Advertisement
১৮ মে ২০২৪

অনুষ্ঠানে দেদার শব্দবাজি, চড়া গানে ব্যতিব্যস্ত শহর

জনা কয়েক জড়ো হয়ে পিকনিক বা পাড়ার মোড়ে সন্ধ্যায় গানের অনুষ্ঠান, আয়োজন যা-ই হোক হাজির বড় বড় সাউন্ড বক্স। অনুমতি নেওয়ার বালাই নেই, আশপাশের বাসিন্দাদের সুবিধা-অসুবিধা ভাবারও দায় নেই, চড়া স্বরে বাজানো শুরু হয়ে যায় সে সব। আর বিয়েবাড়ি মানে দেদার শব্দবাজি।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৪ ০৬:১৯
Share: Save:

জনা কয়েক জড়ো হয়ে পিকনিক বা পাড়ার মোড়ে সন্ধ্যায় গানের অনুষ্ঠান, আয়োজন যা-ই হোক হাজির বড় বড় সাউন্ড বক্স। অনুমতি নেওয়ার বালাই নেই, আশপাশের বাসিন্দাদের সুবিধা-অসুবিধা ভাবারও দায় নেই, চড়া স্বরে বাজানো শুরু হয়ে যায় সে সব। আর বিয়েবাড়ি মানে দেদার শব্দবাজি। গত কয়েক বছর ধরে এই শব্দ দূষণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন আসানসোল শিল্পাঞ্চলের মানুষ। এই সমস্যা দূর করতে এ বার শহরের অনুষ্ঠান বাড়িগুলিকে কড়া নজরদারির মধ্যে আনা হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, একাধিক অনুষ্ঠান বাড়িতে মাত্রাতিরিক্ত আওয়াজে সাউন্ডবক্স বাজানো ও শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ উঠেছে। পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত জানান, বিষয়টি বেশ উদ্বেগের হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকটি অনুষ্ঠান বাড়ির মালিককে এই অভিযোগে শুনানিতে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন, পর্ষদ কর্তারা। সতর্ক করা হয়েছে, ভবিষ্যতে এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শহরাঞ্চলে অনুষ্ঠান বাড়িগুলিতে উচ্চস্বরে সাউন্ডবক্স বাজানো ও শব্দবাজি ফাটানোর ফলে শুধু যে শব্দদূষণ হচ্ছে তা নয়, এলাকাবাসী চরম অসুবিধায় পড়ছেন। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকেরা জানান, আজকাল প্রায় প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে, এই সব অনুষ্ঠান বাড়িগুলিতে বিশাল আকারের সাউন্ডবক্স বাজানো হচ্ছে। চলতি কথায় এই বক্সগুলিকে ডাকা হচ্ছে ‘ডি জে’ নামে। শহরের বাসিন্দাদের দাবি, প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে এই ‘ডি জে’-র আওয়াজ স্পষ্ট শোনা যায়। স্বাভাবিক ভাবেই, অনুষ্ঠান বাড়ি লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের অবস্থা করুণ হয়। এস বি গড়াই রোড এলাকার বাসিন্দা জয়ন্ত সান্যালের কথায়, “রাতের দিকে বেশি জোরে বাজানো হয় এই সব বক্স। তখন ঘরের দরজা-জানালা সব বন্ধ করেও নিস্তার পাই না।” একই অভিযোগ আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিল দাসের। তিনি জানান, শহরের অত্যন্ত জনবহুল এলাকায় এই হাসপাতাল। আশপাশে নানা রকমের উৎসব-অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। সেই উপলক্ষে তারস্বরে মাঝরাত পর্যন্ত ‘ডি জে’ বাজানো হয়। লাগাম ছাড়া শব্দবাজিও ফাটানো হয়। রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। নিখিলবাবু বলেন, “আমরা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে বিষয়টি বলেছি। এলাকার মানুষের কাছেও আবেদন করেছি এ সব বন্ধ করতে। কিন্তু কেউ কথা কানে তুলছেন না।”

কয়েকটি অনুষ্ঠান বাড়ির মালিকেরা দাবি করেন, তাঁরা বারণ করলেও যাঁরা বাড়ি ভাড়া নেন তাঁরা কোনও নিষেধ শুনতে চান না। শহরাঞ্চলে প্রান্তে নিত্য এই ধরনের ঘটনার খবর যে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অজানা নয়, আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বললেই তা জানা যায়। পর্ষদের আসানসোল শাখার আধিকারিক অঞ্জন ফৌজদার জানান, শহরের একটি অভিজাত ক্লাবের বিরুদ্ধে চড়া সুরে বক্স বাজানো ও শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ প্রতি দিনই মিলছে। ক্লাবের কর্মকর্তাদের ডেকে এ সব বন্ধ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পর্ষদের রাজ্যের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তিবাবু বলেন, “এটি একটি মারাত্মক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সব বন্ধ করতে আমরা কঠোর ভাবে অনুষ্ঠান বাড়িগুলির উপরে নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তিনি জানান, ২০০৯-এর শব্দবিধি অনুযায়ী, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পরামর্শে মহকুমা প্রশাসন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে। সে ক্ষেত্রে যে এলাকায় এই বেনিয়ম ঘটছে সেখানকার বাসিন্দাদের থেকে পর্যদের কাছে অভিযোগ আসতে হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দূষণের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের। তা হলে তাঁরাই বা এই অনিয়ম দেখে নিজেরা ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? এ বিষয়ে বিনয়কান্তিবাবু বলেন, “আমরাও নিজে থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে সব ক্ষেত্রে আমাদের অফিসারেরা খবর পান না।” তিনি জানান, বেশ কিছু অনুষ্ঠান বাড়ির মালিককে শুনানিতে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। তাঁর দাবি, এই অভিযান চালানোর পাশাপাশি জন-সচেতনতা বাড়ানোর কাজও করছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE