Advertisement
E-Paper

বড় বাস সভায়, টান পড়বে মিনিতেও

লক্ষ্য অন্তত দেড় লক্ষ লোক নিয়ে যাওয়া। বেশি হলেও ক্ষতি নেই। কলকাতায় ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যেতে শাসকদলের ভরসা বড় বাস ও ট্রেন। ফলে, রাস্তায় বেরিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার ভোগান্তি চরমে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিল্পাঞ্চলের নিত্যযাত্রীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৬ ০০:৩২
বুধবার থেকেই নিয়ে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু বাস। আসানসোলে তোলা নিজস্ব চিত্র।

বুধবার থেকেই নিয়ে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু বাস। আসানসোলে তোলা নিজস্ব চিত্র।

লক্ষ্য অন্তত দেড় লক্ষ লোক নিয়ে যাওয়া। বেশি হলেও ক্ষতি নেই। কলকাতায় ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যেতে শাসকদলের ভরসা বড় বাস ও ট্রেন। ফলে, রাস্তায় বেরিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার ভোগান্তি চরমে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিল্পাঞ্চলের নিত্যযাত্রীরা। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য এই পরিস্থিতি হবে আঁচ করে আগেই ক্ষমা চেয়ে রেখেছেন।

তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন জানান, শিল্পাঞ্চল থেকে এ বার দেড় লক্ষ লোকের জমায়েত করা হবে সমাবেশে। আসানসোল ও দুর্গাপুর থেকে এই সমাবেশে পৌঁছনোর সহজ উপায় ট্রেন। এখান থেকে বেশির ভাগ লোকজন সে ভাবেই যাবেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী জেলা বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার একটি বড় অংশের মানুষজনকে সেখানে যেতে ভরসা করতে হচ্ছে বাসের উপরে। আর সে জন্য অনেক বড় বাস নেওয়া হচ্ছে বর্ধমানের শিল্পাঞ্চল থেকে। বুধবার থেকেই সেই সব বাস রুটে চলাচল করেনি। ফলে, এ দিনও খানিক সমস্যায় পড়েছেন যাত্রীরা।

আসানসোল, বরাকর থেকে দূরপাল্লায় যাতায়াতকারী প্রায় ৭০টি রুটের বাস নেওয়া হয়েছে বলে বাস মালিকদের সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে। সংগঠনের কোষাধক্ষ্য বিজন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমাবেশে যাওয়ার জন্য বাসগুলি তুলে নেওয়ায় বুধবার সকাল থেকেই বেশ কিছু রুটে বাস চলেনি। বৃহস্পতিবারও একই পরিস্থিতি থাকবে।’’ তিনি জানান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষজনকে সমাবেশে নিয়ে যেতে বাসই একমাত্র ভরসা। তাই শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের দূরপাল্লার বাসগুলি সেখানে ভাড়ায় নেওয়া হয়েছে।

একই পরিস্থিতি দুর্গাপুরেও। বাঁকুড়া, বোলপুর, বর্ধমান বা আসানসোল— দুর্গাপুর থেকে সব রুটের বড় বাসই তৃণমূলের সমাবেশের জন্য নিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আইএনটিইউসি প্রভাবিত ‘দুর্গাপুর বাস ওয়ার্কমেন্স অ্যাসোসিয়েশন’ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া রুটে প্রায় ১২৭টি বাস চলে। এ ছাড়া আসানসোলে ১৬টি, বর্ধমান ও বোলপুরে ২৬টি বাস চলাচল করে। বেশির ভাগই আজ, বৃহস্পতিবার থাকবে না বলে জানান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে, যাত্রী পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা থাকছেই।

দুর্গাপুরের ওই বাস মালিক সংগঠনের নেতা স্বপনবাবু অভিযোগ করেন, মাঝ রাস্তা থেকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাস নিয়ে নেওয়া হয়েছে। আগে থেকে তৃণমূলের কেউ হয়তো ‘রিজার্ভ’ করে রেখেছিলেন সেই বাস। কিন্তু তাদের দলেরই অন্য গোষ্ঠীর হাত থেকে রেহাই মেলেনি। প্রতিবাদ করায় বাসকর্মীদের হুমকিও শুনতে হয়েছে অভিযোগ করে স্বপনবাবুর বক্তব্য, ‘‘বাঁকুড়ার রুটগুলিতে এই ধরনের অভিযোগ বেশি উঠেছে। কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা আতঙ্কিত।’’

আসানসোল-দুর্গাপুর থেকে কোনও মিনিবাস সমাবেশে যাচ্ছে না। তবে বুধবার মাঝ রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত শিল্পাঞ্চলের নানা এলাকা থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বোঝাই করে স্টেশনে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মিনিবাস নেওয়া হচ্ছে বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। আসানসোলে প্রায় ৪০টি মিনিবাস ভাড়া করা হয়েছে সে জন্য। আসানসোলের মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, ‘‘মাত্র ৪০টি বাস ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তা-ও বুধবার রাত ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত। রুটে বাসের সংখ্যা কম হওয়ার কথা নয়।’’ কিন্তু আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ‘মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া দাবি করেন, পরিবহণ কর্মীরা প্রায় প্রত্যেকেই কলকাতার সমাবেশে যাবেন। সেক্ষেত্রে চালক-খালাসির অভাবে অন্য দিনের তুলনায় বাসের সংখ্যা কম থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা।

সমাবেশে যাওয়া লোকজনের ভিড়ের জন্য ট্রেনেও সমস্যা হবে বলে আশঙ্কা করছেন নিত্যযাত্রীরা। অনেক সময়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় পতাকা হাতে প্রচুর লোকজন উঠে পড়ায় নাজেহাল হতে হয়েছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। ভি শিবদাসনের অবশ্য দাবি, ট্রেনে সাধারণ যাত্রীদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় তা দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে যাওয়া কর্মীদের সহায়তার জন্য আসানসোল স্টেশনে তৃণমূলের যুব কর্মীরা শিবির করেছেন।

শুধু শিল্পাঞ্চল নয়। সমাবেশে যাওয়ার জন্য বহু বাস নেওয়া হয়েছে জেলার গ্রামীণ এলাকা থেকেও। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, জামালপুর থেকে ৬৫, রায়নায় ১০৩, খণ্ডঘোষে ১১০টি, বর্ধমান শহরের ৩৯, মন্তেশ্বরে ৫৩, ভাতারে ১৮, আউশগ্রামে ১৫, মঙ্গলকোটে ২৩ এবং কেতুগ্রামে ১৮টি বাস ভাড়া করা হয়েছে। বুধবার বিকেলের পর থেকেই রায়না, জামালপুর, খণ্ডঘোষে বাস না থাকায় সমস্যা তৈরি হয় বলে যাত্রীদের অভিযোগ। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সব জায়গাতেই দুপুরে দলের কর্মী-সমর্থকদের মাংস-ভাত খাওয়ানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। এ ছাড়া কোনও এলাকা থেকে সকালে বাসে যাওয়ার সময়ে মুড়ি-ঘুগনি, কেউ আবার বিকেলে ফেরার পথে শক্তিগড়ে ল্যাংচা খাওয়ানোর বন্দোবস্ত রাখছেন।

tmc distress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy