রাম-সীতার মন্দির তৈরি করা হবে পূর্বস্থলীর ভাতশালা গ্রামে। শনিবার একটি সভা থেকে এমনই ঘোষণা করলেন তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। বিজেপির অভিযোগ, স্বপনবাবু রাজনীতি করার জন্যই এমন ঘোষণা করেছেন। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী।
ওই দিন সন্ধ্যায় ভাতশালা গ্রামে সভা করেন মন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘পূর্বস্থলীর ইতিহাস ঘেঁটে জানতে পেরেছি, কোনও এক রাজপুত এই গ্রামে রাম, লক্ষ্মণ, সীতা ও হনুমানের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে মন্দির তৈরি করেছিলেন। কালক্রমে সেই মন্দির হারিয়ে যায়। তবে বিগ্রহগুলি অন্যত্র পূজিত হয়। আমি বেঁচে থাকাকালীন এখানে রাম-সীতার মন্দির গড়ার কাজ শেষ করার চেষ্টা হবে।’’
সেই সঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করারও অভিযোগ করেন স্বপনবাবু। তাঁর সংযোজন: ‘‘এই মন্দির তৈরি করার জন্য দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা চেষ্টা করছি। তখন ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেওয়ার জন্য বিজেপি-কে দেখাও যেত না।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ঘটনাচক্রে, ‘জয় শ্রীরাম’, এই ধ্বনি এ বারের লোকসভা ভোটেও অন্যতম চর্চার বিষয় ছিল। ভোট-মরসুমে পশ্চিম মেদিনীপুরে চন্দ্রকোনা রোডে আচমকা রাস্তার পাশে দাঁড়ানো কয়েক জন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কনভয়’ দেখে ‘জয় শ্রীরাম’ বলেন। চকিতে মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থামিয়ে নেমে তাঁদের তাড়া করতেই পালিয়ে যান ওই ব্যক্তিরা। তৃণমূল অভিযোগ করে, এই ঘটনা বিজেপির ‘পরিকল্পিত চক্রান্ত’। এই ঘটনায় তিন জনকে আটকও করে পুলিশ। তার পরে হলদিয়া এবং ঝাড়গ্রামে বিজেপির নির্বাচনী সভা থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হন নরেন্দ্র মোদীও।
স্বপনবাবু শনিবার বিজেপি-কে বিঁধতে গিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা এই সমস্ত ঘটনাপর্বেরই রেশ বলে মনে করছেন এলাকার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত লোকজনের একাংশ। বিজেপির অন্যতম জেলা সম্পাদক ধনঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘স্বপনবাবুর এত দিনে রাম-সীতার মন্দির তৈরি কথাটি আসলে একটি রাজনৈতিক অভিসন্ধি। আমাদের শক্তিবৃদ্ধিতে উনি আতঙ্কিত।’’ স্বপনবাবুর যদিও দাবি, ‘‘আমরা সমস্ত ধর্ম, সব ধরনের সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী, শ্রদ্ধাশীল। বিজেপি-ই রাম নিয়ে রাজনীতি করে।’’
স্বপনবাবু যে গ্রামে রাম-সীতার মন্দির তৈরি করতে চান, সেখানে তেমন একটি মন্দির ছিল বলে দাবি করেছেন লোক-গবেষকদের একাংশ। পূর্বস্থলীর ইতিহাস গবেষক দেবাশিস নাগ বলেন, ‘‘হরিদাস দাসের ‘গৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধান’, মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলের ‘পূর্বস্থলীর ইতিবৃত্ত’-তে ভাতশালা গ্রামে রাম-সীতার মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে। মন্দিরটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে মূর্তিগুলি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়।’’ তবে ঠিক কোন জায়গায় মন্দিরটি ছিল, তা জানতে ক্ষেত্র সমীক্ষা, প্রয়োজনে খননকার্য চালানো দরকার বলে মনে করেন দেবাশিসবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy