Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ওষুধে নেশা করার চেষ্টা, মৃত্যু দু’জনের

পুলিশ জানায়, মৃত অরুণ রুইদাস (৪৭) জামালপুরের সাহাপুর গ্রামের ও ইমদাদুল শেখ (৪৭) বীরভূমের জৈষ্ঠ ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা। মঙ্গলবার রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অরুণবাবুর মৃত্যু হয়। বুধবার সকালে জামালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মৃত্যু হয় ইমদাদুলের।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামালপুর শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:২৪
Share: Save:

নেশা বাড়াতে হোমিয়োপ্যাথি ওষুধ খেয়েছিলেন চার জন। তাঁদের মধ্যে মৃত্যু হল দু’জনের। ওই ওষুধ বিক্রি করার জন্য পুলিশ এক হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে। আবগারি দফতর অভিযান চালিয়ে ওই ওষুধের বেশ কয়েকটি বোতল বাজেয়াপ্ত করেছে। জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই জানা যাবে কী কারণে দু’জনের মৃত্যু হল। প্রাথমিক তদন্তে কিছু তথ্য উঠে আসায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।’’

পুলিশ জানায়, মৃত অরুণ রুইদাস (৪৭) জামালপুরের সাহাপুর গ্রামের ও ইমদাদুল শেখ (৪৭) বীরভূমের জৈষ্ঠ ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা। মঙ্গলবার রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অরুণবাবুর মৃত্যু হয়। বুধবার সকালে জামালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মৃত্যু হয় ইমদাদুলের। আরও দু’জন জামালপুরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি রয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাহাপুর গ্রামে একটি বাড়ি তৈরির জন্য কিছু দিন আগে নির্মাণকর্মী হিসেবে বীরভূম থেকে কয়েকজন এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এক জন চিকিৎসাধীন।

ঘটনার পরে মৃতের পরিজন ও এলাকাবাসীর একাংশ দাবি করেন, ‘বিষমদ’ খেয়ে এমনটা ঘটেছে। এর পরেই জামালপুর থানার পুলিশ তদন্তে নেমে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। অসুস্থদের থেকে জানতে পারে, চোলাই বা কোনও মদ নয়, ‘সাদা রঙের তরল’ খেয়েছিলেন তাঁরা। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, হুগলির হরিপালের এক হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক জামালপুরের বেত্রাগড়ে নিয়মিত আসেন। তিনিই সাহাপুরের চার জনকে বোতলগুলি বিক্রি করেন বলে অভিযোগ।

রবিবার গ্রামে কালীপুজোর দিন এক বোতল ওই ওষুধ খান। ভাল নেশা হওয়ায় সোমবার চার জন ফের তিন বোতল ওই ওষুধ খান। তাতেই বিপত্তি বাধে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি রয়েছেন সাহাপুর গ্রামের বংশী পণ্ডিত ও বীরভূমের ভবানীপুর গ্রামের মনিরুল হক। মনিরুল বলেন, ‘‘মদ হিসেবে খেয়েছিলাম। নেশাও হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে বুকে জ্বালা ও বমি হতে শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করেন।’’

অরুণবাবুর দাদা অম্বুজ রুইদাসের দাবি, ‘‘মঙ্গলবার সকাল থেকেই পেটে ব্যথা করছিল ভাইয়ের। আমরা ভেবেছিলাম, অতিরিক্ত মদ খাওয়ায় ব্যথা হচ্ছে। ব্যথা কমছে না দেখে চোলাই খেয়ে বিপদ হল কি না, সেই আশঙ্কাও হচ্ছিল।’’ তিনি জানান, প্রথমে জামালপুর, সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন ভাইকে। সেখানেই চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা সুনীল রুইদাসের দাবি, নির্মীয়মাণ বাড়িতে বসে চার জন নেশা করেন। আবগারি দফতরের সুপার তপন মাইতি, বর্ধমানের ওসি শশীভূষণ মাইতি ঘটনাস্থলে গিয়ে বেশ কয়েক বোতল হোমিয়োপ্যাথি ওষুধ বাজেয়াপ্ত করেন।

কলকাতার বিশিষ্ট হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যে কোনও ওষুধই নির্ধারিত মাত্রার বেশি ব্যবহার করলে সেটি বিষে পরিণত হয়। তবে ওই হোমিয়োপ্যাথি ওষুধটি খেয়ে কারও মৃত্যু হতে পারে না।’’ বর্ধমান হোমিয়োপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসক তারক সরকার বলেন, ‘‘ওই ওষুধে ভাল মাত্রায় অ্যালকোহল থাকে। আমার ধারণা, ওই ওষুধের সঙ্গে আরও কিছু মেশানো হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drug Addiction Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE