মৃত ছাত্রী কোয়েল। নিজস্ব চিত্র।
শিক্ষকের কাছে পড়ে বাড়ি ফিরছিল কিশোরী। ট্রাকের ধাক্কায় রাস্তায় পড়ে যেতেই বছর তেরোর কোয়েল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথা থেঁতলে যায় ট্রাকের চাকায়।
পূর্ব বর্ধমানের রসুলপুরে জিটি রোডে দুর্ঘটনার পরে জনতা ট্রাকটিতে আগুন লাগিয়ে দেন। চালক, খালাসি পালান। যান নিয়ন্ত্রণের দাবিতে দফায় দফায় অবরোধ-বিক্ষোভে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের সঙ্গে যোগ দেয় স্কুল পড়ুয়ারা, শিক্ষকেরা। প্রায় চার ঘণ্টা ধুন্ধুমার চলে। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দাবি মানার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।
জাতীয় সড়ক হোক বা জিটি রোড পরপর দুর্ঘটনা লেগেই আছে জেলায়। সপ্তাহখানেক আগেই বর্ধমান শহরের ভেতর জিটি রো়ডে বেপরোয়া মোটরবাইকের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছিলেন এক মহিলা। গুরুতর জখম হন তাঁর স্বামী। সে দিনও ট্রাফিক পুলিশ না থাকা, ট্রাকের বেলাগাম গতি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন বাসিন্দারা। এ দিনও সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী কোয়েলের দেহ আগলে রেখে ব্যবসায়ী, স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ‘টোল’ ফাঁকি দিতেই ওই রাস্তা দিয়ে দশ-বারো চাকার ট্রাক বালি-পাথর নিয়ে যাতায়াত করে। ঘনবসতি এলাকায় ট্রাকের দাপাদাপিতেই ঘটে বিপদ। যানবাহনের গতিতে নিয়ন্ত্রণ ও পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তাঁরা। ততক্ষণে কোয়েলের স্কুল, বৈদ্যডাঙা বালিকা বিদ্যালয়ের অন্য পড়ুয়া ও শিক্ষকেরা জড়ো হয়ে যান। দুর্ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ মিটার দূরে ছাউনি টাঙিয়ে স্কুলের সময় রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের সুষ্ঠু ব্যবস্থার দাবিতে শুরু হয় অবরোধ। স্থানীয় বৈদ্যডাঙা বিএম বয়েজ স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষকেরাও চলে আসেন রাস্তার আর এক প্রান্তে। প্রধান শিক্ষক সুখেন্দু সাঁই, প্রধান শিক্ষিকা সুতপা সিংহ রায়েরা বলেন, “দুর্ঘটনায় আর যাতে কোনও পড়ুয়ার প্রাণ না যায়, তাই আমাদের পথে নামতে হয়েছে।”
দমকলের একটি ইঞ্জিন ট্রাকের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ কোয়েলের দেহটি উদ্ধার করে। পরে মেমারি থানার ওসি দীপঙ্কর সরকারের সঙ্গে সুখেন্দুবাবু, সুতপাদেবীদের আলোচনায় ঠিক হয়—সোম থেকে শনি সকাল ৯টা-১১টা এবং বিকেল ৩টে-৫টা পর্যন্ত যান নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ থাকবে। কোয়েলের মা আরতি বন্দ্যোপাধ্যায় কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। বাবা রেলকর্মী কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও মতে বলেন, ‘‘আমাদের যা যাওয়ার গিয়েছে! আর যেন কারও কোল খালি না হয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy