Advertisement
০৫ মে ২০২৪

জঙ্গলে তাঁবু টাঙিয়ে কাঠির খোঁজ

সন্ধে নামছে জঙ্গলে। অদূর থেকে ভেসে এল, ‘চল আজ আর নয়। ভাত চড়াতে হবে।’ ঠাকুমার কথা শুনে কাঠির গোছা বাঁধতে শুরু করেন নাতনি। ওঁরা বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে এসে মাসখানেকের জন্য তাঁবু খাটিয়েছেন দুর্গাপুরের জঙ্গলে। শিরিষ কাঠি সংগ্রহ করার কাজ চলছে।

দিনান্তে: দুর্গাপুরে জঙ্গল থেকে কাঠি সংগ্রহ করে ফিরছেন মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

দিনান্তে: দুর্গাপুরে জঙ্গল থেকে কাঠি সংগ্রহ করে ফিরছেন মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৭ ০০:৫৬
Share: Save:

সন্ধে নামছে জঙ্গলে। অদূর থেকে ভেসে এল, ‘চল আজ আর নয়। ভাত চড়াতে হবে।’ ঠাকুমার কথা শুনে কাঠির গোছা বাঁধতে শুরু করেন নাতনি। ওঁরা বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে এসে মাসখানেকের জন্য তাঁবু খাটিয়েছেন দুর্গাপুরের জঙ্গলে। শিরিষ কাঠি সংগ্রহ করার কাজ চলছে। শাল পাতার থালা-বাটি বোনার কাজে লাগে এই কাঠি। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা প্লাস্টিক দূষণ রুখতে হালে শাল পাতার জিনিস ব্যবহার জোর দিচ্ছে। আর তা দেখে এ বার অন্য বছরের তুলনায় উৎসাহটা খানিক বেশি ওঁদের।

সুখদা মাহাতো। বয়স চল্লিশের আশেপাশে। বাড়ি বাঁকুড়ায়। তিনি জানান, ঠাকুরদার হাত ধরে প্রথম দুর্গাপুরের জঙ্গলে আসা। এ বারেও তিনি এসেছেন। কেন? সুখদাবাবু বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় শালপাতা দেদার মেলে। কিন্তু ভাল শিরিষ কাঠির জঙ্গল তো এখানেই।’’ আর তাই পাতা ঝরার মরসুম শুরু হলেই ওঁরা দলে দলে ট্রেনে, বাসে চড়ে ভিড় জমান দুর্গাপুরে। এপ্রিল পর্যন্ত চলতে থাকে কাঠি সংগ্রহের কাজ।

জঙ্গলের দিন গুজরান কী ভাবে হয়? একটি তাঁবুতে ঢুকে আড্ডা দিতে দিতে জানা গেল তাঁদের প্রতি দিনের রুটিনটা। ভোর হতেই কাঠি সংগ্রহ করতে জঙ্গলের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েন ওঁরা। বেলাশেষে কাঠির গোছা মাথায় করে তাঁবুতে নিয়ে আসেন মহিলারা। খানিক জিরিয়ে শুরু হয় কাঠের উনুন থেকে ধোঁয়া ওঠে। সেদ্ধ ভাত, খানিক নুন মিশিয়ে তৈরি হয় রাতের খাবার। রাত ঘুম শেষে ফের কাজ। ভাল লাগে প্রতি দিন এমন রুটিন? প্রশ্ন শুনেই মিঠুরানি দুলে বলেন, ‘‘একটু কষ্ট হয় বটে। কিন্তু এখন কষ্ট করলে বছরভর আর চিন্তা থাকে না।’’

এক একটি দলে সাত-আট জন রয়েছেন। তাঁবুতে কাজেরও ভাগ রয়েছে বলে জানা গেল। এক জন জানান, দলের পুরুষ সদস্যরা সাধারণত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। কাঠি সংগ্রহের কাজ মূলত মহিলারাই করেন। কাঠি সংগ্রহ করতে করতেই এক জন মা বলেন, ‘‘বছরের এই সময়টাই একটু মন খারাপও করে। ছোট ছেলেটাকে যে ঘরে রেখে এসেছি!’’

সম্প্রতি পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে পিকনিক দলকে শালপাতার থালা-বাটি সরবরাহ করার কথা জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা, খবরটা শুনেছেন বাঁকুড়া থেকে আসা একটি দলের প্রবীণ সদস্য। তাঁর আশা, ‘‘এমন উদ্যোগে শালপাতার কদর বাড়লে আমাদের ছেলেমেয়েরাও ভাল থাকবে।’’

উৎসাহ, পরিশ্রমের মাঝেই খুনসুটিও চলে দেদার। কান পাতলে শোনা যায় তরুণ-তরুণীর ‘মিঠে কানাকানি’। আর এ সবের মাঝেই নিত্য সংগ্রাম, বেঁচে থাকার জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution Sal Leaf Plates
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE