Advertisement
০৬ মে ২০২৪

শিল্প আসেনি রাজ্যে, খেদ তৃণমূল নেতারই

বহু অনাবাদি জমে পড়ে রয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ মতো জেলাগুলিতে। বিভিন্ন বণিক সংগঠনের খেদ, পরিকাঠামোগত উন্নতি করে শিল্প সম্ভাবনা বাড়ানো যায় বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলিতে।

কর্মশালায় অরূপবাবু ও মন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।

কর্মশালায় অরূপবাবু ও মন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:০৭
Share: Save:

বহু অনাবাদি জমে পড়ে রয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ মতো জেলাগুলিতে। বিভিন্ন বণিক সংগঠনের খেদ, পরিকাঠামোগত উন্নতি করে শিল্প সম্ভাবনা বাড়ানো যায় বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলিতে। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর বছর চারেক কেটে গেলেও সেই পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ যে তেমন জোরকদমে এগোয়নি, সেই খেদ এ বার শাসক দলের নেতার গলাতেও।

শুক্রবার থেকে দুর্গাপুরের আরবান হাটে বর্ধমান ও বাঁকুড়া জেলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পদ্যোগীদের নিয়ে শুরু হয়েছে দু’দিনের কর্মশালা। উদ্দেশ্য, শিল্পস্থাপনের করার বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা। এ দিন ওই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী, প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তা, ব্যাঙ্ক আধিকারিক এবং শিল্পদ্যোগীরা।

ওই কর্মশালায় এসে অরূপবাবুর আক্ষেপ, ‘‘গত চার বছরে সে ভাবে রাজ্যে শিল্প আসেনি। সেটা আমাদের কাছে অত্যন্ত দুঃখের।’’ যদিও এর পরেই নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অরূপবাবু দাবি করেন, ন্যূনতম পরিকাঠামো না থাকায় রাজ্যে শিল্প আসেনি। গত চার বছরে বিদ্যুৎ ও জল সংযোগ-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে বলেও দাবি মন্ত্রীর। তারপরেও কেন তাহলে শিল্প আসেনি? মন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘লাল ফিতের ফাঁস’ শিল্প স্থাপনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। যদিও এ দিন রাতে অরূপবাবুকে ফোন করা হলে তিনি সুর বদলে দাবি করেন, তিনি শিল্প বলতে ‘ভারী’ শিল্পের কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যে যে দ্রুত গতিতে ভারী শিল্পের বিনিয়োগ হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি।’’ সেই সঙ্গে তাঁর আরও দাবি, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রশাসনিক জটিলতাকেও অনেকাংশে শিথিল করা গিয়েছে।

যদিও রাজ্যের তরুণ প্রজন্মকে শিল্পে উৎসাহিত করতে মাস খানেক আগে আয়োজিত রিয়েলিটি শো ‘এগিয়ে বাংলা’-র বৈঠক বাঁকুড়াতে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে হওয়া ওই বৈঠকে বড়জোড়া-গঙ্গাজলঘাটি শিল্পাঞ্চলের বড় শিল্পদ্যোগীরা তেমন যোগ দেননি বলেই দেখা গিয়েছিল।

হঠাৎ এমন কর্মশালার আয়োজন কেন? রাজ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের (এমএসএমই) তরফে জানানো হয়েছে, শিল্প স্থাপন করতে গেলে কোন কোন দফতরের ছাড়পত্র লাগে, কী ভাবে ব্যাঙ্ক ঋণ মেলে তা জানাতেই সকলকে এক ছাতার তলায় এনে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। কর্মশালার উদ্বোধন করেন স্বপন দেবনাথ। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘জমি কেনা, জমির চরিত্র পরিবর্তন করা, ব্যাঙ্ক ঋণ জোগাড়, শিল্প স্থাপন— সব মিলিয়ে একটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ার ফলে অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তা এড়াতেই এখানে সব দফতরের আধিকারিকেরা রয়েছেন।’’ ব্যাঙ্ক যাতে দ্রুত ঋণ দেয় সে জন্যও আবেদন জানান মন্ত্রী। দুর্গাপুর স্মল স্কেল ইন্ড্রাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৃপাল সিংহ বলেন, ‘‘আগে শিল্প স্থাপনের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ছিল। এখানে এসে মনে হয়েছে, ছবিটা বদলেছে। সেটা একেবারে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া গেলে লগ্নির আদর্শ পরিবেশ তৈরি হবে।’’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিল্পদ্যোগীকে বলতে শোনা যায়, শিয়রে বিধানসভা ভোট। সে দিকে নজর রেখেই নেতা-মন্ত্রীরা ‘লাল ফিতের গেরো’ শিথিল করা ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলছেন। অরূপবাবু অবশ্য পরে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘নির্বাচনের সঙ্গে শিল্পের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ চলতি বছরে শুরুর দিকে বিধানসভায় পেশ করা রাজ্যের আর্থিক সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে, বাস্তবায়িত হচ্ছে এমন লগ্নির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেশ খানিকটা কমেছে। ওই আর্থিক সমীক্ষায় বলা হয়, ২০১৩-১৪ সালে ১৫০টি প্রকল্পে ১৭ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা লগ্নি হয়েছে অথবা বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে তা কমে দাঁড়ায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকায়।

গোটা বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরাও। সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ তথা সিটুর জেলা সভাপতি বংশগোপাল চৌধুরীর কটাক্ষ, ‘‘হঠাৎ করে শাসক দলের ওই নেতার কেন বোধদয় হল, জানি না। শিল্পে বিনিয়োগ নিয়ে রাজ্যে সরকারের দাবি ও কেন্দ্র সরকারের প্রকাশিত রিপোর্টে বিস্তর ফারাক রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC trinamool west bengal bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE