Advertisement
০৫ মে ২০২৪
দেওয়াল লিখন কাঁকসায়

নিখিলকেই প্রার্থী করার দাবি

গত বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করেছিলেন, স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন ‘অপরিচিত’।

মলানদিঘিতে সোমবার রাতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

মলানদিঘিতে সোমবার রাতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ০২:১০
Share: Save:

গত বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করেছিলেন, স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন ‘অপরিচিত’। জিতে বিধায়ক হওয়ার পরেও এ বার আর তাঁকে প্রার্থী করেনি দল। কিন্তু সেই নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের প্রার্থী করার দাবিতে দেওয়াল লিখন হল দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে।

কাঁকসার মলানদিঘিতে সোমবার ওই দেওয়াল লিখন দেখা যায়। মঙ্গলবার সকালের মধ্যে তা মুছে ফেলা হয়। কিন্তু নিখিলবাবুকে টিকিট না দিয়ে প্রাক্তন আমলা প্রদীপ মজুমদারকে প্রার্থী করায় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা এই ঘটনায় সামনে এল বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতারা।

নিখিলবাবুর সঙ্গে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের পরিচয় হয় গত বিধানসভা ভোটে দলনেত্রী প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করার পরে। নিখিলবাবু সে বার দাবি করেছিলেন, তাঁকে যে প্রার্থী করার কথা ভাবা হচ্ছে তা ঘোষণার আগের রাতে ফোন করে জানান দলের তৎকালীন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। নাম ঘোষণার পরে তৃণমূলের অনেক কর্মী-সমর্থকই দলে সক্রিয় নন, এমন এক জনকে প্রার্থী করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশও করেছিলেন। তবে শেষমেশ প্রায় সাড়ে আট হাজার ভোটে জয়ী হন চিকিৎসক নিখিলবাবু।

শহরের ডিএসপি টাউনশিপের বেশ কিছু অংশ, বিধাননগর, বন্ধ তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার আবাসনের ভগ্নাবশেষ এবং কাঁকসার আমলাজোড়া, গোপালপুর, মলানদিঘি পঞ্চায়েত নিয়ে দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা এলাকা। গত বার তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার পরেও বিস্তীর্ণ এলাকা চেনা ছিল না নিখিলবাবুর। অথচ, এখন তিনি সেই সব এলাকায় অত্যন্ত পরিচিত মুখ বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। সে কারণেই তাঁকে প্রার্থী না করায় চটেছেন অনেকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পাঁচ বছরে এলাকায় একাধিক স্কুলে নতুন ভবন গড়ে উঠেছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণের মতো কাজ হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধায়ক নিখিলবাবু বছর দুয়েক আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই সময়ে এডিডিএ-র পক্ষ থেকেও বেশ কিছু কাজ করা হয়েছে এলাকায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূলের জনা কয়েক পঞ্চায়েত সদস্য দাবি করেন, ‘‘সিপিএম আমলে আমাদের এলাকায় কোনও উন্নয়ন হয়নি। বিধায়ক হওয়ার পরে নিখিলবাবুর নেতৃত্বে একের পর এক কাজ হয়েছে। এলাকার মানুষ তাতে খুশি। অথচ নিখিলবাবুকেই আর প্রার্থী করা হল না!’’ নিখিলবাবুর বক্তব্য, ‘‘মানুষের কাজ করার আরও বড় পরিসরের জন্যই বিধায়ক হওয়া। দলের নিয়ম-নীতি মেনে সেটা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।’’

এই কেন্দ্রের এ বারের প্রার্থী প্রদীপবাবু ইতিমধ্যে কর্মীদের আশ্বাস দিয়েছেন, বহিরাগত হলেও ভোটের পরে তিনি তাঁদের পাশে থাকবেন। কিন্তু তাতেও যে ক্ষোভ পুরোপুরি যায়নি, তা সোমবার রাতের ঘটনাতেই পরিষ্কার। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই রাতে মলানদিঘির ডাকবাংলো মোড়ের কাছে বেশ কিছু দেওয়ালে নিখিলবাবুর সমর্থনে লেখা নজরে পড়ে। নতুন প্রার্থীর প্রচারে ব্যবহারের জন্য স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা দেওয়াল দখল করে রেখেছিলেন। সেই চুনকাম করা দেওয়ালেই রাতের অন্ধকারে কে বা কারা নীল রঙে লিখে দেয়, ‘নো নিখিল নো ভোট’। সকালে খবর ছড়িয়ে পড়তেই চুন দিয়ে সেই লেখা মুছে দেওয়া হয়।

দলেরই কেউ যে এ কাজ করেছে তা কাঁকসা ব্লক সভাপতি প্রদ্যোৎ চট্টোপাধ্যায়ের কথায় পরিষ্কার। তিনি বলেন, ‘‘দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে, নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে কেউ এমন কাজ করেছে। প্রার্থী নিয়ে দলে কোনও অসন্তোষ নেই।’’ তবে, তার আগেই খবর ছড়িয়ে পড়েছে বিধানসভা কেন্দ্র জুড়ে। দুর্গাপুর শহরের এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘বিধায়ক থাকাকালীন নিখিলবাবু বারবার এলাকায় গিয়েছেন। আরও অনেকের মতো ‘ডুমুরের ফুল’ হয়ে যাননি। তাই মানুষ তাঁকে মনে রেখেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assambly election vote campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE