Advertisement
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
আড্ডার ঠেক

প্রতিবাদে ভয়, প্রবীণের আড্ডায় প্রশ্ন

দুর্গাপুরে প্রবীণ ও নবীন প্রজন্মের আড্ডা চলছে কী ভাবে, আড্ডার বিষয়ই বা কী, এমনই নানা বিষয়ের সন্ধানে আনন্দবাজার।আড্ডার ঠেক বসেছে সেল কো-অপারেটিভের মাঠে। সন্ধ্যা নেমেছে কিছুক্ষণ। জড়ো হয়েছেন কয়েক জন প্রবীণ। সকলেই ডিএসপি ও এএসপি-র প্রাক্তন কর্মী। এই আড্ডার চরিত্র, সুব্রত সরকার, নিখিল চৌধুরী, স্বপন গোস্বামী, অনিমেষ দাশগুপ্ত, রবীন্দ্রনাথ কর্মকার, বিকাশ গুহ, অশোক চট্টরাজ প্রমুখ।

জমেছে আড্ডা। ছবি: বিকাশ মশান

জমেছে আড্ডা। ছবি: বিকাশ মশান

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:১০
Share: Save:

ওঁরা আড্ডায় বসেন, নিয়ম করে প্রতি সন্ধ্যায়। সমাজ থেকে রাজনীতি, পারিবারিক কথাবার্তা, সংস্কৃতির নানা অলিগলি সবই তাঁদের আড্ডার বিষয়। ওঁরা দুর্গাপুর শহরের কয়েক জন প্রবীণ। সেই আড্ডার মাঝেই প্রবীণ চোখগুলো কেমন যেন চকচক করে ওঠে ফেলে আসা দিনের অধিকার বুঝে নেওয়ার প্রখর লড়াইয়ের কথা বলতে গেলে।

কেমন সেই সব রোমন্থন? খুঁজতে খুঁজতে যাওয়া দুর্গাপুর শহরের কবিগুরু বাসস্ট্যান্ডের কাছে। আড্ডার ঠেক বসেছে সেল কো-অপারেটিভের মাঠে। সন্ধ্যা নেমেছে কিছুক্ষণ। জড়ো হয়েছেন কয়েক জন প্রবীণ। সকলেই ডিএসপি ও এএসপি-র প্রাক্তন কর্মী। এই আড্ডার চরিত্র, সুব্রত সরকার, নিখিল চৌধুরী, স্বপন গোস্বামী, অনিমেষ দাশগুপ্ত, রবীন্দ্রনাথ কর্মকার, বিকাশ গুহ, অশোক চট্টরাজ প্রমুখ।

আড্ডার নান্দীমুখ ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছে। এখানে আসা কেন? প্রশ্ন শুনেই বেঙ্গল অম্বুজার বাসিন্দা সুব্রত সরকার বললেন, ‘‘আমরা কিন্তু উদ্দেশ্যহীন ভাবে এখানে জড়ো হই না। অন্যের ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ, রাজ্য-রাজনীতি, সব নিয়েই আলাপ হয়।’’ কিন্তু নিন্দুকেরা যে বাঙালির আড্ডাপ্রিয় চরিত্রকে নেতিবাচক বলেন, তা নিয়ে কী মনে হয়? নিখিলবাবু খানিকটা জোরের সঙ্গেই বলেন, ‘‘একদম ভুল কথা। ফি দিনের জীবন থেকে বেরিয়ে এসে আড্ডা আমাদের মানসিক ভাবে সতেজ রাখে।’’ আড্ডার সময় বয়ে চলে। ওঠে, বর্তমান সময়ের নানা অন্যায়, অবিচারের কথা। সে কথা উঠতেই চোয়াল শক্ত হয় স্বপন গোস্বামীর। বলেন, ‘‘আমরা তো অধিকার আদায় করেছি লড়াই করে। কিন্তু এখন মানুষ যেন কেমন প্রতিবাদ জানাতেই ভয় পাচ্ছেন।’’ সেই সঙ্গে পাশ থেকে চাকরির বাজার, কর্মহীনতা ইত্যাদি প্রসঙ্গও আসতে থাকে আড্ডার নিয়ম মেনেই।

হঠাৎ প্রসঙ্গ বদল, নাট্যশিল্পী অনিমেষবাবুর সৌজন্যে। সাম্প্রতিক সময়ে বাক্-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে বার বার। এই ‘হস্তক্ষেপ’ বোধহয় মঞ্চেও প্রভাব ফেলছে, মনে করেন অনিমেষবাবু। সাম্প্রতিক সময়ে গৌরী লঙ্কেশ ও সুজাত বুখারির হত্যাকাণ্ড, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে কানহাইয়া কুমারের বিতর্কিত বক্তৃতা প্রসঙ্গ সেই ‘হস্তক্ষেপে’র অভিযোগকে আরও উস্কে দিয়েছে।

অনেকেরই ছেলেমেয়ে কর্মসূত্রে শহরে ছেড়েছেন। শহরে রয়ে গিয়েছেন প্রবীণ বাবা-মা। তাঁরা সকলেই আড্ডার সঙ্গী। রবীন্দ্রনাথবাবু, বিকাশবাবু, সোমনাথ সিংহ, মনোজকান্তি তালুকদার-সহ অন্যরা জানান, ছেলেমেয়েদের অনুপস্থিতিতেও তাঁরা পিকনিক, হোলি খেলা, বড়দিনের কেক খাওয়ার আনন্দে মেতে ওঠেন। কেউ অসুস্থ হলে সকলে মিলে ঝাঁপিয়ে পড়া, তাতেও দেরি হয় না।

এই আড্ডা-পরিবার অবশ্য তৈরি হয়েছিল আগেই। খণ্ড-খণ্ড ভাবে। কারখানায় কাজ করার সময়ে, টাউনশিপের বাসিন্দা থাকার সময়ে। অবসরের পরে সেই পরিবারই আবার জোট বেঁধেছে এবং আওয়াজ তুলেছে ‘জয়তু আড্ডা’। দুর্গাপুরের এই আড্ডাবাসীদের দেখলে তাই মনে হয়, দীপেশ চক্রবর্তী কেনই বা আড্ডা নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা করেন ‘প্রভিনসিয়ালাইজিং ইউরোপ’ বইতে। কেনই বা আড্ডার স্বরূপ সন্ধান করেন বুদ্ধদেব বসু বা গোপাল হালদারেরা।

কিন্তু এ তো গেল প্রবীণদের আড্ডা, নবীন প্রজন্ম কোথায় আড্ডা দেয়, তাঁদের আড্ডার বিষয়ই বা কী, রয়েছে সে সব কৌতূহলও।

অন্য বিষয়গুলি:

Chit-Chat Senior Citizen Protest Fear Question
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy