায়িত্ব দিয়েছে। আমি খুশি।’’

গলসি থেকে এ বার টিকিট পেয়েছেন জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ অলোককুমার মাজি। দলের অন্দরের খবর, গত বারের বিধায়ক গৌর মণ্ডলের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ছিল। কালীপুজোর রাতে প্রকাশ্যে নাচানাচির অভিযোগ ছিল। পুলিশ রিপোর্টও ভাল ছিল না। তাই অলোকবাবুকে খণ্ডঘোষ থেকে তুলে নিয়ে দাঁড় করানো হয়। আবার খণ্ডঘোষের প্রার্থী নবীনচন্দ্র বাগকে যাতে গোষ্ঠীদ্বন্দে পড়তে না হয় তার জন্যও এমন পদক্ষেপ বলেও অনেকের দাবি।

পাণ্ডবেশ্বরেও মূলত গোষ্ঠী ন্দ্ব সামাল দিতেই আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে প্রার্থী করা হয়েছে বলে খবর। দিন কয়েক আগে পর্যন্তও স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে এলাকার প্রার্থী হিসেবে শ্রমিক নেতা হরেরাম সিংহ, দুর্গাপুর জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় ও পাণ্ডবেশ্বরের ব্লক তৃণমূল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর নাম নিয়ে জল্পনা চলছিল। কিন্তু বিমানবন্দরে অস্ত্র-সহ ধৃত নরেন্দ্রনাথবাবু ও উত্তমবাবু এলাকায় বিরোধী গোষ্ঠীর বলে পরিচিত। তা ছাড়া অবাঙালি ভোট-ব্যাঙ্কের দিকে নজর রেখেও জিতেন্দ্রবাবুকেই বেছে নেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। জিতেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘সকলকে নিয়ে নির্বাচন লড়ব।’’ দলের একাংশের দাবি, একই কারণে জামুড়িয়া থেকে প্রার্থী করা হয়েছে আসানসোল জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি ভি শিবদাসনকে। পুরভোটে জামুড়িয়ার ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টিতেই জয় পায় তৃণমূল। তারপরেই প্রার্থী পদ পান দাশু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC assembly election candidate list
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE