Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Tusu and Bhadu Festival end

ঢেঁকিছাটা চাল, টুসুগানে ফুরোল পৌষ

ঢেঁকিতে চাল গুঁড়োনো।

ঢেঁকিতে চাল গুঁড়োনো। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খণ্ডঘোষ, জামালপুর শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:০৯
Share: Save:

শেষ পৌষে জামালপুরের মাঠ শিয়ালি, কোড়া, রায়নার নতু, উচিতপুরের মতো বেশ কয়েকটি গ্রামে কান পাতলেই শুধু ভেসে আসে ঢেঁকির আওয়াজ। সাবেক ঢেঁকি আগলেই আয়ের রাস্তা খুঁজে বার করেছেন ওই সব গ্রামের মহিলারা।

ফি বছর মকর সংক্রান্তিতে পিঠেপুলি তৈরির জন্য ঢেঁকিছাঁটা চালের চাহিদা থাকে। কিন্তু ঢেঁকির অভাবে যন্ত্রেই চাল ভাঙাতে হয়। তবে দুই চালের পিঠের স্বাদের তফাত অনেকটাই। তাই অনেকেই খোঁজেন ঢেঁকিছাঁটা চাল। ওই সব গ্রামের মহিলাদের দাবি, ‘‘অনেক বাসিন্দাই যন্ত্রে চাল গুঁড়িয়ে পিঠে, সরুচাকলির মতো খাবার করতে চান না। তাঁরা আসেন আমাদের কাছে। তাঁদের জন্য বাড়তি আয়ের মুখ দেখি আমরাও।’’ তাঁদের দাবি, চাল গুঁড়িয়ে গত ১৫ দিনে তাঁদের হাজার দুয়েক টাকা আয় হয়েছে। জামালপুরের শিয়ালি গ্রামের বধূ কাকলি কোলের দাবি, “ঢেঁকিতে ভাঙানো চালের গুঁড়ি দিয়ে পিঠে-পুলি বানানোর স্বাদটাই আলাদা। তা ছাড়া ঢেকিতে ভাঙানো চাল অনেক দিন ধরে রেখে দেওয়া যায়।” আর এক বধূ কল্পনা কোলের দাবি, “ঢেঁকিতে চাল ভাঙাতে অনেকেই আসছেন। ভিড় জমে গেলে পুরুষেরাও আমাদের সাহায্য করেন। বাড়তি টাকা সংসারের কাজে লেগে যায়।’’ খণ্ডঘোষে গ্রামে আবার এই সময়ে পৌষ ‘আগলাতে’ রাতভর টুসু গানে মেতে থাকেন প্রান্তিক মানুষজনেরা।

রবিবার সন্ধ্যা থেকেই টুসু গানে মেতে ওঠে খণ্ডঘোষের ওঁয়ারি-সহ পাশ্ববর্তী কয়েকটি গ্রাম। ফাঁকা জায়গা বা খামার বাড়িতে চাঁদোয়া টাঙিয়ে পাড়ার মহিলারা জড়ো হন। মাটির পাত্রে টুসুর অবয়ব বানিয়ে চালের গুঁড়ো, সিঁদুর, কাজলের টিপ দেওয়া হয়। সাজানো হয় খেতের সর্ষে ফুলে। তাঁা গান ধরেন, ‘টুসুমনি মা গো, আলতা পরা পা গো’ কিংবা ‘সাজ দিলাম, সন্ধ্যা দিলাম, স্বর্গে দিলাম বাতি গো’। আবার চিরাচরিত গান ছেড়ে বর্তমানের সামাজিক সমস্যা নিয়েও গান বাঁধেন অনেকে। সেখানে ১০০ দিনের কাজে টাকা না পাওয়া, শৌচাগারের প্রয়োজনীয়তা, মেয়েদের স্কুলে পাঠানো থেকে কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও সুর তোলা হয়। ওঁয়ারি গ্রামের বেশ কিছু মহিলাকে সোমবার দুপুরেও মাইক বাজিয়ে বলতে শোনা যায়, ‘বসব না বিয়েতে/ যাব যে স্কুলে/ কতকাল আর থাকব অন্ধকারে/ চলো এ বার চেতনা জাগাই’।

রায়নার একটি স্কুলের শিক্ষিকা রুমা ঘোষ গড়াইয়ের দাবি, “মকর সংক্রান্তি বা পৌষ পার্বণকে ঘিরে গ্রাম বাংলায় নানা রকম রেওয়াজ ছিল। টুসু গাইতে গাইতে রাত জেগে পিঠে তৈরি হতো। ভোরে স্নান সেরে মিঠে রোদে পিঠে খাওয়ার মজাটাই ছিল আলাদা। কিছু গ্রাম সাবেক রীতি আগলে রাখছেন, তাঁদের কুর্ণিশ।” আদিবাসী ও লোকসংস্কৃতি সংগঠনের অন্যতম নেতা কার্তিক সাঁতরা বলেন, ‘‘টুসুগানের মধ্যে লোকজীবনের কথাই বরাবর থাকে। সামাজিক সচেতনার বিষয়টিও তারই অঙ্গ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Khandaghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE