Advertisement
০৬ মে ২০২৪

শহরে হার তৃণমূলের, ডাক নেই তাসাপার্টির

ফল বেরনোর দিন কয়েক আগে থেকে জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছিল মহড়া। নির্বাচন কমিশন বিজয় মিছিলে কয়েক দিন নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও পরে তা হবে, মনে করেছিলেন তাঁরা। আর তখনই ডাক আসবে আশা করে তৈরি হচ্ছিলেন তাসাপার্টির সদস্যেরা। কিন্তু ফল বেরোতেই মাথায় হাত দুর্গাপুরের ওই সব দলের। বিভিন্ন তাসাপার্টির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক আগে থেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছিলেন তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী।

তবু প্রস্তুতি তাসাপার্টির সদস্যদের। নিজস্ব চিত্র।

তবু প্রস্তুতি তাসাপার্টির সদস্যদের। নিজস্ব চিত্র।

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ০১:৩৯
Share: Save:

ফল বেরনোর দিন কয়েক আগে থেকে জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছিল মহড়া। নির্বাচন কমিশন বিজয় মিছিলে কয়েক দিন নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও পরে তা হবে, মনে করেছিলেন তাঁরা। আর তখনই ডাক আসবে আশা করে তৈরি হচ্ছিলেন তাসাপার্টির সদস্যেরা। কিন্তু ফল বেরোতেই মাথায় হাত দুর্গাপুরের ওই সব দলের।

বিভিন্ন তাসাপার্টির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক আগে থেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছিলেন তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী। আগের বারের ভোটে জেতার পরে শহরে বিজয় মিছিল করেনি তৃণমূল। তবে এ বার নিশ্চয়ই আর তেমন হবে না, ভেবেছিলেন তাসার দলের শিল্পীরা। দু’পয়সা রোজগারের আশা করতেও শুরু করে দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দুর্গাপুরের দু’টি আসনেই হেরে গিয়েছে তৃণমূল। ফলে, মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের।

শহরের মামরাবাজার এলাকা, রায়ড়াঙা, ন’ডিহা, সিটি সেন্টার লাগোয়া অম্বেডকর সরণি এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি তাসা দল। হাতে যখন কাজ থাকে না তখন সদস্যেরা চাষের কাজ, রাজ মিস্ত্রির কাজ, বা দিনমজুরের কাজ করেন। কিন্তু মরসুমে কোনও দিকে তাকাবার অবসর নেই। বাড়িতে মহড়া আর অনুষ্ঠানে বাজানো। শুধু তাসা নয়, ব্যান্ডপাটি, ভাঙড়া, ঢোলেরও দল আছে। চাহিদা অনুযায়ী জোগান দেয় তারা। ছ’জন বা বারো জনের দল হিসেবে বরাত নেওয়া হয়। সিটি সেন্টার লাগোয়া বস্তিতে প্রতি সন্ধ্যায় শোনা যায় তাসার দলের গান-বাজনা। নানা উৎসবের শোভাযাত্রা ছাড়াও বছর-বছর ভোটের পরে বিজয় মিছিলে ডাক পায় তারা। তাই ভোট আসতেই সাড়া পড়ে যায় তাসার দলগুলিতে।

তাসাপার্টির সদস্যেরা জানান, ভোটের ফল বেরনোর পরে আর তৃণমূলের তরফে কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। কলাবাগান বস্তি এলাকার তাসার দলের এক সদস্য বলেন, ‘‘ভোটের আগে তৃণমূলের দু’এক জন যোগাযোগ করে জানিয়েছিলেন, ফল বেরোনোর দিন অগ্রিম বায়না করবেন। কিন্তু তার পরে আর কেউ আসেননি।’’ গত বার এলাকার দু’টি কেন্দ্রেই জিতেছিল তৃণমূল। কিন্তু এ বারই দু’টিতেই তাদের হার হয়েছে বাম-কংগ্রেস জোটের কাছে।

ন’ডিহা গ্রামের দীপক বাদ্যকর জানান, ফল ঘোষণা এগিয়ে আসার সঙ্গে-সঙ্গে অনেকে যোগাযোগ করায় মহড়ায় জোয়ার এসেছিল। কিন্তু এখন তাঁরা পড়েছেন ধন্দে। অম্বেডকর সরণির অশোক বাদ্যকর বলেন, ‘‘তিরিশ বছর ধরে বাজনা বাজাচ্ছি। ভোটের সময়ে রোজগারটা উপরি পাওনা। বিজয় মিছিলে বাজানোর আনন্দটাই আলাদা!’’ কিন্তু এ বার সেই সুযোগ মিলবে কি না, এখনও অনিশ্চিত। কারণ, দুর্গাপুরের দু’টি কেন্দ্রে জয়ী বাম ও কংগ্রেস জিতলেও সারা রাজ্যের ফলের নিরিখে তাদের জোট মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দুর্গাপুরের জয়ে কোনও বিজয় মিছিল করা হবে কি না, সে নিয়ে এখনও তারা কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গিয়েছে।

দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে জেতার পরে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা ঢাক-ঢোল বাজিয়ে উচ্ছ্বাস-উল্লাস করেছেন। কিন্তু তা বড় আকারে না হওয়ায় বেশি শিল্পী ডাক পাননি। গিয়েছিলেন ন’ডিহা, রায়ডাঙা এলাকার কয়েক জন। শহরের সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার শুধু বলেন, ‘‘বিজয় মিছিল নিয়ে এখনও নিশ্চিত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress TMC vote result Durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE