Advertisement
০৯ মে ২০২৪

জেলা ভাগে কোন দিকে, দোটানায় কাঁকসা-গলসি

জেলা ভাগ নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হতেই সংশয় দানা বেঁধেছে কাঁকসা-গলসিতে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বিধানসভা কেন্দ্র ভাগ করা যাবে না। ফলে দুর্গাপুর মহকুমার কোন এলাকা বর্ধমানে থাকবে, কোন এলাকা নতুন জেলায়, তা নিয়ে দোটানা দেখা দিয়েছে।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০২:০৫
Share: Save:

জেলা ভাগ নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হতেই সংশয় দানা বেঁধেছে কাঁকসা-গলসিতে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বিধানসভা কেন্দ্র ভাগ করা যাবে না। ফলে দুর্গাপুর মহকুমার কোন এলাকা বর্ধমানে থাকবে, কোন এলাকা নতুন জেলায়, তা নিয়ে দোটানা দেখা দিয়েছে।

কাঁকসা, গলসির বাসিন্দারা জেলা সদর আসানসোল হবে বলে মনে করছেন। সেক্ষেত্রে কাঁকসার বিদবিহার পঞ্চায়েতের মানুষজন জেলা সদর থেকে দূরত্বের কথা বিবেচনা করে বর্ধমানে থাকার পক্ষে নন। গলসি ১ ব্লকের বাসিন্দারা আবার সেই কারণেই আসানসোল নয়, বর্ধমানে থাকতে চান। প্রশাসনের কর্তাদের অবশ্য দাবি, সব দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত হবে। এখন থেকে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্রের নেতৃত্বে প্রশাসনিক সংস্কার কমিটি বর্ধমান জেলা ভাগের সুপারিশ করে। তবে সিপিএমের তরফে বাধা আসায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বর্ধমান জেলা ভাগের কথা জানান। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে জেলা পুলিশ থেকে আলাদা করে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট গড়া হয়। আসানসোল পৃথক স্বাস্থ্যজেলা হিসেবেও ঘোষিত হয়। জেলা পরিষদের আসানসোল অফিস ঢেলে সাজে। তৃণমূল, কংগ্রেসের মতো রাজনৈতিক দলগুলিও জেলার সংগঠন গ্রামীণ ও শিল্পাঞ্চল হিসেবে ভেঙে দেয়। একমাত্র সিপিএমের জেলা কমিটি এখনও অটুট রয়েছে।

২০১২ সালে সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে তৎকালীন জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বৈঠক করেন। সেখানে নতুন জেলার ভূগোল মোটামুটি ভাবে ঠিক করে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। নতুন জেলার নামকরণ নিয়েও নানা প্রস্তাব উঠে আসে। তখন থেকেই কাঁকসা, গলসি কোন দিকে যাবে— তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, গলসি বিধানসভা গ্রামীণ বর্ধমানে থাকবে। এ দিকে, কাঁকসার বিদবিহার, বনকাটি, ত্রিলোকচন্দ্রপুর ও কাঁকসা গ্রাম পঞ্চায়েত পড়ছে গলসি বিধানসভায়। বাকি আমলাজোড়া, গোপালপুর ও মলানদিঘি দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের অন্তর্গত। ফলে, কাঁকসা ব্লক ভাঙার প্রস্তাব ওঠে। সিপিএমের তরফে তাতে আপত্তি জানানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ধোপে টেকেনি। ফলে শেষ তিনটি পঞ্চায়েত নতুন জেলার ভাগে পড়ার কথা।

কাঁকসা পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ছে এলাকা পানাগড়। এই এলাকার অনেকেরই শিল্পাঞ্চল থেকে আলাদা হওয়ার ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে। তাঁদের দাবি, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের সম্প্রসারিত এলাকার মধ্যেই পড়ে পানাগড়। বেশ কিছু কল-কারখানা গড়ে উঠেছে এখানে। তাই চরিত্রগত দিক থেকে এই এলাকা শিল্পাঞ্চলের মধ্যেই থাকা উচিত। অজয়ের ধারে বিদবিহার এলাকার বাসিন্দাদেরও দাবি, আসানসোল যাওয়া সুবিধের। বর্ধমান প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে।

পুরো গলসি ১ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েত এবং গলসি ২ ব্লকের গলসি ও কুরকুবা পঞ্চায়েত গলসি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ছে। গলসি ১ ব্লকের বাসিন্দারা মনে করছেন, দুর্গাপুর মহকুমার অংশ হিসেবে তাঁদের ব্লকটি নতুন জেলার মধ্যে পড়বে। সেক্ষেত্রে প্রশাসনিক প্রয়োজনে তাঁদের আসানসোলে যেতে হবে। কিন্তু বাসিন্দাদের অনেকের দাবি, বর্ধমান শহর থেকে বেশ কিছু এলাকার দূরত্ব ২৫ কিলোমিটারেরও কম। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল। সেখানে আসানসোল প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে। গলসি যাতে গ্রামীণ বর্ধমানেই থাকে, সেই আর্জি জানিয়ে বেশ কিছু বাসিন্দা ইতিমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সাইদুল হকের দাবি, ভৌগলিক কারণে গলসি গ্রামীণ বর্ধমানের মধ্যে থাকা দরকার। তা না হলে বাসিন্দারা সমস্যায় পড়বেন।

স্পষ্ট ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ধোঁয়াশা আর হিসেব-নিকেশই সঙ্গী কাঁকসাও গলসিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

District confusion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE