রোদে-গরমে ঘেমে নেয়ে বাসের জন্য বহু মানুষ অপেক্ষা করছেন কাটোয়া বাসস্ট্যান্ডে। আচমকা কানে ভেসে এলো কয়েকটি গানের কলি। একতারার সুরে শোনা গেল, ‘ভোট দেওয়ার সময় হল, ভোটের দিন চলে এল। একুশে এপ্রিল ভোট দিতে চলো সকলে।’ বর্ধমানের নানা জায়গায় এভাবেই গান গেয়ে মানুষকে ভোট সম্পর্কে সচেতন করছেন বাউল শিল্পী স্বপন দত্ত।
সারা বছরই জেলা জুড়ে বাউল গেয়ে বেড়ান বর্ধমানের খাজা আনোয়ার দেড় এলাকার বাসিন্দা স্বপনবাবু। মাঝে মাঝে রাজ্যের বাইরে নানা অনুষ্ঠানেও ডাক পড়ে তাঁর। বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানেও তাঁকে ডাকা হয়। গানের জন্য পুরস্কারও পেয়েছেন অনেক। স্বপনবাবু জানান, গান গাওয়া তাঁর কাছে পেশা নয়। গান গাইতে ভালবাসেন বলেই গান করেন। নিজে গান লিখে, সুর দিয়ে তা মানুষকে শোনাতে পারাটাই তাঁর কাছে বড় পাওয়া।
এ বারও তাই নির্বাচনের আগে প্রায় একশোটি গান লিখে ফেলেছেন স্বপনবাবু। তারপরে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের অনুমতি নিয়ে দুর্গাপুর, আসানসোল, বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করা শুরু করেছেন তিনি। স্বপনবাবু জানান, শিল্পা়ঞ্চলে ভোট মিটে যাওয়ার পরে এখন অনুষ্ঠান করছেন মূলত কাটোয়া ও কালনায়ে। গানের মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষকে আবেদন করছেন অন্যের কথায় প্রভাবিত না হয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে। বোঝানোর চেষ্টা করছেন ভোটদানের গুরুত্ব সম্পর্কে। একই সাথে ভোটার কার্ড ছাড়াও অন্য পরিচয়পত্র দেখিয়েও যে ভোট দেওয়া যায়, সে কথাও গানের মাধ্যমে প্রচার করছেন।
ভোটারেররাও জানাচ্ছেন, ফ্লেক্স-ব্যানারের চেয়ে গানের মধ্যে দিয়েই সহজে মনে গেঁথে যাচ্ছে ভোটের কথা। কাটোয়ায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন রাখহরি ঘোষ, শান্ত দাস, ফিরদৌস বেগমেরা। তাঁরা জানান, দেওয়াল লিখন, ফেস্টুনের চেয়ে গান শুনে অনেক সহজে তাঁরা ভোটের খুঁটিনাটি জানতে পারলেন। বুঝতে পারলেন ভোট দানের গুরুত্ব। একই মত কাটোয়া বাসস্ট্যান্ডের বাসশ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক নারু সেনের। তিনি জানান, গান শুনতে ভালবাসেন না, এমন মানুষ দেখা যায় না। আর বাসস্ট্যান্ডে এই অনুষ্ঠান হওয়ায় বহু পথচলতি মানুষ তা শুনতে পারছেন।
কাটোয়া মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের তথ্য আধিকারিক রেখা সরকার জানান, নির্বাচনের প্রচারে স্বপনবাবু কাটোয়া চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড, পৌরসভা মোড়, নিচু বাজারে-সহ কাটোয় ও কালনার বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় প্রচার করবেন। যদিও এই কাজের জন্য কোনও পারিশ্রমিক নিচ্ছেন না স্বপনবাবু। তিনি জানান, প্রচারের জন্য তাঁকে পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় নাগরিক হিসেবে এটা তাঁর কর্তব্য। তাঁর শিল্পসত্ত্বা যে মানুষকে সচেতন করার কাজে লাগাতে পারছেন, এটাই বড় ব্যাপার তাঁর কাছে। তাঁর স্ত্রী কুমকুমদেবী জানান, প্রথম থেকেই গান পাগল স্বপনবাবু। গান নিয়ে সারা বছর ঘুরে বেড়ান তিনি। ভোটের মতো বড় কাজে প্রচারের দায়িত্ব স্বপনবাবু পাওয়ায় খুশি কুমকুমদেবীও।