কালনার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে নাচ খুদে, তরুণীদের। —নিজস্ব চিত্র।
সবে আলো ফুটেছে। ছুটির মেজাজে তখনও বিছানা ছাড়েননি বেশির ভাগই। আচমকা সুরেলা কণ্ঠে ভেসে এল ‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল, লাগল যে দোল’। চোখ কচলে জানালার খড়খড়ি তুলে, কিংবা গ্রিলের বারান্দার ফাঁক দিয়ে সুরের উত্স সন্ধানে ঝুঁকে পড়ল বহু মুখ। রাস্তায় তখন শ’য়ে শ’য়ে উড়ছে হলুদ প্রজাপতি।
শহর কালনায় দোলের দিনটা শুরু হল এভাবেই। অবাক চোখে শহরবাসী দেখলেন বড় রাস্তা জুড়ে শ’দেড়েক খুদের সঙ্গে তরুণীরা মিলে কেউ গান গেয়ে, কেউ নেচে চলেছেন রাস্তা দিয়ে। রবি ঠাকুরের সুরে, লাল-হলুদ শাড়ি, উত্তরীয়, পলাশে কালনা না শান্তিনিকেতন বোঝা দায়।
সরস্বতী পুজো, মহিষমর্দিনী উত্সবে গা ভাসিয়ে অভ্যস্ত এ শহরের দিনলিপিতে এ বার ঢুকে পড়ল বসন্তোত্সবও। অন্য বারের দু’দিন ধরে দোল খেলা, টুকটাক সাংস্কৃতির অনুষ্ঠান, রঙের বালতিতে পিচকিরি ডুবিয়ে রাখার মেজাজ থেকে যা অনেকটাই আলাদা। বৃহস্পতিবার শহরকে এমন ভিন্ন স্বাদ দিল উদিচি নামে মহিলাদের একটি সংস্থা। তাঁদের কেউ চাকুরিরতা তরুণী, কেউ গৃহবধূ কেউ বা স্কুল-কলেজের পড়ুয়া।
এ দিন শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে পথচলা শুরু করেন তাঁরা। তারপর রাস্তায় ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে পুরো শহর পরিক্রমা করেন। কোথাও সাজানো লাঠি, কোথাও খঞ্জনি ছিল তাঁদের নাচের সঙ্গী। সাতসকালে যানজটহীন শহরে সহজেই এক রাস্তা থেকে অন্য রাস্তায় চলছিল দলটি। খোপা থেকে ঝরে পড়া পলাশে, আবিরে রাস্তাতেও বসন্ত নেমেছিল। কচিকাচাদের অনাবিল হাসি বলে দিচ্ছিল শহরবাসীকে আনন্দ দেওয়াই একমাত্র নয়, নতুন রকমের দোল খেলে তারাও খুশি। শেষে থানার গা ঘেঁষে গোপালবাড়িতে পৌঁছয় দলটি। সেখানে গিয়ে শহর পরিক্রমা শেষ হয়। এরপরে গোপাল দেবতাকে লাড্ডু ভোগ দিয়ে মন্দিরে উত্সব শুরু হয়। মন্দিরের চাতালে রবীন্দ্রসঙ্গীত গান অনেকেই। নাচ করে খুদেরা। উদিচির তরফে অসীমা তালুকদার বলেন, “বসন্ত উত্সবে শহরবাসীকে একটু অন্য রকম স্বাদ দিতেই এমন উদ্যোগ। এ বার সময়ের অভাবে বেশ কিছু পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়িত করতে পারিনি। চেষ্টা থাকবে আগামী বছর একই রকম ভাবে ঘুম ভাঙিয়ে শহরবাসীকে চমকে দেওয়ার।”
শুধু উদিচিই নয়, বুধবার সন্ধ্যায় শহরের অন্য একটি সংস্থাও রাস্তায় ঘুরে ঘুরে নাচগানে মাতোয়ারা হয়। ওই দলেও মহিলাদের সঙ্গে ছিল এনেক খুদেরা। রাস্তায় ভিড় করে মানুষ তাদের নাচগান দেখেন। শহরের জগন্নাথতলা থেকে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়ে শেষ হয় রাজবাড়ি কমপ্লেক্সে। শহরের এক বাসিন্দা রমেন মল্লিক বলেন, “মেয়েরা এ বার চমকে দিয়েছে। দোলের দিনের সকালটা শান্তিনিকেতনের বসন্ত উত্সবকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল।”
শান্তিনিকেতনী ধাঁচে অনুষ্ঠানই নয়, শহরের চকবাজার, ১০৮ শিবমন্দির চত্বর, সাহু সরকারের মোড়ের মতো বহু জায়গাতেই এ বার হোলির দিন বজরঙ্গবলির আরাধনা হয়। রাতে বসে পংক্তি ভোজের আসর। শুক্রবার সকাল থেকেই রাস্তায় রাস্তায় রঙবেরঙের চুল লাগিয়ে, মুখোশ পরে ঘুরতে দেখা যায় কমবয়েসী ছেলেমেয়েদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy